স্বাগতিক চিলি ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ছাড়া আরও ১৪টি দেশ স্বাভাবিক নিয়মে বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করে। ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়াকে হারিয়ে ইতালির পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি গড়ে ব্রাজিল।
এই টুর্নামেন্টটি অবশ্য বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত ছিল। আসরের প্রায় অনেক ম্যাচেই খেলোয়াড়দের মাঝে সহিংস আচরণ দেখা গিয়েছিল। বিশেষ করে প্রথম রাউন্ডে স্বাগতিক চিলি ও ইতালির মধ্যকার ম্যাচটি চরম উত্তাপ ধারণ করেছিল। ২-০ গোলে ইতালির হারের ম্যাচটিকে আবার ‘ব্যাটেল অব সান্তিয়াগো’ বলেও উল্লেখ করা হয়। এছাড়া এই আসরে ইতিহাসে সর্বনিম্ন ম্যাচ প্রতি গড়ে ৩টির নিচে (২.৭৮) গোল হয়েছিল। গত দুটি বিশ্বকাপ ইউরোপে হওয়ায় এই আসরে দাবি ওঠে দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশে অনুষ্ঠিত হতে হবে। অন্যথায় ল্যাটিন অঞ্চল পুরোপুরি টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়াবে। তবে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা ও চিলি ফিফা কংগ্রেসে লড়ে। যেখানে ভোটাভুটিতে আর্জেন্টিনাকে (১১ ভোট) হটিয়ে আয়োজক হিসেবে সুযোগ পায় চিলি (৩২ ভোট)।
এই আসরের মধ্যদিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলারে সুযোগ পায় কলম্বিয়া ও বুলগেরিয়া। তবে গত আসরের (১৯৫৮) ফাইনালিস্ট সুইডেন বাছাইপর্ব পেরুতে পারেনি। গত আসরের সেমিফাইনালিস্ট ফ্রান্সও সুযোগ পায়নি। এছাড়া বাছাই থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় অস্ট্রিয়া।
এই আসরে অংশ গ্রহন করা দেশ গুলো হলো: কনকাকাফ থেকে মেক্সিকো। কনমেবল থেকে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি (আয়োজক), কলম্বিয়া ও উরুগুয়ে। উয়েফা থেকে বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, ইংল্যান্ড, হাঙ্গেরি, ইতালি, সোভিয়েত ইউনিয়ন, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, পশ্চিম জার্মানি ও যুগোস্লাভিয়া। চিলি বিশ্বকাপের জন্য প্রথমে মোট আটটি ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ১৯৬০ সালে ভয়াবহ এক ভূমিকম্প গোটা চিলিকে নাড়িয়ে দেয়। এতে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ হতাহত হয়। পরে ভেন্যুর সংখ্যা অর্ধেকে নিয়ে আসা হয়। স্টেডিয়ামগুলো হলো সান্তিয়াগোর স্তাদিও ন্যাসিওনাল, ভিদেল দেল মারের স্তাদিও সাউসালিতো, রানাকাগুয়ার স্তাদিও বারডেন কোপার কো ও অ্যারিকার স্তাদিও কার্লোস ডিটব্রন।
এই বিশ্বকাপের ফরম্যাট ছিল ১৯৫৮ সালের মতোই। ১৬টি দেশ চার গ্রুপে ভাগ গয়ে প্রথম রাউন্ড খেলবে। সেখান থেকে সেরা দুই দল করে কোয়ার্টার ফাইনাল। আট দলের কোয়ার্টার থেকে চার দলের সেমিফাইনালে। এভাবে দুই দল ফাইনালে। তবে এই বিশ্বকাপে যোগ করা হয়েছে গোল গড়। যার মাধ্যমে প্রথম রাউন্ডে দু’দলের সমান পয়েন্ট হলে গোল ব্যবধান তার সমাধান দিতো।
এই বিশ্বকাপে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা ছিল ব্রাজিলের আগের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য পেলে এবার প্রথম রাউন্ডেই ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যান। এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশ্ব বিখ্যাত গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিন বাজে পারফরম্যান্স দেখান।
পেলের ইনজুরিতেও অবশ্য দমিয়ে রাখা যায়নি ব্রাজিলকে। আসরে কোনো ম্যাচ না হেরে ফাইনালে চেকোস্লোভাকিয়াকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ট্রফির স্বাদ পায় ব্রাজিল।
আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন যৌখভাবে ছয় জন। ব্রাজিলের গ্যারিঞ্চা ও ভাভা, চিলির লিওনেল সানচেজ, হাঙ্গেরির ফ্লোরিনা আলবার্ট, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভ্যালেন্টিন লাভানোভ ও যুগোস্লাভিয়ার ডারজান জেরকোভিচ। তারা সবাই সমান চারটি করে গোল করেছিলেন।
টুর্নামেন্টে মোট ৮৯টি গোল হয়েছিল। ম্যাচ প্রতি গড় গোল ২.৭৮। এছাড়া আসরে মোট দর্শকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯ লাখ। ম্যাচ প্রতি প্রায় ২৮ হাজার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ৩০ মে, ২০১৮
এমএমএস