ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

ফাইনালে নিজেদের ফেভারিট মানছে চট্টগ্রাম আবাহনী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
ফাইনালে নিজেদের ফেভারিট মানছে চট্টগ্রাম আবাহনী চট্টগ্রাম আবাহনী অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও কোচ মারুফুল হক (ডানে)। ছবি: উজ্জ্বল ধর

আর মাত্র একটি ধাপ পেরোলেই হাতে জ্বলজ্বল করবে শিরোপা। দরকার একটি জয়। তাহলেই পুরোনো হাসিটা ফিরে পাবে চট্টগ্রাম আবাহনী। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের ফাইনাল খেলবে বন্দর নগরের ক্লাবটি। তবে শিরোপা পুনরুদ্ধারের তাদের পার হতে হবে মালয়েশিয়ার ক্লাব তেরেঙ্গানু এফসি’র বাধা। ফাইনালের আগে চট্টগ্রামের ফুটবল প্রেমীদের কাছে এখন ঘুরেফিরে একটিই আলোচনা, চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে তো চট্টগ্রাম আবাহনী?

তবে ঘরের দর্শক কী ভাবছে তা নিয়ে ভাবনা নেই চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ মারুফুল হকের। শিরোপা জয়ের জন্য অনড় থেকেই দলকে তিনি ফাইনালে তুলেছেন।

এত দূর এসে প্রতিপক্ষকে একবিন্দু ছাড় দিয়ে শিরোপা হারাতে রাজি নন কোচ মারুফ। বুধবার (৩০ অক্টেবর) ফাইনালের আগে সংবাদ সম্মেলনে সেই কথায় জানান তিনি, ‘আমাদের একটাই টার্গেট ছিল, ফাইনালে আসা। দুইটা বেস্ট টিম ফাইনালে এসেছে। আমরা যোগ্যতা ও সামর্থ্য দিয়েই এখানে এসেছি। ফাইনালেও আমরা জিততে চাই। আমরাই ফেভারিট ফাইনালে। ’

কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়া যে খুব সহজ হবে না তা ভালো করেই জানেন কোচ মারুফ। কারণ প্রতিপক্ষ তেরেঙ্গানু। এবারের আসরের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সফল দল যারা। গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনাল মিলে একটি ম্যাচও হারেনি কোচ মোহাম্মদ বিন নাফুজি  বিন মোহাম্মদ জেইনের দল। কেবল গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে গোকুলাম কেরালার বিপক্ষে গোলশূন্য ব্যবধান নিয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে তেরেঙ্গানু। তার মধ্যে সেই ম্যাচ ছাড়া বাকি প্রত্যেক ম্যাচেই বড় জয় পেয়েছে দলটি। সুতরাং দুঃশ্চিন্তাটা থাকছে কোচ মারুফের, ‘বিট করতে হলে ওদের মূল প্লেয়ারকে থামাতে হবে আর আমাদের মূল প্লেয়ারকে কাজে লাগাতে হবে। ’

তবে কোচ মারুফের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম তেরেঙ্গানু অধিনায়ক লি অ্যান্ড্রু টাক। সাবেক ঢাকা আবাহনীর এই ইংলিশ মিডফিল্ডার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের তৃতীয় আসরে পেয়েছেন টানা দুই হ্যাটট্রিক। সর্বোচ্চ ৬ গোল নিয়ে শীর্ষ গোলদাতাদের তালিকাতেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন লি টাক।

সেই সঙ্গে কোচ মারুফের জন্য আরেকটি দুশ্চিন্তার নাম ব্রুনো সুজুকি। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চেন্নাই সিটির বিপক্ষে একাই চার গোল করে তেরেঙ্গানুকে বড় জয় এনে দিয়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। অবশ্য কোচ মারুফ সবচেয়ে বেশি নজরটা রাখছেন লি টাকের দিকে। তিনি বলেন, ‘লি টাক অন্যতম সেরা পারফর্মার এ আসরে। তার এ লেবেলে খেলা ঠিক না। অনেক উঁচু মানের প্লেয়ার সে। আমাদের প্লেয়ারদের প্রতি পরামর্শ যেনো বক্সে রাফ ট্যাকল না করে। তারপরেও হয়ে যায়। ওদের একটা কম্বিনেশন আছে লি টাক ও ব্রুনোর মধ্যে। এটা ব্রেক করতে হবে আমাদের । লি টাক সেটপিস থেকে যেভাবে গোল করে, সেটা প্রতিপক্ষের ওয়ালের দূর্বলতার কারণে। আমরা ওয়াল গড়ায় সতর্ক থকবো। ’

