আমার পাশের টেবিলে কুকুরের ছবি সাজানো রয়েছে। বিশুদ্ধ কুকুরের ছবি।
কালেম ভাই আসতে-যেতে প্রায় বলেন, দেখেছেন ভাবি, কুত্তার ছবি অফিসে, ছিঃ। রোজই কথাটা বলা চাই, সেই সঙ্গে নাক কুচকানো তো রয়েছেই— কুত্তাওয়ালাকে দেখলে... বাকিটুকু আর শেষ করেন না কালেম ভাই কখনোই। কুত্তাওয়ালাকে দেখলে উনার যে কী কী করতে ইচ্ছা করে, জানা হয়নি আমারও। তবে বলে যাচ্ছেন তিনি একই কথা প্রায়ই। ভাগ্যিস যাকে বলা হচ্ছে সে বাংলা বোঝে না, আর এই সুযোগে তার চারপাশে ঘোরাফেরায় কালেম ভাই নিজস্ব ভাব-ভঙ্গিতে প্রায়ই আওড়ান কুত্তাওয়ালাকে দেখলে...।
তার কুত্তাওয়ালা শব্দটি আমার কানে খুবই লাগে। তাই আমি করে দিয়েছি কুকুরওয়ালা সাহেব। কালেম ভাইকে একদিন বলতেই বললেন, জি কুকুরওয়ালা সাদা সাহেব। অবশ্যই যথেষ্ট শ্লেষ আছে এ বলায়। জানা হয়নি কেন এই বিদ্বেষ। প্রয়োজনীয়ও নয় অন্যের ব্যাপারে নাক গলানোর এবং তিনি যথারীতি কুকুরওয়ালাতেই রয়ে গেলেন। মাঝে মধ্যে অবশ্য বলেন কুত্তা মিঞা। ইদানীং শুরু করেছেন কু কু মিঞা।
একদিন তো সরাসরি সম্বোধনই করলেন মি. কু কু বলে। জেরি না বুঝেই হাসলো। বললো, তুমি কি আদর করে আমাকে কু কু বলছো? কালেম ভাই শুধু অদ্ভুত এক মুখভঙ্গি করে বললেন, হু হু। বেচারা জেরি না বুঝে শুধু চেয়ে থাকে অবাক হয়ে।
আমিও এক সময় অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, কুত্তাওয়ালা শব্দটাকে আমার গালি জাতীয় কিছু মনে হচ্ছে না আর। সুদূর আমেরিকায় বসে এ রকম একটা জীবনঘেঁষা দেশি শব্দ আমাকে বেশ পুলকিতেই করছে। যেন ফল্গুধারা। মাছওয়ালা, তরকারিওয়ালা, ফেরিওয়ালা, দাড়িওয়ালা শব্দগুলো তো প্রায় মুছেই যাচ্ছে জীবন থেকে। আমার শুমশুমিকে যে কোনো একটা ওয়ালার কথা বললেই সে অবাক হয়ে বলে Whats that??
আমি বিষণ্ন হয়ে ভাবি, Whats that?? আমার মেয়ে তার মায়ের ভাষাই পুরোপুরি বুঝতে পারে না। বড়ই দুঃখজনক।
কুত্তাওয়ালা আজ এখনো এসে পৌঁছেনি। আমি ঠিক আটটার পাঁচ-দশ মিনিট আগেই অফিসে পৌঁছে যাই। সে পারলে পাঁচ-দশ মিনিট পরে ভুড়ি দুলিয়ে হেলেদুলে আসে। ধবধবে ফর্সা। অনেক রঙের আমেরিকান আছে, সে হচ্ছে White American। তার বউটিও আমাদের সঙ্গেই কাজ করে। দেখতে সে-ও একই রকম। তবে কেন যেন মনে হয় বউটির বয়স বেশি। কালেম ভাইয়ের হাত থেকে বউটিরও কি নিস্তার আছে! একদিন হাসতে হাসতে বললেন, জেরি থেকে বউটির বয়স বেশি, কি বলেন ভাবি?
