ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

দুর্নীতি অনিয়ম বেড়েছে ঢামেকে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৩
দুর্নীতি অনিয়ম বেড়েছে ঢামেকে

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) সেবার মান উন্নত হলেও বেড়েছে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ অন্যান্য অনিয়ম।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বিয়াম মিলনায়তনে ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: সুশাসনের অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ করা হয়।



এসময় সেবার মান আরও বাড়াতে দ্রুত জনবল নিয়োগের সুপারিশও করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

টিআইবির প্রতিবেদনটিতে বলা হয়,  দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের সকল জরুরি রোগীদের ঢামেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। অথচ হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত মোট ২৯৮ জন ডাক্তারের মধ্যে রোগীর সার্বক্ষণিক প্রত্যক্ষ সেবায় নিয়োজিত থাকেন ১৯৯ জন। হাসপাতালে প্রতি ৩৭ জন রোগীর জন্য ডাক্তারের সংখ্যা একজন।

অন্তর্বিভাগে প্রতি ১৯ জন, বহির্বিভাগে প্রতি ৮০ জন ও জরুরি বিভাগে প্রতি ৫২ জন রোগীর বিপরীতে ডাক্তার আছেন একজন। মেডিসিন এবং নাক-কান-গলা বিভাগে যথাক্রমে প্রতি ১৫০ ও ২০০ জনের বিপরীতে একজন ডাক্তার দায়িত্বরত থাকছেন।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, ডাক্তাররা নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন না। হাসপাতালে ডাক্তাররা রোগীদের উন্নত চিকিৎসার কথা বলে নিজেদের চেম্বারে বা ক্লিনিকে যাওয়ার কথা বলেন।

মেডিসিন প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা থাকলেও তারা সবসময়ই ডাক্তারদের কক্ষে প্রবেশ করতে পারেন বলেও প্রতিবেদনটিতে অভিযোগ করা হয়।

এছাড়াও নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া, সময় মতো নার্স এবং ওয়ার্ড বয়দের ডেকে না পাওয়াসহ রোগীদের সঙ্গে নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের খারাপ ব্যবহারের অভিযোগও উঠে আসে টিআইবির এই প্রতিবেদনে।

হাসপাতালটিতে সিট বাড়ানোর অনুপাতে জনবল বৃদ্ধি করা হয়নি। সম্প্রতি ঢামেককে ২,৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল আছে ৮ শ জন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার ২৮০ রোগীর চিকিৎসা নিতে আসা এ হাসপাতলটি সম্পর্কে আরও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে প্রতিবেদনটিতে।

হাসপাতালে কর্মরত ৬২৫ জন নার্সের মধ্যে প্রত্যক্ষ সেবায় নিয়োজিত আছেন ৫৯১ জন। প্রতি ১২ জন রোগীর জন্য একজন নার্স আছেন। অন্তর্বিভাগে প্রতি পাঁচজন, বহির্বিভাগে ১৩৮ জন ও জরুরি বিভাগে ৪৯ জনের জন্য একজন করে নার্স।

অন্তর্বিভাগে মেডিসিন বিভাগের একটি ওয়ার্ডে ৬০ জন রোগীর বিপরীতে দুইজন ও নিওরোসার্জারি বিভাগের একটি ওয়ার্ডে ২৫০ জন রোগীর জন্য নার্স ‍‌আছেন দুইজন।

হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যের কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা দালালদের দ্বারা হয়রানির শিকার হন। সেবা নিতেও তাদের অর্থ প্রদান করতে হয়। শয্যা প্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, সদ্যোজাত শিশুর খোঁজ-খবর নিতে ৫০ থেকে ৩০০ টাকাসহ বিভিন্ন দামে তাদের কাছ থেকে সুযোগ কিনে নিতে হয়।

নবজাতক রিলিজ নেওয়ার সময় ১০০ থেকে এক হাজার টাকা। ট্রলি ব্যবহারে ৫০ থেকে ২০০ টাকা। রোগীকে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যেতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। দ্রুত রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা। দ্রুত এক্স-রে রিপোর্ট পেতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। সিরিয়াল ভেঙে এমআরআই করাতে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। ক্যাথেটার পরাতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা ও গেট পাসের জন্য ৫০ টাকা করে এসব দালালদের ঘুষ দিতে হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢামেক বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন, হেলথ রাইট মুভমেন্ট ন্যাশনাল কমিটির সভাপতি ডা. রশীদ-ই-মাহবুব।

আলোচনা সভায় তাসলিমা আক্তার গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০  ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৩
এনএম/এটি/টিকে/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।