এর আগে ১৯৩০ সালে ফিফার প্রথম বিশ্বকাপটি নিজেদের করে নিয়েছিল উরুগুয়ে। এবার ২-১ ব্যবধানে সেলেকাওদের হারিয়ে শিরোপা উচ্ছ্বাসে মাতে দলটি।
১৯৫০ বিশ্বকাপ অন্য একটি কারণেও বিখ্যাত হয়ে থাকবে। এবারই প্রথম ট্রফির নাম দেওয়া হয় জুলে রিমে কাপ। ফিফার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জুলে রিমের ২৫ বছর উপলক্ষে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
এর আগে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপের পরিকল্পনা থাকলেও তা বিশ্বযুদ্ধের কারণে মাঠে গড়ায়নি। তবে যুদ্ধ শেষেই ফিফা যত দ্রুত সম্ভব টুর্নামেন্টটি চালু করার ইচ্ছে পোষণ করে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় আয়োজক দেশ নিয়ে। কেননা বিশ্বযুদ্ধের কারণে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই বিধ্বস্ত। ফলে তারা ক্রীড়া উদযাপন থেকে নিজ দেশের উন্নতির দিকেই বেশি নজর দেয়।
পরে ১৯৪৬ সালে ফিফা কংগ্রেসে ১৯৫০ বিশ্বকাপের আয়োজকের দায়িত্ব পায় ব্রাজিল। ১৯৪২ সালে বাদ পড়া বিশ্বকাপের জন্য ব্রাজিল ও জার্মানি বিড করেছিল। ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপ ইউরোপে অনুষ্ঠিত হওয়ায় ফুটবলের নীতি নির্ধারকরা দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশকেই পছন্দ করেন। তাই ১৯৫০ এর বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায় ব্রাজিল। আয়োজক নির্বাচিত হওয়ার পর ফিফা অংশগ্রহণকারী দেশ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায়। ইউরোপ থেকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইতালিসহ সরাসরি খেলার সুযোগ পায়। সঙ্গে স্বাগতিক হিসেবে ব্রাজিলও এই সুযোগ পায়। বাকি ১৪ দলের মধ্যে ৭টি নির্ধারণ হয় ইউরোপ থেকে, ৬টি আমেরিকা ও একটি এশিয়ার দেশ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র দেশ জার্মানি ও জাপানকে এ বিশ্বকাপে বাছাইপর্বে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বাছাইপর্ব থেকে সরিয়ে নিজেদের সরিয়ে নেয় আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডের ও পেরু। পরে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে চিলি, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে সরাসরি বিশ্বকাপে সুযোগ পায়।
এশিয়া থেকে বাছাইপর্বে নিজেদের সরিয়ে নেয় ফিলিপাইনস, ইন্দোনেশিয়া ও বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার)। তাই সরাসরি সুযোগ পায় ভারত। আর ইউরোপ থেকে অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়াম নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলে বাছাইপর্বের ফাইনাল রাউন্ড খেলা ছাড়াই সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক সুযোগ করে নেয় বিশ্বকাপে।
বাছাইপর্বের পরও সরে দাঁড়ায় স্কটল্যান্ড ও তুরস্ক। ইংল্যান্ডের কাছে বাছাইপর্বে দ্বিতীয় হওয়ার কারণে স্কটল্যান্ড ও দক্ষিণ আমেরিকায় ভ্রমণে আর্থিক সমস্যার কারণে তুরস্ক খেলতে অস্বীকৃত জানায়। পরে এদের ঘাটতি মেটাতে ফিফা বাদ পড়া পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড ও ফ্রান্সকে আমন্ত্রণ জানায়। পর্তুগাল ও আয়ারল্যান্ড নেতিবাচক সাড়া দিলেও ফ্রান্স জায়গা করে নেয়।
১৯৫০ এর বিশ্বকাপে চারটি গ্রুপ করা হয়। প্রথম তিনটি গ্রুপে চারটি করে দেশ থাকলেও চতুর্থ গ্রুপে থাকে তিনটি দেশ। তবে বিশ্বকাপের ড্র’র পর তিন নম্বর গ্রুপ থেকে ভারত সরে দাঁড়ায়। কেননা ১৯৪৮ অলিম্পিকের পর ফিফাও খালি পায়ে খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ভারত সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। আর চতুর্থ গ্রুপ থেকে ফ্রান্সও সরে দাঁড়ায় এই গ্রুপে ভ্রমণের সমস্যার কারণে। ফলে চতুর্থ গ্রুপে উরুগুয়ে ও বলিভিয়া বাকি থাকে।
আসরটিতে মোট ৬টি স্টেডিয়ামে খেলা হয়। ভেন্যুগুলো হলো, রিও ডি জেনিরো, সাও পাওলো, বেলো হরিজোন্তে, কুরিতিবা, পোর্তো অ্যালেগ্রি ও রেসিফ।
১৬ জুলাই উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটি ফাইনাল হিসেবে নির্ধারণ হয়। যেখানে প্রথমার্ধে কোনো দলই গোলের দেখা পায়নি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই (৪৭ মিনিট) ফ্রিয়াকা ব্রাজিলের হয়ে গোল করলে পুরো স্টেডিয়াম মেতে ওঠে। তবে ৬৬ ও ৭৯ মিনিটে উরুগুয়ের স্কিয়াফিনো ও ঘিগিয়া গোল করে সেলেকাওদের কাঁদিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে। সেই থেকে মারাকানা স্টেডেয়াম অভিশপ্ত হয়ে আছে ব্রাজিলীয়দের কাছে।
টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ব্রাজিলের স্ট্রাইকার আদেমির। আসরে মোট ২২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে গোলের সংখ্যা ছিল ৮৮টি। গড়ে একটি ম্যাচে ৪টি করে গোল।
পুরো টুর্নামেন্টে ১০ লাখ, ৪৫ হাজার ২৪৬ জন দর্শক মাঠে এসে খেলা দেখেন। ম্যাচ প্রতি গড়ে ৪৭ হাজারের বেশি দর্শক উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৮
এমএমএস/এমজেএফ