শনিবার (২৬ মে) রাতে কিয়েভের মাঠে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস দিয়ে নামে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর রিয়াল ও মোহাম্মদ সালাহর লিভারপুল। প্রথমার্ধের শুরু থেকে দাপুটে খেলা উপহার দিতে থাকে লিভারপুল।
কিন্তু জাল খুঁজে পাচ্ছিলো না যেন। ২৪ মিনিটে জেমস মিলনারের এগিয়ে দেওয়া বল রবার্তো ফিরমিনো শট নিলে তা রক্ষণে আটকা পড়ে। ফিরে আসা বলটি আলেক্সান্ডার আর্নল্ড মাটি কামড়ানো শটে জালে পাঠাতে চাইলে তা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাহুবন্দি করেন কেইলর নাভাস।
তার আগে সুযোগ এসেছিলো রিয়াল শিবিরেরও। টনি ক্রুসের বাড়ানো বল থেকে গোলবারের ডান দিক দিয়ে গিয়ে জোরালো শট নিয়েছিলেন রোনালদো। কিন্তু বলটি গোলবারের কিছুটা উপর দিয়ে চলে গেলে এই যাত্রায় বেঁচে যায় জার্গেন ক্লপের শিষ্যরা।
২৬ মিনিটে লিভারপুল শিবিরে নেমে আসে স্থবিরতা। রিয়াল ও লিভারপুলের স্কোর লাইন তখন ০-০। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে রিয়াল গোলবারের দিকে ছুটছিলেন মিশরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহ। সে বল কেড়ে নিতে সার্জিও রামোস তার ডান হাত ধরে একই সমান্তরালে ছুটলে এক সময় ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান সালাহ।
পড়ে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কাতরানোর পর ফিজিও এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যান। ফের নামলেও মিনিট তিনেক পর তাকে উঠিয়েই নিয়ে যান ফিজিও। সালাহ বুঝতে পারেন, তার বহুদিনের লালিত স্বপ্নের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে আর খেলা হচ্ছে না। রোনালদো এগিয়ে এসে সান্ত্বনা দিলেও অশ্রু লুকোতে পারছিলেন না। কাঁদছিলো যেন লিভারপুল শিবিরও।
খানিকবাদেই হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে পড়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান রিয়ালের রাইটব্যাক দানি কারভাহাল। কাঁদছিলেন তিনিও। এই ইনজুরি যে তার বিশ্বকাপকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিল।
প্রথমার্ধের একেবারে শেষে এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। অলরেডদের গোলবারের একেবারে সামনে থেকে রোনালদোর হেড থেকে করিম বেনজেমা পোস্টে বল ঠেলে দেন। কিন্তু রেফারি ফ্ল্যাগ তুলে জানিয়ে দেন, অফসাইড ছিলো। ফলে গোলশূন্য সমতা নিয়েই মাঠ ছাড়ে দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে এসে জাল খুঁজে পায় দু’দলই। ৫১ মিনিটে লিভারপুল গোলরক্ষক কারিয়াসের হেয়ালির সুযোগ কাজে লাগিয়ে হোয়াইটদের ১-০ তে এগিয়ে দেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া বেনজেমা। কারিয়াস বল নিজের প্লেয়ারদের দিকে বাড়াতে চাইলে সামনে থাকা বেনজেমা এগিয়ে পা ছুঁইয়ে দেন, বল চলে যায় জালে। মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন অলরেডদের হাজারো সমর্থক।
তবে তাদের সেই হতাশাকে উৎসবে রূপ দিতে খুব বেশি সময় নেয়নি লিভারপুল। ৫৫ মিনিটে জেমস মিলনারের কর্নার কিক থেকে দিহান লোভরেন হেড দিয়ে সাদিও মানের কাছে বল দিলে গোলবারের একেবারে সামনে থেকে তা পা বাড়িয়ে জালে জড়িয়ে দেন সেনেগাল তারকা। ম্যাচে আসে ১-১ সমতা।
সে সমতা খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি লিভারপুল। ৬৩ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান তারকা মার্সেলোর ক্রস থেকে বাইসাইকেল শটে গোল করে রিয়ালকে ২-১ এ ব্যবধানে এগিয়ে নেন বেল।
রিয়ালের তৃতীয় গোলটিও আসে ওয়েলস তারকার পা থেকে। ৮৩ মিনিটে ৩০ মিটার দূরে থেকে তার নেওয়া জোরালো শট গোলরক্ষকের হাত ফসকে জালে জড়িয়ে গেলে ম্যাচ ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় জিদানের দল। এরপর আর ফেরা ‘কিছু’ করা হলো না ইংলিশ জায়ান্টদের। রিয়াল মাঠ ছাড়ে ১৩তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে।
এর ফলে ব্যক্তিগত শিরোপার আধিক্যে এগিয়ে গেলেন রোনালদোও। ক্যারিয়ারের পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতলেন এই পর্তুগিজ উইঙ্গার। ২০০৯ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে জেতার পর ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রিয়ালের হয়ে আরও তিনটি ‘ইউরোপ সেরা’র শিরোপা জিতেছেন তিনি।
শনিবারের ম্যাচ শেষে রিয়াল শিবিরে যেমন উদযাপনের চিত্র, লিভারপুল শিবিরে তেমন হতাশার চিত্র। গোলরক্ষক কারিয়াস তো জার্সিতে মুখ লুকিয়েই কাঁদছিলেন। তবে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন মনে হলো সুদূর মিশর থেকে কিয়েভে যাওয়া সালাহ ভক্তদের। সামনের মাসে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপে তারা যে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন সালাহকে ঘিরে, যিনি শুরুতেই ‘কেঁদে’ মাঠ ছেড়েছেন অজানা শঙ্কায়!
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৮
এইচএল