ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

লালমনিরহাটে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় বাড়ছে শীতজনিত রোগ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৪
লালমনিরহাটে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় বাড়ছে শীতজনিত রোগ

লালমনিরহাট: টানা তিনদিন ধরে দেখা নেই সূর্যের, সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে হিমালয়ের পাদদেশের জনপদ লালমনিরহাট। আর এ কারণে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বাড়ছে।



জানা গেছে, টানা তিনদিন ধরে সূর্যের দেখা থাকায় বেড়েছে শীতে তীব্রতা। গতকাল বিকেল থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো পড়েছে কুয়াশা। কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে পুরো জনপদ। সব মিলে হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় লালমনিরহাটের জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না মানুষ। ঠান্ডায় কাজে যেতে না পেরে অনেকটা সংকটে পড়েছেন নিম্ন আয়ের দিনমজুর ও শ্রমিকরা। হিমেল হাওয়ায় বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে তিস্তা-ধরলা নদী পাড়ের মানুষ। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষদের।

বিত্তশালীরা শীত উপভোগ করতে ভ্রমণে বের হলেও শীতে কাবু নিম্ন আয়ের মানুষরা। তারা পুরাতন কাপড়ের দোকান থেকে গরম কাপড় কিনে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ খড়কুটোতে আগুন দিয়ে শরীর গরম করার চেষ্টা করছে। প্রতি বছর সরকারি বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও এ বছর অনেকটা কম। কারণ হিসেবে অনেকের দাবি নির্বাচন ঘিরে প্রশাসন ব্যস্ত থাকায় এদিকে ততটা নজর নেই সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলোর।

সরকারি বা বেসরকারিভাবে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হলেও শিশুরা অনেকটা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। চরাঞ্চলের শিশুরা গরম কাপড়ের অভাবে ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে। কম্বলের পাশাপাশি শিশুদের জন্য সোয়েটার বিতরণের দাবি করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

তিস্তা চরাঞ্চলে আজগর আলী (৬৫) নামে এক ব্যক্তি বলেন, এমন ঠান্ডা বাহে কোনোদিন দেখি নাই। দিনে তো গাছের পাতায় আগুন দিয়ে শরীর গরম করি। রাত হলেই ভাঙা বেড়া দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢুকে হাঁড় পর্যন্ত ঠান্ডা করে দেয়। ছাওয়া পোয়া (সন্তানদের) নিয়া কষ্টে রাত কাটে বাহে। নিন্দ (ঘুম) হয় না ঠিকমতো।

রিকশাচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডার কারণে লোকজন কম বাইরে তাই আয়ও কম। কনকনে ঠান্ডায় বসে থেকে খালি পকেটেও বাড়ি ফিরতে হয় কোনো কোনোদিন।

টানা ঠান্ডায় মানুষসহ গবাদি পশুপাখিও নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঠান্ডা জনিত রোগীদের ভিড়ও বেড়েছে জেলার সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে শিশু আর বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া আর ডায়রিয়ায়। প্রতিদিন শত শত রোগী ভিড় করছে সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে। ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে।

দুই মাসের শিশু সোহাগকে নিয়ে হাসপাতালে আসা মা সোহাগী বেগম বলেন, ঠান্ডা লেগে শিশু জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হয়েছে। ৪/৫ দিন ধরে স্থানীয় চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শে ওষুধ দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছি। বাচ্চাকে নিয়ে কয়েক রাত ঘুমাতেও পারছি না।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ১১ মাসের মোস্তাকিন। শিশুটির বাবা জানান, চার দিন ধরে নিউমোনিয়ায় ভুগছে শিশু মোস্তাকিন। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই দিনে অনেকটা সুস্থ শিশু মোস্তাকিন। এমন অনেক শিশুই ঠান্ডায় নিউমোনিয়া আর ডায়রিয়ায় ভুগছে।

আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আজমল হক বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বহির্বিভাগে একাই দৈনিক প্রায় ৬০/৬৫ জন রোগী দেখছি। সব শিশুই আসছে নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া ও জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে। খুব বেশি আক্রান্তদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষায় সাধ্যমতো উষ্ণতা দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার শীতকালীন শাকসবজি খাওয়াতে হবে। আক্রান্তদের থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। আক্রান্তদের মাস্ক পড়ে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ছিন্নমূল মানুষদের শীত নিবারণের জন্য ইতোমধ্যে পাঁচ উপজেলাতে ২৪ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা বিতরণ চলছে। শিশুদের জন্য ৫০ হাজার পিস জ্যাকেট ও সোয়েটারের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলে তা শিশুদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।