এর চেয়ে ভালো করে এই দুই মহাতারকাকে নিয়ে আর কেউ বলতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। মেসি আর রোনালদো তাদের যুগের সেরা দুই খেলোয়াড়।
এটা এমন তর্ক যার কোন শেষ নেই। কারণ, দুজনেরই বেশ কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে। ফলে তাদের নিয়ে তর্ক করে জয়ী হওয়া আর হাতের মুঠোয় চাঁদ ধরা সমান কথা। মানে অসম্ভব।
পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দুজনের অবস্থান প্রায় সমান। দেশ আর ক্লাব মিলিয়ে ৭৬৫ ম্যাচে মেসির গোল সংখ্যা ৬১৭টি, আর ৯১৫ ম্যাচ থেকে রোনালদোর গোল ৬৫৮টি। দু’জনেই ক্লাবের হয়ে বহু শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। দুজনের ব্যালন ডি’অর জয়ও সমান, পাঁচটি।
তার মানে কিন্তু এই নয় যে, দুজনই এক সমান। একটা ছোট্ট বিষয় দুজনকে আলাদা করেছে।
মেসি তার দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত শিরোপা জয় করতে পারেননি, রোনালদো পেরেছেন। ২০১৬ সালে ইউরো জয়ের কারণেই জাতীয় দলের হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন রোনালদো। তবে মেসিভক্তরা এক্ষেত্রে দাবি করতে পারেন, তার জাতীয় দলের সতীর্থদের কারণেই এখন পর্যন্ত সাফল্য পাননি তিনি। যদি তার সতীর্থরা তাকে সঠিকভাবে সহায়তা করতে পারতেন তাহলে হয়তো তার অবিশ্বাস্য প্রতিভার প্রস্ফুটন ঘটাতে সক্ষম হতেন তিনি আর দেশকে এনে দিতে পারতেন বেশকিছু বৈশ্বিক শিরোপা।
কিন্তু পরিসংখ্যান আবেগ বুঝে না। ফলে এ ধরনের আবেগীয় কথার খুব বেশি মূল্য নেই ফুটবলে। তাছাড়া এটা পুরো সত্যও নয়। কারণ, মেসি জাতীয় দলে সতীর্থ হিসেবে আগুয়েরো, হিগুয়াইন, মাসচেরানোর মতো সতীর্থ পেয়েছিলেন। এই ক্ষেত্রে রোনালদোকে বলা যায় ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’। ২০১৬ সালের ইউরোতে তার প্রমাণ রেখেছেন সিআর সেভেন। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপেও তার ঝলক দেখা গেছে।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো একটা মাঝারি মানের দলকে ২০১৬ সালের ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিলেন। রাশিয়া বিশ্বকাপেও একাই টেনে নিয়েছেন দলকে। দল তাকে দেখে উৎসাহিত হয়েছে। তিনি তার দক্ষতা, পারফরম্যান্স এবং আচরণ দিয়ে দলকে জয়ের পথ দেখিয়েছেন। তবে তার দল তাকে সঠিকভাবে সাহায্য করতে পারেনি। বরং তিনিই বাকি দলকে সাহায্য করেছেন। মহান নেতারা এমনই হন- তারা সাধারণ মানুষকে অসাধারণ কিছু করে দেখাতে সাহায্য করেন।
ঠিক এমনটাই ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনা করে দেখিয়েছিলেন। ২০১৬ সালের ইউরোতে রোনালদো করে দেখিয়েছিলেন।
মেসি ঠিক এই কাজটাতেই ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি তার দলকে তাদের সেরাটা বের করতে সাহায্য করতে পারেননি। তিনি অনেক বড় মাপের খেলোয়াড় তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। ১১ জন গ্রেট খেলোয়াড় যা করে দেখাতে পারেন না, একজন গ্রেট নেতা একটি গ্রেট দল বানিয়ে তা করতে পারেন। হয়তো শুধু এই একটা কারণেই দু’জন সামান্য ব্যবধানে আলাদা।
তবে, এই দুজনের দৃষ্টিনন্দন লড়াইটা হয়তো আর নাও দেখা যেতে পারে। যদিও তারা কেউই এখনও আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেননি। তবে তার আগেই তাদের দুটি পথ এখন আলাদা হয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।
রিয়াল ছেড়ে ইতালির ক্লাব জুভেন্টাসে যোগ দিতে চলেছেন পর্তুগিজ ফুটবল তারকা রোনালদো। ফলে স্প্যানিশ লিগে এই দুই বিশ্বসেরার লড়াইটা আর উপভোগ করার সুযোগ থাকছে না ফুটবলপ্রেমীদের। যদিও চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই তারকার দেখা হওয়ার সুযোগ থাকছে।
তবু একই যুগের দুই বিশ্বসেরার একই লিগে লড়াই দেখা থেকে বঞ্চিতই হতে হবে। থাকছে না সেই গোলের লড়াই, ব্যালন ডি’অর জয়ের লড়াইও হয়তো সৌন্দর্য হারাবে। সবচেয়ে বড় কথা প্রতি মৌসুমে লা-লিগায় দুটি এল ক্লাসিকোতে মেসি-রোনালদোর মুখোমুখি লড়াই দেখার যে উত্তেজনা তা কিছুটা ফিকে হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৮
এমএইচএম/এমজেএফ