আর্জেন্টাইন সুপারস্টার মেসির মতো স্বচ্ছলতা তার মুখাবয়বে খেলে যায় না। অথচ সে খেলেন মেসির মতোই।
যুব গেমসের চলমান আসরের ৩ ম্যাচে করেছেন ১৩ গোল! প্রথম ম্যাচে ৪টি, দ্বিতীয় ম্যাচে ৮টি। আর ফাইনালে ১ টি। যা যুব গেমসে দেশ সেরার শিরোপা এনে দিয়েছে ঢাকাকে। আর তাকে দিয়েছে টুর্নামেন্ট সেরার তকমা।
প্রশ্ন আসতে পারে, কক্সবাজারের মেয়ে হয়ে ঢাকায় কী করে খেললো রিফা? না দুর্নীতি করে আসেননি। এসেছে প্রতিভা দিয়েই। যুব গেমসের চূড়ান্ত আসরকে সামনে রেখে দেশ ব্যাপি যখন বাছাই চলছিলো তখন চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে তার ডাক পড়েনি। বিকেএসপির ভাল ছাত্রী। বিষয়টি ঢাকার কোচ গোলাম রায়হান বাপন ভাল করেই জানতেন। তাই নিজ দলে ভেড়াতে কালবিলম্ব করলেন না।
গুরুর আস্থার প্রতিদান দিতে কার্পণ্য করলো না রিফা। বরং দিলো দু’হাত ভরে। একটি দুটি নয়, ১৩টি গোল! তাও মাত্র ৩ ম্যাচে। এ তো বিস্ময়ের মতো কথা।
আশ্চর্যের শেষ এখানেই নয়। মেয়ে হয়েও ছোট বেলার যখন রিফা পাড়ায় খেলত তার সতীর্থ এবং প্রতিপক্ষ দুই ছিল বিপরীত লিঙ্গের। অর্থাৎ ছেলেরা। বাসার পাশে ছিল খেলার মাঠ। সেখানে ছেলেদের সাথে দিব্যি খেলেছেন। কথাটি বলতে এতটুকু লজ্জা পেলে না বা দ্বিধা বোধ করলো না এই ম্যাজিক কিশোরী। বরং ছিল বেশ সাবলীল।
রিফা বলে, ‘আমি আগে ছেলেদের সাথে খেলতাম। বাসার পাশে মাঠ আছে। ছেলেদের সাথে খেলতে খেলতে বিকেএসপিতে ভর্তি হলাম। বিকেএসপিতে ভর্তি হবার পর আমাকে যুব গেমস খেলতে ডেকেছে। প্রথম ম্যাচে ৪ গোল করলাম, দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ গোল, ফাইনাল ম্যাচে ১ গোল করলাম। ’
ভাবা যায়? পুরুষ শাষিত এই সমাজে দারিদ্র্যের কারণে জর্জরিত একটি মেয়ে ছেলেদের সাথে খেলছে! সেখানে কেউ বাধার দেয়াল সৃষ্টি করছে না! উল্টো পাচ্ছে উৎসাহ। ‘আমাকে ছেলেদের সাথে খেলতে কেউ নিষেধ করেনি। আমাকে বাবা মা খেলতে বলেছে। ’
সেই উৎসাহ আর উদ্দীপনাই মূলত রিফাকে মানসিকভাবে নিয়ে গেছে অধরা এক উচ্চতায়। সেখান থেকে তার স্বপ্নটাও হয়েছে বিস্তীর্ণ। তবে তা শুধু নিজেকে ঘিরেই নয়, প্রিয় দেশকে ঘিরেও। ‘আমি জাতীয় দলে খেলতে চাই আর বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের সুনাম অর্জন করতে চাই। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, ১৪ মার্চ, ২০১৮
এইচএল/এমএমএস