ঢাকা:
জাহানারা বেগম (৬৫) থাকেন গুলশানে। বিশাল বাসায় সারাদিন একাই থাকতে হয় তাকে।
একমাত্র সন্তান রাফসান জামান জীবিকার তাগিদে বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকেন আমেরিকায়। ইদানিং বয়সের ভারে জাহানারা বেগমের শরীর আর আগের মতো সাড়া দেয় না। কখন কী হয়ে যায়! ওদিকে ছেলেও সব সময় মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করেন।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি একদিন হঠাৎ গৃহকর্মীর ফোন পান রাফসান জামান। কল রিসিভ করতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। অপর প্রান্ত থেকে গৃহকর্মী জানান, খালাম্মার শরীর খুব খারাপ। হাসপাতালে নিতে হবে। এতরাতে কে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবে সেই চিন্তায় বাকরুদ্ধ রাফসান।
পাশেই বসা ছিলেন রাফসানের স্ত্রী তানিয়া বেগম। হঠাৎ তিনি ফোনে কার সঙ্গে যেন কথা বলা শুরু করলেন। পরে জানতে পারলেন ‘হেলথ কেয়ার অ্যাট হোম’ – এইচসিএএইচের ইমার্জেন্সি নম্বরে ফোন করে শ্বাশুড়ির জন্য বাসায় চিকিৎসক ও নার্স পাঠানোর অনুরোধ করেন তানিয়া। পরবর্তী ১০ মিনিটের মধ্যে গুলশানে শ্বাশুড়ির বাসায় উপস্থিত হন একজন ডাক্তার ও একজন নার্স। প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়ে পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটু সুস্থ বোধ করতে লাগলেন জাহানারা বেগম।
প্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিদিনই জাহানারা বেগমের মতো এমন শত শত মানুষ প্রয়োজনমতো বাসায় বসে স্বাস্থ্য সেবা নিচ্ছেন।
কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং এ ব্যাপার আরও সতর্ক হওয়া। বৈশ্বিক মহামারি সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাস্থ্যখাতে উদ্ভাবন নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তাকেও সামনে এনেছে। এ খাতে নতুন নতুন প্রযুক্তির সূচনা করা, উন্নত মডিউল নিয়ে আসাসহ দেশের স্বাস্থ্যখাতের ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করার ব্যাপারটিকে জোরদার করেছে কোভিড।
স্বাস্থ্যখাতে উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে বাস্তবায়িত নতুন ধারণাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া। কোভিডের মতো প্রতিকূল সময়ে এ ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশসহ বেশিরভাগ দেশেই প্রশংসিত হয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মহামারি চলাকালীন দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগীকে সেবা দিতে হয়েছে। এরপরও প্রচণ্ড চাপের কারণে অনেক রোগীকে সেবা নিতে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ওই সময় স্বাস্থ্যসেবাখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নতুন ও উদ্ভাবনী সব উদ্যোগ। এসব উদ্যোগের ফলে মানুষ বাসায় বসে সাশ্রয়ী খরচে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পেরেছেন। পাশাপাশি রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে সাধারণত যেসব সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যেমন- সঠিক স্বাস্থ্যসেবা পরিকিল্পনা, রোগীর রিয়েলটাইম তত্ত্বাবধান, সময়মতো প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সেবা- এসব সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছে নতুন এসব উদ্যোগ।
এমনই উদ্ভাবনী একটি উদ্যোগ হলো ‘হেলথ কেয়ার অ্যাট হোম (এইচসিএএইচ)’। ২০১৯ সালে গঠিত হওয়া স্বাস্থ্যসেবার এ প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্যক্রম শুরু করে। মানুষের দুয়ারে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার যুগান্তকারী ধারণা নিয়ে যাত্রা শুরুর কারণে ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে এ উদ্যোগ।
এইচসিএএইচ বাসায় গিয়ে যেসব স্বাস্থ্যসেবা দেয় তার মধ্যে রয়েছে- নার্সিং, মেডিকেল কেয়ারগিভিং, ফিজিওথেরাপি, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্স, কাউন্সেলিং এবং কম্প্যানিয়নশিপ।
এছাড়াও মেডিকেল ইক্যুইপমেন্ট সুবিধাও পাওয়া যাবে এইচসিএএইচ থেকে। প্রতিষ্টানটির কর্মীদের বিভিন্ন স্বনামধন্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা আছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশে প্রথমবারের মতো বাসায় এসে বিশেষভাবে সক্ষম শিশু এবং ডিমেনশিয়া রোগীদের সেবা দিচ্ছে। রোগীদের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানটি যে কোন সময়, যে কোন জায়গায় সেবাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাশাপাশি সেবাদানের ক্ষেত্রে তারা শতভাগ স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
এইচসিএএইচের সেবাগ্রহণে আগ্রহীরা প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক, লিঙ্কডইন অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাদের সুবিধামতো সময়ে যোগাযোগ করতে পারবেন। এইচসিএএইচ এরপর রোগীর স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি যাচাই করে উপযোগী একটি স্বাস্থ্য পরিকল্পনা তৈরি করবে। পরবর্তীতে, রোগীর জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর একটি তালিকা বাছাই করে তাদের সেবা দেওয়া হবে। এইচসিএএইচ রোগীদের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টাই পর্যবেক্ষণ এবং তত্ত্বাবধানের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র রোগীদের মানসম্মত সেবা দেওয়ার মধ্যেই নিজেদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখেনি। এইচসিএএইচ দেশের স্বাস্থ্যসেবা শিল্পের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্টেট কলেজ অব হেলথ সায়েন্সেসের মাধ্যমে বিএসসি ডিগ্রিও দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
এমআইএইচ/এমএমজেড