ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

ফিলিস্তিনিদের আকুতি কি শুনছেন মেসি-সুয়ারেসরা?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
ফিলিস্তিনিদের আকুতি কি শুনছেন মেসি-সুয়ারেসরা? ইসরায়েলে ম্যাচ না খেলতে মেসি-সুয়ারেসদের প্রতি আহবান জানানোর জন্য এই ছবিটি ব্যবহৃত হচ্ছে/ছবি: সংগৃহীত

উরুগুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলতে ইসরায়েল সফরে যাবে আর্জেন্টিনা। ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ম্যাচটির। কিন্তু নৈতিকতার কথা মাথায় রেখে ম্যাচটি বর্জনের জন্য ফুটবলের দুই মহাতারকা লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেসের প্রতি আহবান জানিয়েছেন অগণিত ফিলিস্তিনি ফুটবলভক্ত ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর তেল আবিবের নিউ ব্লুমফিল্ড স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হওয়ার কথা আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের। এই ম্যাচ দিয়েই তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ফিরবেন লিওনেল মেসি।

কিন্তু ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার চলমান সংঘর্ষের কারণে ম্যাচ আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

দুই লাতিন আমেরিকান দলের দ্বৈরথ, যাকে বলা হয় সিলভার রিভার ক্লাসিক (ক্লাসিকো দেল রিও দে লা প্লাতা), প্রায় শতবছরের ঐতিহ্যবাহী লড়াই। এটাকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশিবার অনুষ্ঠিত দ্বৈরথ। দুই দল এ পর্যন্ত প্রায় ২০০টি ডার্বিতে মুখোমুখি হয়েছে।

২০১৮ বিশ্বকাপের আগে, ফিলিস্তিনিদের আহবানে সাড়া দিয়ে ইসরায়েলের মাটিতে প্রীতি ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এই সফর বাতিলের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য অনুরোধ এসেছিল মেসিদের কাছে। এছাড়া দেশটির রাজধানী বুয়েনস আয়ার্স এবং স্পেনের বার্সেলোনায় বড়সড় বেশকিছু আন্দোলনও হয়েছে। এবারও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় স্বাধীনতাকামী ‘ইসলামিক জিহাদ আন্দোলন ফিলিস্তিন’র অন্যতম শীর্ষ নেতা বাহা আবু আল-আত্তা নিহত হয়েছেন। এই হামলার জবাবে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ১৫০টি রকেট ছোঁড়া হয়। এতে ইসরায়েলের তেল আবিবসহ বেশ কয়েকটি শহরে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।  

এরপর বুধবার (১৩ নভেম্বর) গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মর্নিং স্টার’কে ‘প্যালেস্টিনিয়ান ক্যাম্পেইন ফর দ্য অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড কালচারাল বয়কট অব ইসলাম’- (পিএসিবিআই) এর একজন কর্মী আলিয়া মালাক বলেন, যখন ইসরায়েলি সরকার ফিলিস্তিনিদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে, এমন সময় ম্যাচটি মাঠে গড়ালে তা সুন্দর খেলাটিকে নোংরা করে তুলতে পারে।

মালাক বলেন, ‘বাকি বিশ্বের মতো, ফিলিস্তিনিরাও ফুটবল ভালোবাসে। কিন্তু কয়েক যুগ ধরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের ওপর অবৈধ সামরিক দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের জাতিবিদ্বেষী সরকার ফিলিস্তিনিদের, যাদের মধ্যে ক্রীড়াবিদরাও আছেন, মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করে যাচ্ছে। সেই ইসরায়েলের মাটিতে দুই জনপ্রিয় দলের প্রীতি ম্যাচ খেলা ফিলিস্তিনের প্রতি চরম অপমান। ’

‘ফিলিস্তিনের ক্রীড়া স্টেডিয়াম ধ্বংস করার পাশাপাশি এখানকার ক্রীড়াবিদদের আটক, শারীরিক অত্যাচার এবং হত্যা করছে ইসরায়েল। তারা (ইসরায়েল) ফিলিস্তিনি স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনগুলোতে হানা দিচ্ছে এবং খেলার মাঠগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইসরায়েলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা মানে ফিলিস্তিনিদের প্রতি যে অবিচার হচ্ছে তা বিশ্বের কাছ থেকে আড়াল করার প্রচেষ্টা’ যোগ করে তিনি।

আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন টাকার লোভেই ম্যাচটি খেলতে চাইছে বলে অভিযোগ মালাকের, ‘আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ম্যাচটি মাঠে গড়ানোর জন্য এতটাই উদগ্রীব যে তারা প্যারাগুয়ের বিপক্ষে (বাংলাদেশের মাটিতে) ম্যাচটি বাতিল করে দিয়েছে। তারা অবশ্যই অর্থের লোভে এটা করছে। ঘুষ হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়া কী মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা নয়?’

মেসি ও সুয়ারেসদের প্রতি ম্যাচটি বয়কটের আহবান জানিয়ে মালাক বলেন, ‘আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের খেলোয়াড় বিশেষ করে লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেসকে অবশ্যই তাদের প্রভাব ব্যবহার করে অর্থের বিনিময়ে ইসরায়েলে ম্যাচ খেলে নিজ নিজ দলকে ইতিহাসে ঘৃণার পাত্র হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে। ’ 

গাজা স্ট্রিপ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাজয়ী দল আলখাদামাত রাফাহ এফসি এক খোলা চিঠিতে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়েকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে, ‘গাজার ২০০ আন্দোলনকারীকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী, যার মধ্যে অনেক প্রতিভাবান ক্রীড়া তারকাও আছেন। আমাদের ফুটবল দল আছে যাদের বেশিরভাগই ভয়ানক ইনজুরি নিয়েও খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। ’ 

‘আর ওদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আড়াল করতে দুই জনপ্রিয় দলকে নিয়ে ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। আমরা অনুরোধ করছি, এমন কিছু হওয়া থামান। আপনারা সুন্দর খেলাটিকে নষ্ট করবেন না। ফিলিস্তিনি ফুটবলারদের বাঁচার ও খেলা চালিয়ে যাওয়ার আকুতির দিকে নজর দিন। ইসরায়েলে খেললে তা আমাদের ক্ষতির কারণ হবে। আমাদের স্বাধীনতা, সুবিচার এবং সমতার ক্ষেত্রে বড় আঘাত হয়ে আসবে।

‘সবশেষে জানাতে চাই, দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের মতো ইসরায়েলের জাতি বিদ্বেষেও কোনো প্রীতির ব্যাপার নেই। দয়া করে ম্যাচটি খেলবেন না। ’

মেসি-সুয়ারেসরা ফিলিস্তিনিদের আহবানে সাড়া দেবেন কি?

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।