ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চেন অব কমান্ড মানছেন না এসএম বাশার শিকদার নামে এক ওয়ার্ড মাস্টার। গত এক মাস আগে ১৯ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে ৮ জন ওয়ার্ড মাস্টারকে চিঠির মাধ্যমে জায়গা পরিবর্তনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
নির্দেশনা মানলেও তা মানছেন না বহির বিভাগে দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ড মাস্টার এসএম বাশার শিকদার।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দেখা যায় হাসপাতালের চেন অব কমান্ডের নির্দেশনা অমান্য করে দিনভর ওয়ার্ড মাস্টার বাশার শিকদারকে বহির্বিভাগে ডিউটি করতে দেখা যায়। অথচ স্থান পরিবর্তনের জারিকৃত চিঠির সময় এক মাস অতিক্রম হয়েছে।
চিঠির নির্দেশনায় দেখা যায়, ওয়ার্ড মাস্টার বাশারকে হাসপাতালে বহির বিভাগ থেকে পুরাতন ভবনের কেবিন ব্লকে দায়িত্ব পালনের জন্য দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ঢামেক হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি ৮ ওয়ার্ড মাস্টাদের চিঠির মাধ্যমে স্থান পরিবর্তন এর নির্দেশনা জারি করা হয়। তৎক্ষণিকভাবে ৭ ওয়ার্ড মাস্টার রাজি হলেও বহির্বিভাগে দায়িত্বরত থাকা বাশার নামে এক ওয়ার্ড মাস্টার সম্মত হননি। কারণ তার বাড়ি ফরিদপুর। জেলার নাম ভাঙ্গিয়ে একটি সংগঠন আছে তার। হাসপাতাল কেন্দ্রিক সেই সংগঠনের তিনি সাধারণ সম্পাদক। সেটার প্রভাব খাটিয়ে হাসপাতালের চেন অব কমান্ডের নির্দেশনা না মেনে আগের স্থানেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সূত্র আরও জানান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনেই হচ্ছে বহির্বিভাগ। ভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারির অজুহাত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিজেইকাঁধে নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহির্বিভাগের দায়িত্ব পালনের মৌখিক নির্দেশনা নেন।
এই নির্দেশনা তিনি একা নেননি, হাসপাতাল কেন্দ্রিক ফরিদপুর জেলার নাম দিয়ে একটি সংগঠন থেকে তার সঙ্গে ছিলেন প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা. আব্দুল আজিজও।
কথা ছিল ২২ ফেব্রুয়ারি পরের দিন অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি নতুন স্থানে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু দেখা যায় ২১ ফেব্রুয়ারি চলে গেলেও অন্যান্য ওয়ার্ড মাস্টাররা হাসপাতাল থেকে চিঠিতে উল্লেখিত নতুন স্থানে যোগ দিলেও বাশার শিকদার বহির্বিভাগেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এ কারণে হাসপাতালের স্টাফদের মাঝে নানা রকম গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন চেন অব কমান্ড মানছেন না বাশার শিকদার। আবার অনেকে বলছে, বাশারের বাড়ি ফরিদপুর। সেই জেলার নাম ভাঙিয়ে তিনি ক্ষমতা দেখান।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছেন গত কয়েক বছর ধরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ওয়ার্ড মাস্টার বাশার শিকদার বহির্বিভাগে ডিউটি করে যাচ্ছেন। নির্দেশনার পরও তিনি স্থান ছাড়তে চাচ্ছে না কেন? নিশ্চয়ই কোনো স্বার্থ আছে!
এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সভাপতি রমিজ জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সবাইকে অবশ্যই মানতে হবে।
কথা হয় প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা. আব্দুল আজিজের সঙ্গেও। তিনি জানান, হাসপাতাল সবাইকেই চেন অব কমান্ড মানতে হবে। বাসার শিকদারের পক্ষে কোনো অনুরোধ করেনিন।
এদিকে ওয়ার্ড মাস্টার এসএম বাশার শিকদারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে জানান, তার স্থলে যিনি আসবেন সেই ওয়ার্ড মাস্টার আবু সাঈদ অসুস্থ থাকায় কয়েক দিন সময় চেয়েছেন। বিষয়টি পরিচালক স্যারকে জানানো হয়েছে। তবে নির্দেশনা দ্রুত মানার কথা বলেছেন তিনি।
এর আগেও বাশার শিকদারের সঙ্গে কথা হলে জানিয়েছিলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি পরপরই নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন।
এদিকে হাসপাতাল থেকে স্থান পরিবর্তনের জন্য দেওয়া চিঠিতে দেখা গেছে পুরাতন ভবনের কেবিন ব্লকের দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ড মাস্টার আবু সাঈদকে বহির্বিভাগে আবুল বাশারের স্থানে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল ফোনে ওয়ার্ড মাস্টার আবু সাইদ জানান, আমি কোনো অসুস্থ না। হাসপাতালের চেন অর কমান্ড মানতে আমি বাধ্য। আগামী শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) আমি দায়িত্ব বুঝে নিতে চাই।
এদিকে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে জারি করা চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক সবাইকে স্থান পরিবর্তন করে ডিউটি করতে হবে। অলরেডি কয়েকজন স্থান পরিবর্তন করে ডিউটি বুঝে নিয়েছেন। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখবে। কিন্তু চেন অব কমান্ড অবশ্যই সবাইকে মানতে হবে। ওয়ার্ড মাস্টার বাশারের স্থানে নতুন করে যোগ দেবেন আবু সাঈদ। তিনি অসুস্থ কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩
এজেডএস/এমএমজেড