ভাবি আর কী বলবে। যদিও ভাবিরও তা-ই ধারণা, তারপরও ততোটা তারল্য পোষাচ্ছে না, তাই চুপ থাকি। আমার নীরবতাকে কালেম ভাই ধরে নেন সম্মতির লক্ষণ হিসেবে এবং তার হিসাবে কী কী যোগ-বিয়োগ রয়েছে এ ক্ষেত্রে তা বলতে ব্যাকুল হন। আমি হিসাব কষে দেখেছি, কালেম ভাই হচ্ছেন একজন বেকুব ধরনের মজার মানুষ। এ ধরনের লোক সচরাচর ভালো হয়। তিনিও তাই। মাঝে মধ্যে অদ্ভুত একটি বাংলা শব্দ মনে পড়ে। লম্বা বেকুব, যার যথার্থ উদাহরণই হচ্ছেন মোহাম্মদ কালেম হোসেন। লম্বা লম্বা পা ফেলে অফিসময় ঘুরে বেড়ান এবং পদে পদে বোকামি করেন। আমার সামনের কিউবে বসার কারণে সারাটাক্ষণই আমার তাকে দেখতে হয় এবং হাসতে হয়— গোপনে বা প্রকাশ্যে।
জেরি আসছে, যথারীতি হেলেদুলে। পেটটা বের হয়ে আছে। দুহাতে খানাও আছে, খাদ্য। আজকে কিনেছে বোধহয় জ্যাক ইন দি বক্স থেকে। দূর থেকে খাবারের প্যাকেটটা দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। পেটুক রাজা, খেতে বড় ভালোবাসে। একেক দিন একেকটা ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢু মারে খাদ্যের সন্ধানে। বুভুক্ষু দেশের প্রাণী যেন।
চেয়ারটাতে বসতেই ধুপ করে চেয়ারটা নেমে গেল দুই ধাপ। চেয়ারগুলোতে ভাগ্যিস নব আছে। ঘুরিয়ে দিলে উঠবে আবার। এতো ঠাণ্ডাতেও ঘামছে। চর্বির মাহাত্ম্য। এসি চলছে পুরো অফিসে পুরোদমে, তারপরও শরীর ভেজা ঘামে। এসেই ফ্যান চালিয়ে দিল। শুধু এসিতে কাজ হচ্ছে না তার এবং নিত্যদিনের মতো হি হি করে হেসে আশপাশের জনগণকে মাতাতে শুরু করে দিল। কালেম ভাই আজ কোনো কারণে আসেননি। থাকলে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার চোখ কুঁচকে জেরিকে দেখতেন। তার অনুভূতি কিছুটা বোধহয় আমাতেও সংক্রমিত হয়েছে। আমিও কয়বার চেয়ে দেখলাম। অফিসে এতো হা হা হি হি করার কি আছে! অফিস হচ্ছে কাজের জায়গা। কাজ না করে এতো হা হা হি হি কিসের? জেরি অবশ্য বহু আগেই কাজের ব্যাপারে আমাকে সিরিয়াস হতে নিষেধ করে দিয়েছে।
কী রকম কথা! তোমাদের সাদাদের চিন্তা কি? আমাদের চিন্তা করতে হয়। চিন্তা করি বলেই হয়তো বা আমরা ভালো কাজ করি। এ দেশে এসেছি মাত্র ক’টা বছর হলো। সবকিছুই যেন কেচেগণ্ডুস (পুনরায় শুরু করা) বাগধারাটা মনে করিয়ে দিচ্ছে টিকে থাকার এই সংগ্রামে ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন দেশে, ভিন্ন সমাজে। জেরিটা এই মাত্র হেসে উঠে এটা আবার কী খবর দিল জনগণকে— তার মাত্র ১৬ বছরের মেয়ে প্রেগনেন্ট!
