ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, টনক নড়ছে না!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে, টনক নড়ছে না!

রাজশাহী: ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে রাজশাহী মেডিকেল (রামেক) কলেজ হাসপাতালে। রাজশাহী শহরেও মিলেছে এডিস মশার লার্ভা।

তারপরও টনক নড়ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজশাহীর মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু।

যদিও মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে সভা করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। তবে এতে কেবল ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশার বংশবিস্তার রোধ ও পরিচ্ছন্নতা এবং জনসচেতনতা বাড়াতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিসের লার্ভার অনুসন্ধান বা ধ্বংসের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে চারজন। আগের ভর্তি আছে ১৫ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সাত মাস বয়সী সাবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ) রয়েছে। বর্তমানে ১৯ জন রোগী ভর্তি আছে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে পাপ্পু (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ঢাকাচন্দ্রগাঁতি গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে। রাজধানী ঢাকার মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে নিরাপত্তা কর্মীর চাকরি করতেন। সেখানেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন পাপ্পু।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা সাত বছরের ডেঙ্গু রোগী সাবার বাবা রাজু জানান, তাদের বাড়ি মহানগরের লক্ষ্মীপুরে চন্ডিপুর এলাকাতেই। তিনি রাজধানী ঢাকায় চকরি করেন। গত তিনদিন আগে সাবাকে তার স্ত্রী অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিল সাবা। তবে রোববার চিকিৎসকরা জানান, তাকে আইসিইউতে নিতে হবে। এরপর থেকে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মেদ বলেন, যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত তারা বেশির ভাগই ঢাকার বা তাদের ঢাকায় যাতায়াতের রেকর্ড আছে। তবে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতেও এখন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে, যাদের ঢাকা যাওয়ার কোনো হিস্ট্রি নেই। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউতে সাবা নামের সাত বছরের এক শিশু চিকিৎসাধীন আছে।

এদিকে রাজশাহীতেও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার সন্ধান মিলেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের টিম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সম্ভাব্যস্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। ল্যাবে সেগুলোর নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছিল। পাঁচ দিনে মোট ৭৫টি বাড়ি থেকে সংগ্রহকৃত নমুনার মধ্যে ২৮টিতেই প্রাণঘাতী এডিসের লার্ভা মিলেছে। রাজশাহীও এখন এডিসের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠেছে!

সোমবার বিকেলে ল্যাব টেস্টের এই ফলাফল পান বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তাই রাজশাহীর ডেঙ্গু পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক হিসেবেই দেখছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার জানান, এবার বছরের শুরুতেই রাজশাহী বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ধরা পড়ে। বর্তমানে বিভাগের আট জেলায় মোট চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১৭ জন। এর মধ্যে রামেক হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৫ জন। তাই সিটি করপোরেশন র‌্যানডম সিলেকশনের মাধ্যমে এলাকার ৭৫টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এতে এজিপ্টাই মশার লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে। আর এজিপ্টাই এবং এলবোপিক্টাস এই দুই প্রজাতির লার্ভাই মিলেছে। আর এই দুটো মিলে জুলাই-আগস্টে ডেঙ্গু ছড়াতে থাকলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে পারে। তাই এই লার্ভা ধ্বংসের জন স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনকে শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে।

যদিও মঙ্গলবার সকালে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশার বংশবিস্তার রোধ, পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগর ভবনের সরিৎ দত্ত গুপ্ত সভাকক্ষে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সচিব, মশক পরিদর্শক ও সুপারভাইজারদের সাথে আলোচনা সভায় ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তার রোধ, পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছেন- রাসিক মেয়রের দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন।

রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জনসচেতনতা এবং মশার বংশবিস্তার রোধের বিকল্প নেই। এসব বিষয়ে কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করা হবে। ব্যক্তি মালিকানাধীন কোনো বাড়ি, ভবন ও প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, ফুলের টব, ভাঙ্গা হাড়ি-পাতিল, গাড়ীর পরিত্যক্ত টায়ার, টিনের কোঁটা, ভাঙ্গা কলস, ড্রাম, ডাব-নারিকেলের খোসা, এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটারের তলায় পানি জমতে দেবেন না। যেসব স্থানে মশা জন্মাতে পাতে সেসব স্থানের পানি জমতে দেবেন না। বাড়ির ভেতরে, আশ-পাশ ও আঙ্গিনা পরিস্কার করুন। দিনে ঘুমানোরে সময়ও মশারি ব্যবহার করুন। ডাব- নারিকেলের খোসা, ভাঙ্গা কলস, টিনের কৌটা ব্যবহারের পর জমিয়ে না রেখে মাটিতে পুঁতে রাখার পরামর্শ দেন।

তবে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান বা ধ্বংসের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি ওই সভায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২৩
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।