বন (জার্মানি) থেকে: জলবায়ু পরিবর্তনে কেবল বাংলাদেশের মতো ছোট ছোট সমুদ্রপোকূলের দারিদ্রপিড়ীত রাষ্ট্র বা দ্বীপ রাষ্ট্র নয়, ক্ষতির মুখে পড়েছে ইউরোপের পরাক্রমশীল রাষ্ট্রগুলোও। এরইমধ্যে এসব দেশে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
সাধারণত ডিসেম্বরের শুরুতেই ইউরোপ জুড়ে তুষারপাত শুরু হয়। সাদা বরফে ঢেকে যায় চরাচর। কিন্তু এবার ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই তুষারের দেখা নেই। কেবল স্কান্ডিনিভিয়ান ও বলকান অঞ্চল এবং আল্পস পর্বতাঞ্চল ছাড়া কোথাও নেই শুভ্র বরফের ছোঁয়া।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এরইমধ্যে এ মহাদেশের ঋতুচক্রে গোলমাল দেখা গেছে। ছোট হয়ে আসছে গ্রীস্মকাল আর বিলম্বিত হচ্ছে শীত। তবে শীতের সময়টা পিছিয়েছে আগের চেয়ে। শীতের তীব্রতা কমে এসেছে এবং গ্রীস্মের তাপ বেড়েছে। কখনো কখনো গ্রীস্মে তাপদাহের সৃষ্টি হচ্ছে কোন কোন দেশে।
প্রায় ৩০ বছর ধরে প্যারিসে বসবাস করেন এনামুল হক। ভূগোলের ছাত্র ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর ব্রাসেলসে পড়েছেন এনভায়রনমেন্ট সায়েন্সে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আগে কখনো এমন হয়নি যে জানুয়ারিতে প্যারিসে তুষার দেখা দেয়নি। কিন্তু গত কয়েক বছর এমনই হচ্ছে। ফলে ফরাসীদের এতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। এরা মনে করে, নয়েলের (বড়দিন) সময় তুষার না পড়া তাদের জন্য অশুভ।
তিনি বলেন, অন্যদিকে গ্রীস্মে তাপমাত্রা বাড়ছে এখানে। কখনো কখনো তা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও পার হয়ে যায়, যদিও এখন এমন দিনের সংখ্যা বছরে ৮ বা ১০ দিনের বেশি হয়নি।
বেলজিয়ামের নামুর সিটির বাসিন্দা শামসুর রহমান জানান, প্রতি বছর এই সময়ে বেলজিয়ামের প্রায় সবখানেই বরফ জমে থাকতো। সকালে ঘরের দরজা খোলা যেতো না। রাস্তায় বরফের পাহাড় পরিষ্কার করতে দরকার হতো মণকে মণ লবণ। কিন্তু বেশ কিছু দিন হলো এমন হয় না।
ব্রাসেলস শহরের অবস্থাও নামুরের মতো। এখানে বসবাসরত আলজেরিয়ান বংশদ্ভুত ফরাসী নাগরিক আব্দুস সালিম বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইউরোপে পড়তে শুরু করেছে। তবে ২০০৭ সালে থেকে তা ক্রমেই প্রকাশ পেতে শুরু করে। তখন থেকেই তুষারপাত যেমন কমে আসছে, গ্রীস্মের তাপদাহ তেমনি বাড়ছে।
ইউরোপের এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখনই তার পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর আঘাত হানতে শুরু করেছে। প্রভাব পড়েছে সামাজিক, অর্থনীতি, ব্যবসা ও কৃষি খাতে।
জার্মানির বন সিটিতে বিশ্বখ্যাত চেইন শপ ‘এইচএন্ডএম’ এর ফ্লোর ইনচার্জ ডেনিয়েল মার্কুইজ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, জলবাযু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসাতে পড়েছে ভালো ভাবেই। যেমন এবার শীতের পোশাক তেমন বিক্রি হয়নি। বরফ না পড়ায়, তেমন কেউই ওভারকোট বা ভারী পোশাক কেনেননি।
বন প্রবাসী মাহাবুব হাসান খান জানান, এখানে গ্রীস্মে তাপমাত্রা ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। যা কখনো কখনো ৪০ ডিগ্রিকেও ছাড়িয়ে যায়। অথচ এক সময় ২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা হওয়ায় এখানকার পত্রিকাগুলো তৎকালীন চ্যান্সেলর ও প্রধানমন্ত্রীর কালো ছবি প্রথম পাতায় ছেপে ক্যাপশন দিয়েছিল, আমরা আফ্রিকা হয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, তাপমাত্রা বাড়ার এই প্রভাব অর্থনীতি ও ব্যবসায় আছে। যেমন এখানে ২৪ ডিগ্রি অতিক্রম করার পর কর্মীকে ২ ঘণ্টা পর পর বিশ্রামে পাঠাবেন। অথবা কর্মচারী যদি কাজ না করে বাসায় চলে যায় আপনি কিছুই করতে পারবেন না।
তবে বন ইউনিভার্সিটির ছাত্র আলেকজান্ডার নিক্সনের মতে, পৃথিবীর তাপমাত্রা পরিবর্তন বা জলবায়ু পরিবর্তনটা একদমই স্বাভাবিক। কেননা জন্মের পর থেকেই পৃথিবী বদলাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলে কেবল উন্নত বিশ্ব গরীব দেশগুলোতে তাদের প্রযুক্তি বিক্রি করছে আর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫
আরএম/জেডএম