এটা একটা হাসার ব্যাপার হলো! কেমন বাপরে বাবা! জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার মেয়েকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়েও দিয়ে দিয়েছো! বললো, নোপস।
বুঝলাম কুমারী মাতা, যা খুব সহজ বিষয় এ দেশে। আমি ফাপরে পড়েছি বুঝতে পেরে সে নিজের থেকেই বললো, এ মাসেই ব্যাপারটা ফিক্সড হবে। জেরিকে অবশ্যই আমার অদ্ভুত কিমভুত কিমাকার কিছু মনে হচ্ছে। আমাদের দেশের বাবারাই বা একে কি ভাববে? উজবুক!
সে আরো একটু যোগ করলো, আমার ছোট মেয়েটির বয়স ১১ বছর। তাকে অবশ্য নিষেধ করেছি এতো তাড়াতাড়ি আমাকে গ্র্যান্ডফাদার বানাতে। বলে হাসতে লাগলো। জেরির বউ এসে আরো কিছু খাবার দিয়ে গেল। কালেম ভাই থাকলে সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় বলতেন, খাওয়াও খাওয়াও, খাইয়ে বাস্ট করে দাও।
ভদ্রলোক বোঝার চেষ্টা করেন না যে তার অঙ্গভঙ্গিতেই এদের যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে। মুখের ভাষা না বুঝলেও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ তো সবাই বোঝে। যাহোক, লম্বা বেকুব নাম তো আর এমনি তিনি যোগাড় করেননি!
জেরি খাচ্ছে আর পা দোলাচ্ছে। সুখী প্রাণী। হঠাৎ মুখ ফসকে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম, তোমার কি মনে হয় না যে তোমার মেয়ের জন্য মা হওয়াটা খুব আর্লি হয়ে গেছে?
মনে মনে কালেম ভাইকে বকাও দিলাম। তাকে প্রতিদিন সকাল-বিকাল চোখের সামনে দেখে দেখে এই বেকুবিটা করলাম। অন্যের ব্যাপারে নাক গলানো খুবই বাহুল্য বিষয় এ দেশে। জেরির মধ্যে অবশ্য বিশেষ কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। সে নির্বিকারভাবে বললো, সে এটা তার বিছানাতে তৈরি করেছে। আমি কি করতে পারি।
তওবা, বলে কি ব্যাটা! আজব পাবলিক। বাবা এ রকম হলে মেয়ে আর ভালো হবে কেমন করে!
আমাকে কথাটা বলেই সে ভেজা টিসু দিয়ে খুবই যত্ন সহকারে কুকুরের ছবিগুলো পরিষ্কার করতে লাগলো।
হঠাৎ আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার মেয়ের বয়ফ্রেন্ড কি তোমাদের সঙ্গেই থাকে?
সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো, নেভার, আমি তাকে হাতের কাছে পেলে জ্যান্ত কবর দেবো। কারণটা আমি আর জানতে চাইলাম না। তবে সে নিজের থেকেই বললো, সে আমার মেয়েটাকে প্রেগনান্ট করেছে। এটাই কি যথেষ্ট নয় তাকে হত্যা করার জন্য? তার রাগ দেখলাম। মেয়ের জন্য দরদও অনুভব করলাম। বললাম, তোমার মেয়ে যদি তার বয়ফ্রেন্ডের কাছে চলে যেতে চায়!
No way, সে নিরুদ্দেশ। কোনো খবর রাখে না তাদের। You know কি রকম ছোটলোক সে?
চোখ ছোট করে ভ্রূ কুঁচকে আমার দিকে চেয়ে থাকলো। আচ্ছা পাগল তো! আমার দিকে তাকিয়ে কী হবে। আমি কি বলেছি এই ঘটনা ঘটাতে। এই মেয়েকে কি শিখিয়েছিস! দিনরাত বসে বসে গিললেই হবে! ছাগল ব্যাটা।
বাচ্চাটা তাহলে কার কাছে থাকবে? খুবই ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করলাম।
আমিও আরেক পাগল। আমারও জানার আগ্রহ যেন অদম্য। জেরি ঝটপট বললো, আমাদের সঙ্গে। সে তো আমাদেরই অংশ। যদিও আমার ওয়াইফ অ্যাবোরশন করাতে চেয়েছিল, আমি না করেছি। কেন’র উত্তরও সে নিজেই দিল— আমার মেয়েটা ছোট, ব্যাপারটা রিস্কি তার জন্য। মেয়ে আবার বাপের মতন, হ্যাভি মোটা, ওবিসিটি সমস্যা আছে। ভবিষ্যতে বাচ্চা হবে কি না সন্দেহ। হয়েছে যখন নিয়ে রাখাই ভালো। কী বলো?
