সেরা মান বজায় রাখতে এরমধ্যেই স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজনকে নিয়োগ দেওয়ার পর থেকেই দল একের পর এক বেশ সিভি সম্পন্ন খেলোয়াড় দলে টেনেছে বসুন্ধরা কিংস। বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকান ডেনিয়েল কলিনড্রেসের পর এবার ব্রাজিলের মার্কোস ভিনিসিয়াসকে এনে দলের শক্তিমত্তা আরও বাড়িয়ে নিয়েছে দলটি।
২৭ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গত দুই মৌসুম থাইল্যান্ড লিগে খেলেছেন। সর্বশেষ থাই ক্লাব থার্টিন এএফসির হয়ে ২৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৩ গোল। প্লে-মেকার কলিনড্রেসের সঙ্গে তার জুটি জমে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা ক্লাবটির কোচ-কর্মকর্তাদের।
তবে এই দুই তারকা ছাড়াও ডিফেন্স সামাল দিতে আছেন অভিজ্ঞ স্প্যানিয়ার্ড হোর্হে গোতর, যিনি গত মৌসুমে ব্রুজনের অধীনেই খেলেছেন মালদ্বীপের চ্যাম্পিয়ন নিউ রেডিয়্যান্টে। এশিয়ান কোটায় যুক্ত হতে যাচ্ছেন একজন অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলারও।
সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খেলা জাতীয় দলের ৮জনই আছেন এই দলে। অধিনায়ক হিসেবে আছেন গত লিগে স্থানীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা স্ট্রাইকার তৌহিদুল আলম। দেশের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে আছেন দুই ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল ও মতিন মিয়া। উইংয়ে মোহাম্মদ ইব্রাহিম। দেশসেরা দুই মিডফিল্ডার মাশুক মিয়া ও ইমন মাহমুদও আছেন দলে। ডিফেন্সে স্প্যানিয়ার্ড হোর্হে গোতরের সঙ্গী হিসেবে থাকছেন নাসিরউদ্দিন চৌধুরী।
বসুন্ধরা কিংসের শোভাযাত্রা
ঘরোয়া ফুটবল মাতাতে গতকাল শনিবার (১৩ অক্টোবর) দেশ-বিদেশের ফুটবল তারকাদের নিয়ে সত্যিকার রাজার সাজেই যেন সেজেছিল বসুন্ধরা কিংস। ব্যাপক শোডাউন করে ঢাকাবাসীকে নিজেদের আগমন বার্তা দিলো দলটি।
ক্লাবের রঙ লাল। আর সেই রঙে সজ্জিত হয়ে কাল বাস, ট্রাক, মোটরবাইক ও ঘোড়ার গাড়িতে সজ্জিত হয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা হয়ে মতিঝিলের বাফুফে ভবনে ঢুকে এই শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় অংশ নেন ক্লাবের খেলোয়াড়, সমর্থক ও কর্মকর্তারা। সবার পরনে ছিল লাল টি-শার্ট, সমর্থকদের হাতে কিংসের লাল পতাকা।
কাল দলবদলের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘আমরা মূলত দুটি লক্ষ্য নিয়ে ফুটবলে এসেছি। এক. বেশ কয়েক বছর ধরে ফুটবলের যে মান পড়ে গেছে, সেই মান বাড়ানো আমাদের প্রথম লক্ষ্য। দ্বিতীয় লক্ষ্য অবশ্যই খেলাটির জনপ্রিয়তা আবার ফেরানো। আমরা শক্তিশালী দল গড়েছি, বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলার নিয়ে এসেছি। এর বড় উদ্দেশ্য হলো মানুষ যেন এই আকর্ষণে হলেও মাঠে আসে। দর্শক মাঠে এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়বে, আর প্রতিদ্বন্দ্বী বাড়লে আপনাতেই খেলার মান বাড়বে। ’
২০১৬ সালে পাইওনিয়ার লিগ দিয়ে যাত্রা শুরু করা দলটি তৃতীয় বিভাগ থেকে সরাসরি চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে অংশ নিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর পেশাদার ফুটবল লিগ তথা প্রিমিয়ার লিগেও প্রতিষ্ঠিত সব ক্লাবকে কাঁপিয়ে দেওয়ার প্রস্তুত দলটি। কিংসের প্রশংসায় পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘বসুন্ধরা কিংস শুরু থেকেই যে পেশাদারি কাঠামো নিয়ে এগোচ্ছে, তা আমাদের অন্য ক্লাবগুলোর জন্য উদাহরণ হতে পারে। ’
বসুন্ধরা কিংস শুধু বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের ব্র্যান্ডিং করতে চায়। তাদের পরবর্তী ভাবনা এএফসি কাপ নিয়ে। ক্লাব সভাপতি বলেন, ‘ঘরোয়া ফুটবলের সব ট্রফি জয়ের পাশাপাশি এএফসি কাপেও নিজেদের প্রমাণ করতে চাই আমরা। ’
বসুন্ধরা কিংসের লক্ষ্যের কাণ্ডারি কোচ অস্কার ব্রুজন যে দল পেয়েছেন তাতে বেশ আশাবাদী, ‘বসুন্ধরার ম্যানেজমেন্ট তাদের উচ্চাশার সঙ্গে আমাদের দেওয়া সহযোগিতায় কোনো ফারাক রাখেনি। কোচিং স্টাফের হয়ে আমি বলতে পারি, আমাদেরও চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না। খেলোয়াড়দেরও শুরুর দিন থেকে দেখছি তারা নিজেদের সেরা প্রমাণে মুখিয়ে। সত্যি বলতে নিজেদের কোনো দুর্বলতাই আমি দেখছি না। আমরা পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী নিজেদের সামর্থ্য ও লক্ষ্য পূরণে। প্রতিটি টুর্নামেন্টের জন্যই ঝাঁপাব আমরা। ’
বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন রাজা হয়ে আসীন হতে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বসুন্ধরা কিংস। এখন শুধু মাঠে রাজত্ব করার প্রতীক্ষা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৮
এমএইচএম