ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

মেসি বনাম বার্সা: এক টুকরো কাগজ যখন যুদ্ধের অনুষঙ্গ

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২০
মেসি বনাম বার্সা: এক টুকরো কাগজ যখন যুদ্ধের অনুষঙ্গ ছবি: সংগৃহীত

২০ বছরের বন্ধন ছিন্ন করে বার্সেলোনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লিওনেল মেসি। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো সিদ্ধান্ত পাল্টানোর জন্য এরইমধ্যে ক্যাম্প ন্যুর বাইরে ‘মেসি যেও না’ বলে গলা ফাটাচ্ছেন সমর্থকরা।

অনেকে আবার ক্লাব প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তমেউর পদত্যাগের দাবিতেও স্লোগান তুলছেন। কিন্তু আড়ালে অন্য এক লড়াইয়ে ব্যস্ত মেসি ও বার্সেলোনা।

আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার এক ব্যুরোফ্যাক্সের (প্রত্যায়িত পত্র) মাধ্যমে বার্সা ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন মেসি। পরে বার্সেলোনার পক্ষ থেকেও এই সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। মূলত ক্লাবের নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক শেষে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বসে যান মেসি।

এরপর প্রিয় বন্ধু সুয়ারেসকে বিদায় করে দেওয়ার সম্ভাবনার আগুনে ঘি ঢালে। মূলত চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্যর্থতার পর কোচ কিকে সেতিয়েনের বিদায়ের পর কোম্যান আসতেই এতসব সমস্যার শুরু।

কোনো ঝামেলায় না জড়িয়ে বিনা ট্রান্সফার ফি’তেই ক্লাব ছাড়ার অনুমতি চেয়েছেন মেসি। বর্তমান চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতি মৌসুম শেষে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ক্লাব ছাড়ার সুযোগ আছে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের সামনে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, এই ক্লজ কেবলমাত্র মৌসুম শেষের ২০ দিন আগে প্রযোজ্য হওয়ার কথা। অর্থাৎ মে মাস শেষ হতেই শেষ হয়ে গেছে এই সুযোগ।

কিন্তু করোনা মহামারির কারণে মৌসুম শেষ হতে আগস্ট মাসও প্রায় শেষের পথে। নতুন মৌসুমও শুরু হয়নি। ফলে মেসি এই যুক্তি দেখিয়েই ফ্রি এজেন্ট হিসেবে যেতে চাইছেন। কিন্তু বার্সা চাইছে আগের ক্লজ অনুসরণ করতে। অর্থাৎ মেসিকে যেতে হলে রিলিজ ক্লজের ৭০০ মিলিয়ন পরিশোধ করতে হবে। তাদের যুক্তি, ২০২১ সাল পর্যন্ত মেয়াদ থাকা চুক্তি এরইমধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে। এই নিয়েই এখন আইনি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

মেসির পক্ষে শক্ত যুক্তি হচ্ছে, মৌসুম শেষেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার শর্ত আছে চুক্তিতে। বার্সা ও ফিফা এই চুক্তির শর্ত মানতে বাধ্য, যেখানে বলা আছে, ফাইনাল ম্যাচ শেষ হওয়া মানেই মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এই যুক্তি মানতে রাজি নয় বার্সা। তারা ওই নির্দিষ্ট তারিখ ধরেই হিসাব কষছে মেসিকে ঠেকানোর। এরইমধ্যে মেসির পাঠানো কাগজপত্রের জবাবে বার্সাও একটি চিঠি পাঠিয়েছে মেসির ঠিকানায়, যেখানে আশা করা হয়েছে, ক্যাম্প ন্যুয়েই ক্যারিয়ার শেষ করবেন তিনি।

সবমিলিয়ে এটা এখন পরিষ্কার যে, মেসি ও বার্সেলোনার অবস্থান এখন বিপরীতমুখী। তবে মেসির ক্লাব ত্যাগের সম্ভাবনার কথা কানে যেতেই অনেক সমর্থক মেসির সমর্থনে ও ক্লাব প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্প ন্যুর সামনে জড়ো হয়েছিলেন। পরে সেখানে পুলিশ হাজির হয়ে করোনা সংক্রমণ রোধে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

শুধু সমর্থক নয়, বার্সার কিংবদন্তি অধিনায়ক কার্লেস পুয়েল মেসির সমর্থনে মুখ খুলেছেন। বর্তমান ক্লাব তারকাদের মধ্যে লুইস সুয়ারেস, আর্তুরো ভিদালরাও অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু ঘটনার কেবল শুরুমাত্র। খুব শিগগিরই মেসি বনাম বার্সার লড়াই আরও তিক্ত রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে। দুই পক্ষই এখন চুক্তিপত্র তথা ছোট একটুকরো কাগজ সঙ্গী করে আইনি যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে মেসির বিদায় নিয়ে বেশ চাপে পড়ে গেছে বার্সার বোর্ডও। এরইমধ্যে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বার্তমেউ। কিন্তু তার নিজেরই চেয়ার নড়বড়ে হয়ে গেছে। তার পদত্যাগের দাবিই এখন বেশ জোরালো হচ্ছে। এরইমধ্যে তার নেতৃত্বে থাকা বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছেন সম্ভাব্য ক্লাব প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জর্দি ফেরে। যদি এই প্রস্তাবে বোর্ড সদস্যরা একমত প্রকাশ করেন তাহলে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।

অনাস্থা ভোটের কমপক্ষে ৬৬ শতাংশ যদি বার্তমেউ’র বিপক্ষে যায় তাহলে তাকে পদ ছাড়তেই হবে। সেক্ষেত্রে মেসির বার্সায় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তবে প্রক্রিয়াটা এত সহজ নয়। এখন দেখার বিষয় নতুন মৌসুম শুরুর আগে কার বিদায় ঘটে- মেসির নাকি বার্তমেউর।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২০
এমএইচএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।