ওহ্, বললাম গুড, খুবই সুদূরপ্রসারী চিন্তা।
সে-ও মাথা দোলাতে দোলাতে বললো, মেয়ের বাবা হলে অনেক চিন্তা-ভাবনা করতে হয়।
আমার ধারণা ছিল, আমরা এশিয়ান বাবা-মায়েরাই অতিকাতর থাকি মেয়ের ভাবনায়। কিন্তু এ তো দেখছি আমাদেরই অনুসারী। বলা হয় না মনের কথা। চেয়ে দেখছি জেরিকে। বিশাল দেহের মধ্যে অবস্থাকারী একজন মানুষের মনোজগতের আকার-আকৃতি খোঁজার চেষ্টা করছি।
জেরি চেয়ে আছে কুকুর তিনটির ছবির দিকে। তাকিয়েই আছে। যেন ভাববিনিময় করছে। যে কোনো সময় সে-ও ঘেউ ঘেউ করে উঠতে পারে। সমগোত্রীয় দেখাচ্ছে। উফ রে খোদা। চোখ সরিয়ে নিলাম।
মিটিং শেষ করে ফিরে আসতে দেখি জেরি কোথায় যেন ছুটছে। বাচ্চাটা পৃথিবীতে কি এসেই গেল নাকি। কোথায় গেল জেরি?
জেরির পরের জনকে জিজ্ঞাসা করলাম। আমার কণ্ঠে উৎকণ্ঠা দেখেই যেন উইল বেশ অবাক হয়ে বললো, খেতে, লাঞ্চ। সিট্, খাওয়ার জন্য এতো ছুটতে হবে! এ জন্যই তো দুই হাত বের হওয়া পেট। আর আমি ভয়ে মরি। আমি আমার কাজে মন দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই হি হি হাসির শব্দে পাশ ফিরলাম। জেরি হচ্ছে আবারো আলোচ্য বিষয়। লাঞ্চ শেষে কখন যেন ইতোমধ্যেই সে ফিরেও এসেছে। চারদিক থেকে সবাই তাকে প্রচুর প্রশ্ন করছে। বয়স নিয়ে ঝামেলা পাকিয়েছে তারা। কেউ কারো বয়স বোধহয় ঠিকমতো অনুমান করতে পারছে না।
জেরির সামনের ছেলেটা বলছে, তার বয়স ২৩ বছর। অন্যরা বলছে ২৭-২৮। সে হেসে হেসে বলছে, বয়সের চেয়ে তাকে বড় দেখায়। সে হয়েছে তার বাবার মতো। দাড়ি রেখেছে সে, এ কারণেও হতে পারে। আমেরিকানরা সচরাচর দাড়ি-গোঁফ রাখে না। সে দুটিই রেখেছে। তার পাশের মেয়েটি বয়স বলছে ২৫, দেখাচ্ছেও তাই।
গোলটা পাকিয়েছে জেরি।
তাকে নিয়েই সবাই বিপাকে পড়েছে। কতো হবে বয়স? দাড়িওয়ালা বলছে ৩৬-৩৭, ওর পাশের আরেকজন বলছে ৪০, আমারও তাই ধারণা— ৪০-৪২, পারলে ৪৫-৪৬ হবে।
আমার দিকে চেয়ে আছে সবাই। আমাকেও কিছু বলতে হবে। ওর মেয়ের বয়স ১৬, অতএব ৪০ তো হবেই। তবুও মানুষ একটু কম বয়স শুনতে ভালোবাসে, তাই বললাম ৩৮/৩৯, যা কখনোই সম্ভব নয়।
হি হি করে হাসছে কুত্তাওয়ালা।
একটা কুকুর কুকুর ভাব নাকি ইতোমধ্যেই এসে গেছে মানুষটার মধ্যে, কথাটা প্রায়ই কামেল ভাই বলেন। এই মুহূর্তে হঠাৎ আমারও কেন যেন তাই মনে হতে লাগলো। নাকি আমার মধ্যেও একটা বেকুব বেকুব ভাব চলে এসেছে!
