ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ফরিদপুর হাসপাতাল যেন মশার বংশবিস্তারের কারখানা

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
ফরিদপুর হাসপাতাল যেন মশার বংশবিস্তারের কারখানা

ফরিদপুর: ফরিদপুরে ডেঙ্গুর অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিদিনই বাড়ছে শত শত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।

আক্রান্তদের মধ্যেও মারাও যাচ্ছে।  

এমন পরিস্থিতিতে দেখা গেল, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই যেন ডেঙ্গুবাহিত মশার (এডিস) বাসা! চারিদিকে নোংরা আর যেখানে-সেখানে রাখা ময়লার স্তূপ। এসব ময়লায় জন্ম নিচ্ছে মশা, সাথে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও।

রোগীরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটিতে গেলেও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে উল্টো স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া একাধিক রোগীর স্বজনদের অভিযোগ।  

যে হাসপাতালে প্রতিদিনই কয়েক’শ রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যেখানে ডেঙ্গুর মশা সংক্রান্ত ব্যাপারে ও নিধনে হাসপাতালটির চিকিৎসকরা নানা উপদেশ দিলেও নিজেরাই মানছেনা সেসব উপদেশ! 

উল্টো হাসপাতালটির আশেপাশে ডেঙ্গুর বংশবিস্তারের নির্বিঘ্ন স্থান তৈরি করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে জলাবদ্ধতা।  

এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তেমন ভ্রূক্ষেপ নেই বলে জানালেন একাধিক রোগী। হাসপাতালটিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও ইদানীং দায়সারা কাজ করেন; আবার কখনো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকারও অভিযোগ রয়েছে।  

এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের ছাড়পত্র দেওয়ার সময় ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।  

এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ও তার স্বজনরা জানান, যে হাসপাতালে শত শত ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানেই যদি ডেঙ্গু মশা বিস্তারের স্থান তৈরি করা হয় সেটা বড় কষ্টদায়ক। এ সংক্রান্ত কিছু বললে লোকবলের সংকটের অজুহাত দেখিয়ে হাসপাতালের কর্মচারীরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীও স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আবার কেউ কেউ রোগীদের ট্রলি টেনে দেদারসে টাকা নিচ্ছেন। টাকা না দিলে ট্রলির সেবা দিতে নানা অজুহাত দেখায়। তাদের কারোরই হাসপাতালটির পরিষ্কারের দিকে তেমন নজর নেই!

এছাড়া এ হাসপাতালটিতে দালালচক্রের দৌরাত্ম্যও ইদানীং বেড়েছে। বেড়েছে ওষুধ কোম্পানির লোকজনেরও আনাগোনাও। প্রতিদিনই হাসপাতালটির ইমার্জেন্সি কাউন্টারের সামনে তাদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। তারা, বিভিন্ন রোগীদের প্রলোভন দেখিয়ে ও রোগীদের সহযোগিতা করার কথা বলে নানা হয়রানি এবং অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বিস্তর। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দুষলেন কয়েকজন রোগীর স্বজন।  

এসব বিষয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. এনামুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হাসপাতাল নিয়মিতই পরিষ্কার করা হয়। অপরিষ্কার হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে, রোগীরা ওষুধের প্যাকেট, খাবারের অবশিষ্ট অংশ ও নানা ময়লা আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলানোর কারণে মাঝেমধ্যে আমাদের কিছুটা সমস্যা পোহাতে হয়। তবে, রোগী ও তাদের স্বজনদের একটু সচেতনতা এ সমস্যার সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আর, ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তারে জলাবদ্ধতা ও আবর্জনার বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ তিনি।

এছাড়া ছাড়পত্র নেওয়ার সময় রোগীর নিকট থেকে টাকা নেওয়া ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।