প্রতিপক্ষ নিয়ে হুঁশিয়ার থাকার পাশাপাশি নিজের শিষ্যদের নিয়েও আত্মবিশ্বাসী চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ। কোচ মারুফের স্বস্তি, অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠায়। সেই স্বস্তির কথায় জানান তিনি, ‘জামাল পুরোপুরি সেফ। ’

তেরেঙ্গানু শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তবে জয়ের জন্য মিডফিল্ডেই শক্তি বাড়াতে চান তিনি, ‘আমাদের খেলার মধ্যে ভেরিয়েশন আছে। এসব ম্যাচে ভেরিয়েশন জরুরি। আমার প্ল্যানিং থাকবে মিডফিল্ডে। সেখান থেকেই গোল করার চেষ্টা থাকবে। লুকাকে ওরা টার্গেট করবে। কিন্তু জামাল ও দিদিয়ারকে কাজে লাগাবো। ’

গোকুলাম কেরেলার বিপক্ষে দুই দুইবার পিছিয়ে পড়েও অতিরিক্ত সময়ের গোলে ৩-২ ব্যবধানের দুর্দান্ত জয় নিয়ে ফাইবনালে টিকেট কাটে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। এই জয়ের জন্য ১২০ মিনিট মাঠে থাকতে হয়েছে জামাল ভূঁইয়া-চার্লস দিদিয়েরদের। তবে ফাইনালের আগে দু’দিন বিশ্রাম পেয়েছেন তারা। এই বিশ্রাম শিরোপা জয়ে কোনো ভূমিকা রাখবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কোচ মারুফ বলেন, ‘ফাইনালের আগে একদিন সময় বেশি পেয়েছি এটা কোনো বিশেষ সুবিধা নয়। কারণ ১২০ মিনিট খেলতে হয়েছে আমাদের। ’

সেমিতে ১২০ মিনিট খেলেলেও ফাইনালটা ৯০ মিনিটেই শেষ করতে চান কোচ মারুফ। সেই সঙ্গে ঘরের দর্শকদের সামনে এত বড় মঞ্চের ফাইনালে খেলার চাপটাও স্বীকার করলেন তিনি, ‘৯০ মিনিটেই শেষ করতে চাইবো। তারপরেও আমার চাওয়ায় কিছু হবে না। আমাদের দেশের প্লেয়াররা এত ক্রাউডে খেলায় অভ্যস্ত না। কিন্তু অতি সম্প্রতি আমরা এমন চাপকে জয় করে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছি। ম্যাচটাকে উপভোগ করতে হবে। তাহলেই ফাইনালে সাকসেস হওয়া সম্ভব।  চাপ আছে। তবে আমি চাপ নিচ্ছি না। কারণ আমার দল ডে বাই ডে ইমপ্রুভ করছে। ফাইনালেও তারা ইমপ্রুভ করবে। আর আমি চাপ নিতে অভ্যস্ত ২০০৮ সাল থেকেই। হাই স্কোর নিয়ে আমি চিন্তিত নই। জয়টাই মূখ্য। সেটা ১-০ গোলেও হতে পারে। ’

কোচ মারুফুল হকের মতোই একই সুরে কথা বলেছেন জামাল ভূঁইয়া। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই যে শিরোপা জয়ের জন্য লক্ষ্য স্থির রেখেছিলেন তা আরেকবার স্মরণ করলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক, ‘টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই আমাদের টার্গেট ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আমরা সে লক্ষ্যের একেবারে কাছে। ’

প্রত্যেক ম্যাচের আগে নিজেদের কৌশল সাজাতে প্রতিপক্ষের খেলার ভিডিও অ্যানালাইসিস করে চট্টগ্রাম আবাহনী। তাতে সফলতাও পেয়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা। ফাইনালের আগেও তেরেঙ্গানুর ভিডিও অ্যানালাইসিস করবেন জানান তিনি, ‘আমরা এখনো ভিডিও অ্যানালাইসিস করিনি৷ আজ করবো। ওদের শক্তিশালী দিক ও দূর্বলতা দেখবো। দলের সবাই ফাইনালে খেলতে মুখিয়ে আছে। আমরা ফাইনাল খেলতে প্রস্তুত। আমার কাছে কে অধিনায়ক সেটা বিষয় নয়, ট্রফি জিততে চাই। চট্টগ্রাম আবাহনীর জন্য ট্রফি জেতাটাই মূখ্য। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
ইউবি/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।