চলতি চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়েছে। ইউরোপের শীর্ষ ৩২ দল থেকে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে ১৬ দল, আর বাদ পড়া বাকি ১৬ দল খেলবে চলতি ইউরোপা লিগে।
বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে সবার চোখ ছিল ‘বি’ গ্রুপের দিকে। এই গ্রুপের ৪ দলের মধ্যে যেকোনো দলের সম্ভাবনা ছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার। যার কারণে সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল ৩ পয়েন্ট আদায়। তবে ৮ পয়েন্ট নিয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখ। জার্মান ক্লাবটি অবশ্য ঠিকই শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ২-০ গোলে হেরেও দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার আনন্দে মেতেছিল তারা।
কপাল পুড়েছে ইন্টার মিলান ও শাখতার দোনেৎস্কের। তাদের লড়াইটি শেষ হয়েছে গোলশূন্য ব্যবধানে। শাখতার ৮ পয়েন্ট পেয়েও ছিটকে গেছে গ্লাডবাখের চেয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায়। ইন্টারের দৌড় থেমে গেছে ৬ পয়েন্ট নিয়ে। ২০১১/১২ মৌসুমের পর থেকে আর একবারও চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করতে পারেনি নেরাজ্জুরিা। অন্যদিকে শুরুতে নিজেদের ছায়া হয়ে থাকলেও ১০ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়েছে রিয়াল। গ্লাডবাখের বিপক্ষে নিয়মিত অধিনায়ক সার্জিও রামোসকে পেয়ে ঠিকই জ্বলে ওঠে লস ব্লাঙ্কোসরা।
‘এ’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলো আগে নিশ্চিত করে ফেলেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। শেষ ম্যাচটা তাদের জন্য ছিল নিয়মররক্ষার। অবশ্য তাতেও কোনো ছাড় দেয়নি গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। লোকোমোতিভ মস্কোকে ২-০ গোলে হারিয়ে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ সেরা হয়েছে বাভারিয়ানরা। একই গ্রুপ থেকে ৯ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। সালজবার্গের বিপক্ষে হারলে অবশ্য কঠিন সমীকরণের মুখে পড়তে হতো দিয়েগো সিমিওনের শিষ্যদের।
১৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপ থেকে শীর্ষ দল হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে ম্যানচেস্টার সিটি। আগেই শেষ ষোলো নিশ্চিত করা সিটিজেনরা গ্রুপের শেষ ম্যাচে মার্সেইকে উড়িয়ে দিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। একই গ্রুপ থেকে ১৩ পয়েন্ট দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তো।
দ্বিতীয় রাউন্ড আগেই নিশ্চিত করা লিভারপুল হোঁচট খেয়েছে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে। তবে মিতউইলানের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করেও ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপে সেরা হয়েছে অলরেডরা। ম্যাচ শুরুর ৫৫ সেকেন্ডে গোল করে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নদের এগিয়ে দেন মোহামেদ সালাহ। সেই সঙ্গে কয়েকটি রেকর্ডও করেছেন মিশরীয় ফরোয়ার্ড। লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে ম্যাচ শুরুর সবচেয়ে কম সময়ে গোল করলেন সালাহ। এই নিয়ে টুর্নামেন্টে ২২ গোল করে অ্যানফিল্ড কিংবদন্তি স্টিভেন জেরার্ডকে টপকে গেলেন তিনি।
নকআউট পর্বে যাওয়ার সুযোগ ছিল আয়াক্সের। তার জন্য ইতালিয়ান ক্লাব আতালান্তাকে হারাতে হতো ডাচ ক্লাবটিকে। কিন্তু ঘরের মাঠে উল্টো ১-০ গোলে হেরেছে আয়াক্স।
এর আগেরদিন ‘ই’ গ্রুপ ১৪ পয়েন্ট নিয়ে চেলসি ও ১৩ পয়েন্ট নিয়ে সেভিয়া শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয়। অবশ্য আগে থেকেই তারা নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছিল। ‘এফ’ গ্রুপ থেকে শীর্ষ দল হিসেবে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠেছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। ১০ পয়েন্ট নিয়ে জায়গা করে নিয়েছে লাৎসিও’ও। ‘জি’ গ্রুপে বার্সেলোনাকে হারিয়ে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ দল হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠেছে জুভেন্টাস। সমান পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে কাতালান জায়ান্টরা।
এবার ‘ডেথ গ্রুপ’ ভাবা হয়েছিল ‘এইচ’ গ্রুপকে। কারণ এই গ্রুপে পড়েছিল গত আসরের সেমিফাইনালিস্ট প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি), ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও গত আসরে চমক দেখিয়ে সেমিফাইনালে খেলা জার্মান ক্লাব লাইপজিগ। তাদের চেয়ে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ ছিল ইস্তানবুল বাসাকসেহির। তুরস্কের ক্লাবটি ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন আগেই বিসর্জন দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে ছিটকে যায় ইউনাইটেডও।
গ্রুপের শেষ ম্যাচটি পিএসজি, ইউনাইটেড ও লাইপজিগের জন্য হয়ে উঠেছিল ‘অলিখিত ফাইনাল’। দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ ছিল এই তিন দলের। কিন্তু লাইপজিগের মাঠে ৩-২ ব্যবধানে হেরে কপাল পুড়েছে ৯ পয়েন্ট পাওয়া রেড ডেভিলদের। ১২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে লাইপজিগ। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় শীর্ষ দল হিসেবে নকআউট পর্বে ওঠেছে পিএসজি।
বাসাকসেহির বিপক্ষে ফরাসি জায়ান্টদের ম্যাচটি মাঠে গড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যে বর্ণবাদের অভিযোগে বাতিল হয়ে গিয়েছিল। বুধবার রাতে আবারও মাঠে নামে দু’দল বর্ণবাদের প্রতিবাদে হাঁটু গেড়ে প্রতিবাদ জানিয়ে। ঘরের মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেসে নেইমারের হ্যাটট্রিকে তুরস্কের ক্লাবটিকে ৫-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দু’টি দলের (বার্সেলোনা ও পিএসজি) হয়ে ২০টি করে গোল করলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
দলের বাকি গোল দু’টি করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। জোড়া গোলে লিওনেল মেসির একটি রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় হিসেবে ২০ গোলের দেখা পেয়েছেন তিনি। মেসির ২০ গোল পেয়েছিলেন তার ২২ বছর ২৬৬ দিনে। এমবাপ্পে সেই রেকর্ড ভাঙলেন নিজের ২১ বছর ৩৫৫ দিন বয়সে।
গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে হোম ও অ্যাওয়ে মিলিয়ে দু’টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল প্রতিটি দল। এবার শুরু হচ্ছে নকআউট পর্ব। যেখানে হারলেই বিদায় নিতে হবে।
গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া যে ১৬ দল ইউরোপা লিগে জায়গা করে নিল: সালজবার্গ ও লোকোমোটিভ মস্কো (গ্রুপ-এ), শাখতার দোনেৎস্ক ও ইন্টার মিলান (গ্রুপ-বি), অলিম্পিয়াকোস ও মার্শেই (গ্রুপ-সি), আয়াক্স ও মিতউইলান (গ্রুপ-ডি), ক্রাসনোদর ও রেঁনে (গ্রুপ-ই), ক্লাব ব্রুগে ও জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গ (গ্রুপ-এফ), ডায়নামো কিয়েভ ও ফেরেঙ্কভোরোস (গ্রুপ-জি), ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইস্তানবুল বাসাকসেহির (গ্রুপ-এইচ)।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২০
ইউবি/এমএমএস