ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঠাকুরগাঁওয়ে ওয়ার্ড বয় করেন ইসিজি, প্রেসক্রিপশন লেখেন সহকারী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৩
ঠাকুরগাঁওয়ে ওয়ার্ড বয় করেন ইসিজি, প্রেসক্রিপশন লেখেন সহকারী

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ইসিজি করান ওয়ার্ড বয়, আর প্রেসক্রিপশন লেখেন চিকিৎসকের সহকারী।

সরকারি হাসপাতালে এমন চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে।

অতি দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

রোববার (০৬ মার্চ) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক নেই। সেখানে রোগী ভর্তি নেওয়া, ব্যান্ডেজ, সেলাইসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন এমবিবিএস চিকিৎসকের সহকারী। রোগীদের প্রেসক্রিপশনও লিখছেন তিনি।

ঘটনার সত্যতা আরও নিশ্চিতে বুক ব্যথার রোগী সেজে সেই সহকারীর কাছে যান এই প্রতিবেদক। দশ মিনিট বসিয়ে রেখে ওয়ার্ড বয়কে ইসিজি করার নির্দেশ দেন তিনি। কূল-কিনারা না পেয়ে ইসিজির একটি ভ্যাকুয়ামের অংশ হারিয়ে ফেলেন ওয়ার্ড বয়।  

রোগীকে শুয়ে রেখে সেটি খুঁজতে বের হন সবাই। এরইমধ্যে দায়িত্বরত চিকিৎসক আসেন, কিন্তু সহকারী প্রেসক্রিপশন করেই যাচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের।  

পনেরো মিনিট পর ইসিজির প্রয়োজনীয় অংশটি খুঁজে পান ওয়ার্ড বয়। তিনি ইসিজি সম্পন্ন করেন।

ঘটনার বিষয়ে রোগী সেজে জরুরি বিভাগে যাওয়া শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি শুধু গিয়ে বললাম আমার বুকটা চিনচিন করছে। আর চিকিৎসকের সহকারী কোনো কথা না শুনে আমাকে ইসিজি করাতে বলেন। আমার চিকিৎসায় ইসিজি জরুরি কিনা সেটাও জানার প্রয়োজন বোধ করেননি। আমার কাছে তো ইসিজি করার যে খরচ সেটা নাও থাকতে পারে। সরকারি হাসপাতালে তো খরচ বাঁচানোর জন্য আসা হয়। আর এমবিবিএস চিকিৎসক থাকা অবস্থায় সহকারী চিকিৎসা দিচ্ছেন - বিষয়টি আতঙ্কের ও বিপজ্জনক বটে। যদি সহকারী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তাহলে আলাদা চিকিৎসকের প্রয়োজন কোথায়? এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।  

চিকিৎসা নিতে আসা জহির রায়হান বলেন, মানুষ সুস্থ থাকার জন্য হাসপাতালে আসেন। সেখানে অদক্ষ লোক দিয়ে সেবা দেওয়া কাম্য নয়। আশা রাখছি এটি কর্তৃপক্ষ দেখবেন এবং জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকের সহকারী মাহবুব আলম বলেন, কিছু কিছু প্রেসক্রিপশন আমি লিখি। আর বাকীগুলোতে স্যারকে ডেকে নিয়ে আসি। আর রোগীরা টাকা দিয়ে যায় সেগুলো আমি নিই না, ড্রয়ারে রেখে দিই।

এমবিবিএস ডাক্তার থাকতে কেনো সহকারী প্রেসক্রিপশন লেখবেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে দেখিয়ে দিয়ে কথা বলতে অসম্মতি জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. নাজমুলুর রহমান।

এমন ঘটনায় বালীয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিঠুন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমাদের এখানে ইসিজি করানোর মতো লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাই ওয়ার্ড বয় দিয়ে করানো হচ্ছে। আর সহকারী যদি নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখে থাকেন তাহলে ভুল করেছেন। আমরা বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্যারকে অবহিত করব। আশা রাখছি তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে মোটেও ঠিক হয়নি। এরপরে আর সেখানে এমন ঘটনা ঘটবে না। আমরা বিষয়টি অবগত হলাম তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।