ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ক্যানসার হাসপাতালে রোগী হয়রানি বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
ক্যানসার হাসপাতালে রোগী হয়রানি বন্ধসহ ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন

ঢাকা: জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগী হয়রানি বন্ধ করা, পাশাপাশি সারাদেশে সুচিকিৎসা, রোগী-ডাক্তারদের নিরাপত্তা, টেস্ট-মেডিসিনের মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে দালাল নির্মূলসহ ৫ দফা দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে নিরাপদ হাসপাতাল চাই (নিহাচ) সংগঠন।

শনিবার ( ২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের উপজেলা, জেলা হাসপাতালগুলোর শোচনীয় অবস্থা। নেই ন্যূনতম পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবার নিশ্চয়তা। সংবিধানে জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু সত্য হলো এত বছর পরও সাধারণ জনগণের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারেনি দেশের সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে নিহাচের সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবন কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় নিরাপদ হাসপাতাল চাই (নিহাচ) এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই। একই সঙ্গে বলতে চাই দেশে এত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, এ দায় কার? সরকারি হাসপাতালগুলোতে সঠিক চিকিৎসা দেওয়ায় ব্যর্থ হওয়াতেই বিদেশে ঝুঁকছে মানুষ।

তিনি বলেন, পুঁজিবাদের কারণে স্বাস্থ্যখাতে গড়ে উঠেছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায় কিন্তু দালাল, অসাধু ডাক্তার-নার্স দিয়ে আদৌ সেটা সম্ভব? প্রায় এক দশক ধরেই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ থাকে জাতীয় বাজেটের ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। স্বাস্থ্য সেবা পেতে নিজেদের ৬৮ শতাংশ ব্যয় করতে হয়। মানুষের খরচ যদি কমানো না হয়, তবে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে গিয়ে মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়বে। আমরা আগামী বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে অন্তত ১০% বরাদ্দ চাই। সঠিক স্মার্ট স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হলেই হবে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ।

সংগঠনের সদস্য সচিব এফ এ শাহেদ বলেন, সব সেক্টরগুলো চাটার দলে ভরে গেছে, ভণ্ডামি আর লুটপাটে ব্যস্ত তারা। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। সরকারি হাসপাতালে যেখানে একদফা রেডিওথেরাপির জন্য ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা লাগে, সেখানে বেসরকারিতে প্রতি দফায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। ক্যানসার ব্যথা ব্যক্তির জন্য একবারে ২০ থেকে ৩০ দফা থেরাপির প্রয়োজন। এক্ষেত্রে এক টার্ম থেরাপি সরকারি হাসপাতালে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকায় শেষ হলেও, বেসরকারিতে একটার্মে খরচ হয় ১ থেকে ২ লাখ টাকা। এ অবস্থায় প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। দেশে ১৭০টি ক্যানসার হাসপাতাল দরকার থাকলেও আছে ৩৪টি, সেগুলোতে চিকিৎসার পরিবর্তে হয়রানি আর ভোগান্তিই বেশি।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাত ইতোমধ্যে রূপপুরের বালিশ কাণ্ডকে হারিয়ে ‘চোর চ্যাম্পিয়ন ট্রফি’ তুলেছে নিজের ঘরে।

ফ এ শাহেদ বলেন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পর্দার দাম ছিল ৩৭ লাখ টাকা, চিকিৎসার মান কেমন ছিল তা জানা যায়নি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যেদিকে তাকাই, সেদিকেই দেখি শুধু চাটার দল। স্বাস্থ্যখাতে সেবার নামে চলছে হরিলুট, আর প্রচার হচ্ছে হরিহরি। এই শিক্ষিত চোরগুলো চুরির পর টুনটুনি বাজিয়ে মিডিয়াতে জানান দেয়- স্বাস্থ্যখাত এখন সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া হয়ে গেছে। ছি ছি .. স্থাস্থ্যখাত, এ লজ্জা আজ বাংলার কোটি মানুষের।

মানববন্ধনে তুলে ধরা ৫ দফা দাবি হলো:

১. দালাল মুক্ত ও রোগীবান্ধব হাসপাতাল গড়তে হবে।

২. জেলা সদরে আইসিইউ, সিসিইউসহ সব পরীক্ষা নিশ্চিত ও আসন বাড়াতে হবে।

৩. রোগী ও চিকিৎসকদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. টেস্ট ফি এবং ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

নিহাচর সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিকের সভাপতিত্বে, এফ এ শাহেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সালেকুজ্জামান রাজিব, অসিম আল ইমরান, মো. আবু মুসা আশয়ারী মনির, যুগ্ম-সদস্য সচিব শাহরিয়ার সোহাগ, এম আর এফ আবির, রেজয়ান সীমান্ত, মাহবুবুর রহমান, নোমান বিল্লাহ, নিরোধ কুমার বর্মন, সৈয়দ মোহাম্মদ আজম, খতিব আসলাম, শারমীন আক্তার মিস্ট, আবদুল্লাহ কাফি, তারেক মনোয়ার, মাহমুদুল হাসান, কে এম সবুজ, এঞ্জেল নুসরাত, বিথী কর্মকার, তুষার সাহা অর্নব প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
ইএসএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।