ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

নাটকীয় এল ক্লাসিকো ড্রয়ে সমাপ্তি 

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৮
নাটকীয় এল ক্লাসিকো ড্রয়ে সমাপ্তি  নাটকীয় এল ক্লাসিকো ড্রয়ে সমাপ্তি 

এত নাটক এক ম্যাচেই? কী না হলো এই ম্যাচে? মৌসুমের শেষ এল ক্লাসিকোতে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উত্তেজনা নিয়ে হাজির হলো ক্যাম্প ন্যুয়ে।

সার্জিও রবার্তোর লাল কার্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মেসির হলুদ কার্ড পাওয়া, গোল মিসের মহোৎসব। বলে শেষ করা যাবে না।

 

দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্লাব ম্যাচে আজ রাতে (৭ মে) মুখোমুখি হয়েছিলো স্প্যানিশ ক্লাব ফুটবলের দুই জায়ান্ট বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। একে এল ক্লাসিকো, তাও আবার বার্সা কিংবদন্তি আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার শেষ এল ক্লাসিকো ম্যাচ। ক্যাম্প ন্যু এমনিতেই আবেগে থরথর, তাতে শুরু থেকেই মাঠে কাঙ্ক্ষিত উত্তেজনা। ম্যাচের শুরুতে নাটকীয় সিদ্ধান্ত। রিয়াল একাদশে বাতিলের খাতায় যেতে বসা গ্যারেথ বেল মূল একাদশে।  

বিদায়ী এল ক্লাসিকো বলেই হয়তো বার্সেলোনা একাদশে অধিনায়ক ইনিয়েস্তার উপস্থিতি। তবে ম্যাচের প্রথম আলো কেড়ে নেন সুয়ারেজ। ম্যাচের মাত্র সাড়ে নয় মিনিটেই রবার্তোর দুর্দান্ত পাস থেকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোলমুখ উন্মুক্ত করেন উরুগুয়ের তারকা ফুটবলার সুয়ারেজ। তবে খেলার আসল চেহারা ফুটে ওঠে এরপরই। শুরুটা করেন রিয়ালের ডিফেন্ডার নাচো।  

সুয়ারেজকে কড়া ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন নাচো। এর কিছুক্ষণ পরেই গোল করার সুযোগ হাতছাডা করেন সুয়ারেজ।  তবে রিয়াল খুব দ্রুতই ফিরে আসে। এবার গোল করেন রোনালদো। বেনজেমার নিখুঁত পাসে হালকা পা লাগিয়ে গোলের খাতা খোলেন পর্তুগিজ তারকা। লিগে এটি তার ২৫তম গোল। শেষ ৯ ম্যাচে ১৭তম গোল। গোল করে কোনো উত্তেজনা বা উল্লাস প্রকাশ থেকে দূরে থাকেন সি আর সেভেন। রিয়ালও উদযাপন করেনি।  

এরপরের গল্প শুধু গোল মিসের। বার্সার আলবা, মেসি আর রিয়ালের এক রোনালদোরই কমপক্ষে তিন গোল মিস। সেই সাথে হলুদ কার্ডের ছড়াছড়ি। রিয়ালের ভারনেকে দিয়ে শুরু এরপর সুয়ারেজ আর রিয়াল অধিনায়ক রামোস ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন। হাতাহাতিও হয় সামান্য। রেফারি দুজনকেই হলুদ কার্ড দেখান। এর প্রতিশোধ নিতেই কিনা কিছুক্ষণ পর রামোসকে কড়া ফাউল করে বসেন ঠাণ্ডা মাথার মানুষ মেসি। ফল এবার মেসির ভাগ্যে হলুদ কার্ড। চেহারা দেখে সবাই বুঝে গেছে প্রিয় বন্ধু সুয়ারেজকে ফাউল করার প্রতিশোধ নিয়েছেন মেসি।  

রিয়ালের বেলকে দলে নেওয়ার উদ্দেশ্য আসলে ডিফেন্স সামলানোর জন্য তাও সবার নজর কেড়েছে। তবে নাটক তখনো বাকি। মার্সেলোকে বিপজ্জনক এক ট্যাকল করেন রবার্তো। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন খেলার এক্সট্রা সময়ে। দশজনের দলে পরিণত হয় বার্সেলোনা। ১-১ গোলে শেষ হয় প্রথমার্ধ।  

বিরতির পর কিছুটা ডিফেন্সিভ ভংগিতে খেলতে থাকেন মেসিরা। প্রায় স্তব্ধ হতে বসা স্টেডিয়ামে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনেন মেসি। সুয়ারেজের দারুণ পাস থেকে পা পায়ের অসাধারণ শটে নাভাসকে বোকা বানিয়ে বল জড়িয়ে দেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর। জেগে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম। লিগে এটি মেসির ৩৩তম গোল। এর মাঝে হলুদ কার্ড দেখেন পাউলিনহো। ৫৬ মিনিটে মাঠ ছাড়েন বিদায়ী এল ক্লাসিকো কিংবদন্তি ইনিয়েস্তা। রোনালদোও মাঠ ছাড়েন এর মাঝেই। ইনিয়েস্তার হাত থেকে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড হাতে নিয়ে মেসি আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। গোলের সুযোগ পেয়েও যান। কিন্তু তার শট ঠেকিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক নাভাস।  

এরপর পুরো ম্যাচে আড়ালে থাকা বেল অসাধারণ গোল করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন।  এসেনসিওর ডিভেন্স চেরা পাস থেকে বা পায়ের শক্তিশালী শটে স্টেগানকে পরাস্ত করেন বেল। ৭৬ মিনিটে বার্সেলোনার ডি বক্সে নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত হন মার্সেলো। মেসি পরপর দুই মিস করে হতাশায় পোড়ান ক্যাম্প ন্যুকে। শেষদিকে পাল্টা পাল্টি আক্রমণ শানিয়েও অসফল দুই দল। তুমুল উত্তেজনার এক ম্যাচ শেষ হলো ড্র দিয়ে। তবে স্কোর সবটা বলতে ব্যর্থ। ১০ জন নিয়েও ড্র হওয়া একটা ম্যাচ যতোটা জমানো দরকার মেসিরা তার চেয়ে কমকিছু উপহার দেননি। আফসোস একটাই শেষটা রঙিন হলো না ইনিয়েস্তার।  

তবে ৯০ মিনিটের যে উত্তেজনা, বিনোদন আর আবেগ নিয়ে হাজির হলো তাতে ফুটবলকে কেন সেরা খেলা বলা হয় তার অনেক বড় উদাহরণ এই এল ক্লাসিকো।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৫ ঘণ্টা, মে০৭, ২০১৮
এমএইচএম/এসআইএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।