ঢাকা: সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার শেষ ভরসার স্থান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। প্রাচীন এই হাসপাতালে রয়েছে তীব্র শয্যা (বিছানা) সংকট।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে ঢামেকের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় কোথাও শয্যা খালি নেই। নিরুপায় হয়ে রোগীরা প্রচণ্ড শীতেও মেঝেতে থাকছেন।
হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র জানান, হাসপাতালে রোগীর ধারণক্ষমতা ২৬০০ হলেও রোগী ভর্তি আছে সাড়ে তিন হাজারের মতো। এই হাসপাতাল কোনো রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার নজির নেই। যেভাবেই হোক চিকিৎসকরা ভর্তি করিয়ে রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত জনবল। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আর তাই সারাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন বহু রোগী ছুটে আসেন হাসপাতালটিতে। রোগীর চাপের সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ওয়ার্ডে থাকা গুটি কয়েকজন কর্মী টাকার বিনিময়ে রোগীদের সিটের ব্যবস্থা করে দেন।
শয্যা না পেয়ে মেঝেতে রোগীরা
পুরাতন ভবনের নিচ তলায় মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড দিয়ে প্রবেশ করলেই ডানদিকে পড়ে ১০৯ নম্বর ও বাম দিকে ১০৮ নম্বর ওয়ার্ড। মাঝে বারান্দা, সেখানেও অনেক বয়স্ক নারীদের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। তাদের ভর্তি নেওয়া হয়েছে। একটা শয্যায় দু’জন করে রোগীকেও থাকতে দেখা গেছে।
সিরাজগঞ্জ কামারখন্দ এলাকা থেকে দুখিনী বেগম (৫৫) ফোড়া জনিত সমস্যা নিয়ে গত ১০ দিন আগে ভর্তি হন এখানে। তখন থেকেই তিনি বিছানা না পেয়ে বারান্দায় অবস্থান করছেন।
তার মেয়ে খুশি আক্তার জানান, প্রচণ্ড শীতে মাকে নিয়ে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে অবস্থান করছি। ওয়ার্ডের ভেতরে কোনো সিট খালি নেই। একটি শয্যায় দু’জন করে রোগীকে থাকতে হয়। তাছাড়া সেখানে বিছানা খুঁজতে গেলে ওয়ার্ডে থাকা নারী কর্মীরা টাকা দাবি করেন। কি আর করা, বয়স্ক মাকে নিয়ে এই শীতে ফ্লোরে অবস্থান করছি। চিকিৎসা পাচ্ছি, শুধু শয্যা সংকট।
একই বারান্দায় আছেন রোগী ফুলবানু (৬০)। বুধবার সকালে তিনি ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে।
তার নাতনি রোমানা জানান, পেটে ব্যথা নিয়ে তার নানীকে ভর্তি করা হয়। সিট না পাওয়ায় প্রচণ্ড শীতে দু’ওয়ার্ডের মাঝে চলাচলের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি। হাড় কাপানো শীতে রোগীও কষ্ট করে আমরাও কষ্ট করছি। তবে রোগীকে ভর্তি করানো হয়েছে, ফাইল অনুযায়ী ডাক্তার চিকিৎসা দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে ঢামেকের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দু’গুণের বেশি রোগী ভর্তি আছেন। আমরা কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দেই না। এমনও দেখা গেছে কোনো কোনো ওয়ার্ডের শয্যায় তিনজন রোগীকে রাখা হয়েছে। এখন হাসপাতালে শয্যা খালি নেই বলে আমরা যদি রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেই, তাহলে এই অসহায় রোগীগুলো কোথায় যাবে? তাই আমাদের শয্যা খালি না থাকলেও আমরা কোনো রোগীকে ফেরৎ পাঠাই না। প্রথম দিকে শয্যা পেতে রোগীদের একটু কষ্ট হলেও পরে তাদের ধারাবাহিকভাবে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৩
এজেডএস/জেডএ