আমাকে আরো বেকুব বানিয়ে জেরি বললো, কারোটাই হয়নি। আচ্ছা আমিই বলে দিচ্ছি, এই জুলাইতে ৩০ হবে।
বোমা ফুটলো যেন চারদিকে। বুম বুম বুম। What! চারদিক থেকে একসঙ্গেই শব্দটা এলো।
আমি বললাম, তোমার মেয়ের বয়স বলছো ১৬, তাহলে? সে-ও মাথা দুলিয়ে বললো, Yes ১৬। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, তাহলে তুই ব্যাটা বিয়ে করেছিস কবে?
মুখে বললাম, তোমাকে দেখে অবশ্য সে রকমই মনে হয়, কিন্তু তুমি মেয়ের বয়স ১৬ বলায় ভাবলাম ৩৮-৩৯ই বলি। বলে নিজে হি হি করে হাসলাম।
জেরিও হাসছে হো হো করে। হাসতে নেই কোনো মানা। তুমি বিয়ে করেছো কবে, জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম, না জিজ্ঞাসা করে থাকতে পারছিলাম না। তাকে দেখে কোনো মানুষই অবশ্য বলবে না তার বয়স ৩০। সে ড্রাইভিং লাইসেন্স বের করে বয়স দেখালো। বললো, বিয়ে করেছে ছয় বছর আগে।
আমি অবাক হয়ে চেয়ে থাকি। মনে মনে যোগ-বিয়োগ গুণ-ভাগ করছি। উত্তর মিলছে না। কোনো প্রশ্ন করছি না দেখে জেরি নিজেই ভালো মানুষের মতো সমাধানটা দিয়ে দিল।
ওরা আমার স্টেপ ডটার এখন আমারই মেয়ে। আমিই ওদের বাবা।
খুবই সিম্পল ইকুয়েশন। কিন্তু আমার মাথায় ঢুকছিল না। তাকিয়ে আছি জেরির দিকে। জেরিকেই দেখছি। বেশ পিতা পিতা ভাব নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে। গর্বিত চাহনি। হঠাৎ করেই ওকে আমার আর কুত্তাওয়ালা মনে হচ্ছে না। পিতাওয়ালা মনে হতে লাগলো। ৩০ বছরের এক যুবক অবিশ্বাস্যভাবে পিতা হয়ে গেছে। শুধু রূপান্তরিতই হয়নি, পিতৃত্ববোধে সে খুব গর্বিতও। কিন্তু বাংলা ভাষায় পিতাওয়ালা বলে কোনো শব্দ নেই। আমার শুমি হলে মেয়েওয়ালা বলেই চালিয়ে দিতে পারতো। আমার মেয়ের শব্দভাণ্ডার বেশ ফাকা। আমি পারছি না। তারপরও ওই রকম একটা শব্দ মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ করেই যেন একজন পিতা বেরিয়ে এলো ভুড়িওয়ালার ভুড়ি ফুঁড়ে। চিরচেনা সৎপিতার নেতিবাচকতার অনুপস্থিতি আমাকে অবশ্যই বিভোর করলো।
গভীর মমতা নিয়ে তাকালাম জেরির দিকে। সে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কী?
কি বলবো না বলবো ভাবতে ভাবতেই বলে ফেললাম, আমি তোমাদের বুঝতে পারি না।
মেয়েওয়ালা হাসলো এবার ঘর ফাটিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৪