ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

গরমে বেড়েছে সর্দি ও গলাব্যথা

ডা. মালিহা শিফা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১২
গরমে বেড়েছে সর্দি ও গলাব্যথা

ঢাকা : ভ্যাপসা গরমে সারাদেশে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ।

এর মধ্যে নিয়মিত লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।

তপ্ত রোদ থেকে এসে ঠাণ্ডা পানি খাওয়ার ফলে বা রাতে দীর্ঘক্ষণ ফ্যান বা এসি চালানো থেকে বয়স্কদের গলাব্যথার সমস্যা হচ্ছে। শিশু থেকে সব বয়সের মানুষের মধ্যে ঠাণ্ডা ও সর্দি জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে।

আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এ ধরনের রোগী বেশি দেখা যায়।

এগুলো মূলত ভাইরাসজনিত রোগ। এসময়ে শিশুদের বিষয়ে মা-বাবা এবং নিজের জন্যও বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। আইসক্রিম বা ঠাণ্ডা পানীয়র কারণে শিশুরা সাধারণত ঠাণ্ডায় পড়ছে। আর এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে শিশুসহ বাসার সবাইকে অবশ্যই হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে।

এ থেকে পরিত্রাণের জন্য যা প্রয়োজন:

গলাব্যথা:
যেহেতু বেশি ঠাণ্ডা পানি বা গরম থেকে এসে ঠাণ্ডা পানি খাওয়ার জন্য এ জাতীয় সমস্যা হয় তাই ঠাণ্ডা পানি খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ঠাণ্ডা পানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে ইনফেকশন সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

এর চিকিৎসা না করালে টনসিলের চারপাশে ফোড়া বা পুঁজ জমতে পারে।

ধুলো-ধোঁয়া, বেশি গরম বা বেশি ঠাণ্ডা এবং ঘরে কার্পেট, তোষক, পর্দা ইত্যাদিতে জমে থাকা ধুলো থেকে সাবধান থাকতে হবে।

হালকা গরম পানিতে অ্যান্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশ এর সঙ্গে এক চিমটি লবণ দিয়ে দিনে দুই-তিনবার ব্যথা না কমা পর্যন্ত গড়গড়া করা যেতে পারে। গলাব্যথার সঙ্গে জ্বর ও ঢোঁক গিলতে সমস্যা হলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়েছে ধরা যায়।

পরামর্শ: এজন্য অ্যামেক্সিসিলিন, অ্যামেক্সিসিলিন ও ক্ল্যাভিলুনিক অ্যাসিডের মিশ্রণ জাতীয় ট্যাবলেট কিংবা সেফ্রাডিন জাতীয় ক্যাপসুল সাত দিন ব্যবহার করতে হবে। ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ভালো। নাক বন্ধ থেকে গলাব্যথা হলে অক্সিমেটাজোলিন, জাইলোমেটাজোলিন জাতীয় নাকের ড্রপস যা অ্যান্টাজল বা রাইনোজল নামে পাওয়া যায়, তা নাকের প্রতিটি ছিদ্রে তিন-চার ফোঁটা করে দিনে দুই-তিনবার ব্যবহার করা হয়।

তবে এ ড্রপ সাত দিনের বেশি ব্যবহার করলে নাকের মিউকাস ঝিল্লি আবার ফুলে গিয়ে স্থায়ীভাবে নাক বন্ধ করে দেয়। এর সঙ্গে আদা-চা, লেবু-চা খাওয়া যেতে পারে। খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক চলবে। (বি:দ্র:- আপনি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করবেন না। )

সর্দি ও ঠাণ্ডা জ্বর:
এটি প্রাথমিকভাবে ভাইরাসজনিত এবং পরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে পাকা সর্দিতে পরিণত হয়। হঠাৎ গরম পড়া থেকেই এমনটি হয়ে থাকে।

এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ খেতে পারেন। যেমন, সেট্রিজিন ১৪ দিন ব্যবহার করা যায়। বাজারে এ ওষুধ অ্যালাট্রল, পিরিটন নামেও পাওয়া যায়। (বি:দ্র:- আপনি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করবেন না। )

এছাড়া হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে মধু খাওয়া যায় এবং সেই সঙ্গে চিকেন স্যুপ খেলে ভালো। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল লেবু, কমলা, আমলকি, আমড়া, কামরাঙা প্রভৃতি খেতে পারেন। এ সমস্যা প্রতিরোধে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল সাহায্য করে।

স্বাভাবিক সব খাবারই খাওয়ানো যাবে। তবে যে খাবারে শিশুদের অ্যালার্জি আছে তা বাদ দেয়া উচিত।

ঘাম যেন শরীরে না শুকায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

নাক বন্ধ থাকলে নরসল ড্রপ প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়। সর্দি পাকলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসা না করালে সাইনোসাইটিস ও কানে স্থায়ী ব্যথা হতে পারে।

গরমে আরামে থাকার টিপস:

গরমে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা ও অসুখ দেখা দিতে পারে। সতর্কতা অবলম্বন করলেই গরমে আরামে থাকা যায়। নিচে তারই কিছু টিপস :

১. ঘামে গায়ে থাকা কাপড় ভিজে গরমে সর্দি বা কাশি হতে পারে। শিশুরাই এ ধরনের অসুখে বেশি ভুগে থাকে। তাই গরমের দিনে বাসায় সবচেয়ে ঠাণ্ডা অথচ খোলামেলা জায়গায় শিশুদের রাখা উচিত। অবহেলা না করে ডাক্তার দেখানো উচিত।

২. রোদে যারা বেশি ঘোরাফেরা করেন তাদের রোদে পুড়ে মুখে ছোপ ছোপ দাগ হতে পারে। কাজের জন্য বাইরে বের হতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে ও পরে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া ভালো।

৩. গরমে অনেক সময় ধুলাবালির আধিক্য দেখা যায়। ধুলার সংস্পর্শে এ সময় অ্যাজমা বা হাপানি দেখা দিতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে নাকে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি ছাতা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করতে হবে।

৪. গরমের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঘামাচি। এর কারণে শরীরে দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হয়। এ ক্ষেত্রে পরিত্রাণ পেতে হলে রোদে বের হওয়ার আগে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া শরীরে ট্যালকম পাউডার লাগাতে হবে। বাতাস লাগে এমন জায়গায় বসে কাজ করতে হবে।

৫. প্রচণ্ড গরমের কারণে মানুষের হিট স্ট্রোক হতে পারে। এসময় আক্রান্ত ব্যক্তি অসহ্য গরমে ছটফট করতে থাকেন। হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এ থেকে রক্ষা পেতে ছাতা, ক্যাপ বা মাথায় কাপড় দিয়ে বের হওয়া উচিত। গরমের স্থানে বা রোদে অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করা উচিত নয়। হিট স্ট্রোক যদি হয়েও যায় তবে রোগীকে ঠাণ্ডা স্থানে রেখে পুরো শরীরে বরফ অথবা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে প্রলেপ দিতে হবে।

লেখক: ডা. মালিহা শিফা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স কর্মকর্তা, মেরি স্টোপস

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১২

সম্পাদনা: তানিয়া আফরিন, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।