ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

বাফুফে ও ক্লাবের উদাসীনতায় নির্বাসনে ফুটবল

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
বাফুফে ও ক্লাবের উদাসীনতায় নির্বাসনে ফুটবল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: একজন যাদুকর তখনই স্বার্থক হন, যখন তার যাদু দেখতে দর্শকরা সমবেত হন। আর যখন তার যাদুতে মুগ্ধ হয়ে আগন্তুক দর্শকরা হাততালি দেন, উল্লাসে মেতে উঠেন তখনই তার পূর্ণতা আসে।

তাতে করে দ্বিগুণ উৎসাহে তিনি যাদু দেখাতে তৎপর থাকেন।

কিন্তু যদি এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় তাহলে কি হয়? কোনো দর্শক নেই, হাততালি নেই, নেই কোনো হর্ষধ্বণি-তাহলে? সন্দেহাতীত ভাবেই সেই যাদুকরের যাদু ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। স্বপ্ন ভঙ্গের সীমাহীন কষ্ট নিয়ে তাকে যাদুমঞ্চ থেকে ফিরে যেতে হবে। কেননা সব সময়ই তার মনে হতে থাকবে ‘আমার যাদু দেখার মতো কেউই নেই, কাকে দেখাব, আর দেখিয়ে লাভই বা কি?’

বাংলাদেশের ফুটবলের অবস্থা আজ অনেকটা সেরকমই। দিনের দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এদেশের ফুটবলাররা মাঠে ফুটবল যাদু দেখিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু তা দেখার মতো কেউ নেই! দুর্দান্ত এক একটি গোল করে যাচ্ছেন যা দেখে দশটি হাতও একসঙ্গে হাততালি দিয়ে উঠছে না! উত্তাপশূন্য থাকছে গ্যালারি।

সঙ্গত কারণেই তারাও হয়তো তাদের খেলা খেলে সন্তুষ্ট নন, বিরক্ত নিজ পেশার উপরই। ভাল খেলার মানসিকতা থেকে সরে আসছেন। যার প্রভাব ঘরোয়া ফুটবল থেকে পড়ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। অনন্য এই বিষয়টিকেই বাংলাদেশের ফুটবলের আজকের এমন করুণ হালের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ফুটবলের সাবেক সহকারী কোচ এবং আরামবাগ ক্লাবের প্রধান কোচ সাইফুল বারী টিটু।

‘এমন মানসিকতার জন্যই সম্প্রতি মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ এবং ১০ অক্টোবর থিম্পুতে এশিয়ান কাপ প্রাক বাছাইয়ে ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরেই আজ তিন বছরের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আমাদের ফুটবল নির্বাসনে। অথচ এই ভুটানের বিপক্ষে আমরা গেল ১১ ম্যাচের একটিতেও হারিনি। এমনকি গেল সাফেও দলটিকে আমরা ৩-০ গোলে হারিয়েছি। ’ জানান সাইফুল বারী টিটু।

পাশাপাশি ফুটবলারদের স্বপ্নহীনতাকেও ফুটবলের নির্বাসনের জন্য দায়ী করলেন অভিজ্ঞ এই কোচ, ‘এদেশের ক্রিকেট আজ এই পর্যায়ে এসেছে কারণ ওদের স্বপ্ন অনেক বড়। ক্রিকেট ওদের রক্তে মিশে গেছে। ওরা স্বপ্ন দেখে কীভাবে আমি সেঞ্চুরি করবো, কিভাবে হ্যাটট্রিক করবো আর কীভাবেই বা নতুন একটি রেকর্ড করবো। বিশ্বাস করেন আমাদের ফুটবলারদের ভেতরে এমন স্বপ্ন একেবারেই নেই। ’

আর ফুটবলারদের এমন মনোভাব ও স্বপ্নহীনতার জন্য টিটু কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও ক্লাবগুলোর উদাসীনতাকে। কেননা যারা স্বপ্ন দেখাবেন তাদের সেই অভিভাবক ফেডারেশন ও ক্লাবগুলো প্রতি বারই এই কাজে ব্যর্থ হচ্ছেন।  

এক্ষেত্রে টিটু প্রথমেই বললেন ফুটবল ফেডারেশনের কথা, ‘ফুটবলের উন্নয়নে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আজ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদে কোনো পরিকল্পনাই গ্রহন করতে পারেনি। পরিকল্পনা গ্রহন করলেও তা বাস্তবায়নের কোনো লক্ষন আজও দেখা যায়নি। আমাদের ফুটবলের অধিকাংশ ম্যাচই দেখা যায় একটি মাঠেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অথচ ফুটবল ম্যাচ হতে হয় হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে। ’

‘কথায় কথায় কোচ বদল এটা কোনো দেশের কোনো খেলার জন্যই সুফল বয়ে আনতে পারে না। এক এক কোচের খেলার ধরণ এক এক রকম। রাতারাতি তাদের বদলানো হলে পরিবর্তিত খেলার ধরণ আয়ত্ত্ব করতেও খেলোয়াড়ারদের সময় লেগে যায়। যা দিন শেষে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের ফুটবলের কোনো কাঠামো নেই। কোনো একাডেমি নেই। বয়সভিত্তক কোনো দলই নেই, ফলে পাইপলাইনে কোনো প্লেয়ারও নেই। ফলে গুণগত মানসম্পন্ন নতুন কোনো প্লেয়ার বেরিয়ে আসছে না। ’ যোগ করেন টিটু।  

আর ক্লাবগুলোর উদাসীনতার কথা বলতে গিয়ে টিটু জানান, ‘দেখা যায় মৌসুম শুরু হলেই ক্লাব মালিকরা প্লেয়ারদের কেনা নিয়ে টানাটানি শুরু করে। অথচ এই ক্লাবগুলোরই নিজস্ব একাডেমিসহ অনূর্ধ্ব-১৬, ১৮ ও ২৩ দল থাকা উচিৎ ছিল। যা আজ আমাদের নেই। ’

বাফুফে কিংবা ক্লাবই কেন? জনশ্রুতি আছে প্লেয়াররা ক্লাবে থাকাকালীন রাতজাগা, মদ্যপানসহ আরও নানাবিধ নিষিদ্ধ কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন, যা ম্যাচে বাজে ফলাফল এনে দেয়। বিষয়টির সঙ্গে টিটু একমত পোষণ করলেও উদ্ভুত এই সমস্যা সমাধানে কোচের পাশাপাশি ক্লাব কর্মকর্তাদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানালেন, ‘কোচের কাজ অনুশীলন ও মাঠের পারফরমেন্স দেখা। ক্লাবে ফিরে প্লেয়াররা কী করছেন, শৃঙ্খলার ভেতরে আছেন কী না এসব কিন্তু কর্মকর্তাদের খবর রাখা উচিৎ। তাহলে এ জাতীয় সমস্যাগুলো হবে না। ’

বাংলাদেশের ফুটবল আজ গভীর সংকটে। দেশটির ফুটবলের ইতিহাসে এমন সংকট কখনও তৈরি হয়নি। সাইফুল বারী টিটু যে বিষয়গুলোকে লাল-সবুজের ফুটবলের নির্বাসনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেন বাফুফেসহ ফুটবলের শুভাকাঙ্খীরা সমস্যাগুলো সমাধানের পথ দ্রুত বের করে এদেশের ফুটবলকে আবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিরিয়ে নেবেন আপাতত সেটুকুই প্রত্যাশা থাকলো।    

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ১৭ অক্টোবর ২০১৬
এইচএল/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।