ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

কুর্মিটোলা হাসপাতাল

ভুতূড়ে সেবাকেন্দ্র, রোগীর যোগাযোগেই সমস্যা

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৩
ভুতূড়ে সেবাকেন্দ্র, রোগীর যোগাযোগেই সমস্যা

ঢাকা: দেশের সাধারণ জনগণকে চিকিৎসা সেবা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। একটি সুরম্য ভবনে বেশ কিছু স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ সহজ হলেও মূলত রোগী পাচ্ছে না এ বিশেষ হাসপাতালটি।

এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের স্থান নির্বাচনকেই মূল সমস্যা হিসেবে মনে করছেন স্বাস্থ্য খাতের বিশিষ্টজনেরা।

উত্তর দিক হতে রাজধানীতে প্রবেশ করলে কুর্মিটোলায় সেনানিবাস ঘেষেই এ জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান। কিন্তু রাজধানীর ভিআইপি রোডে স্থাপিত এ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মোটেও সহজ কাজ তো আর নয়|

সর্বসাধারণের জন্য নির্মিত এ হাসপাতালে কোনো রোগী রিক্সাযোগে আসতে পারছেন না। বিমানবন্দর সড়কটি ভিআইপি হিসেবে গণ্য হওয়ায় এ রাস্তায় রিক্সা চলাচল একেবারেই নিষিদ্ধ।

Kurmito-sm4এ ছাড়াও ইমার্জেন্সি সেবা নিতে রাজধানীর কুর্মিটোলা, কচুক্ষেত, বনানী, কুড়িল বা খিলক্ষেত থেকে কেউ রিক্সায় চড়ে এ হাসপাতালে আসার সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার আবাসিক এলাকায় এ হাসপাতালের অবস্থান না হওয়ায় ঢাকার উত্তরের কোনো অংশের জনগণ সেবা নিতে কুর্মিটোলা হাসপাতালকে অগ্রাধিকার দেবে তাও সুনির্দিষ্ট নয়।

কুর্মিটোলা বাস স্টপেজ থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে কুর্মিটোলা হাসপাতালের অবস্থান। এ ছাড়া আশপাশে আর কোনো স্টপেজও নেই। ফলে বাসে করে এসে কোনো রোগীর পক্ষে এ হাসপাতালের সেবা নেওয়া কষ্টসাধ্য।

যদি হেঁটে যাওয়া না হয় তাহলে এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে হলে রোগীকে সিএনজি বা ট্যাক্সি ক্যাবযোগে পৌঁছতে হবে। বর্তমানে ঢাকায় এ ধরনের যানের ন্যূনতম ভাড়া কোনো গরীব ও নিম্নমধ্যবিত্ত রোগীর জন্য দু থেকে চার বেলার খাবারের খরচের সমতুল্য।

টঙ্গী, উত্তরা বা খিলক্ষেত থেকে কোনো রোগী ইঞ্জিন চালিত বাহনে এসে হাসপাতালের সামনেই মোড় ঘুরতে পারবেন না। রোগী বহনকারী যানকে ডিভাইডারের মাঝখানের ক্রসিং পেতে যেতে হবে আরও প্রায় ২০০ মিটার দূরে র‌্যাডিসন হোটেলের সামনে। তবে এ ক্রসিংয়ে কোনো সিগন্যাল বাতি নেই। এর পরের ক্রসিং বনানী ফ্লাই ওভারের নিচ দিয়ে ঘুরে এসেছে।

Kurmito-sm3রাস্তার পূর্ব পাশের কোনো গাড়িকে যদি কুর্মিটোলা হাসপাতালে আসতে হয়, তবে পশ্চিম পার্শ্বে যেতে ক্রসিং পেতে অপেক্ষা করতে হবে এয়ারপোর্ট অবধি।

আবার এ ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে একজন রোগীকে হাসপাতালে যেতে হলে ডানে-বামে তাকিয়ে সতর্কভাবেই রাস্তা পার হতে হবে। কারণ এখানে কোনো ফুটওভার নেই। তবে ফুটওভারে ওঠার ইচ্ছা করলে রোগীকে যেতে হবে খিলক্ষেত অথবা বনানীতে। তারপর কয়েক কিলোমিটার ফুটপাথ ধরে এগিয়ে আসতে হবে হাসপাতালের দিকে।

যোগাযোগের এ নিদারুণ বিচ্ছিন্নতায় রোগী পাচ্ছে না ১২ তলা বিশিষ্ট এ সুসজ্জিত হাসপাতাল। স্বল্প পরিসরে আউটডোর সেবা ও সার্বক্ষণিক জরুরি সেবা চালু করলেও প্রকৃত রোগীদের সেবা দিতে পারছে না হাসপাতালটি।

তবে কুর্মিটোলায় কেন এ সুরম্য হাসপাতাল–এমন প্রশ্নের সদুত্তরে স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে জড়িত এক সাবেক সেনা কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানালেন, কুর্মিটোলায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) আছে। জরুরি চিকিৎসার জন্য এখানেই আসতে পারেন রোগীরা। এ ছাড়াও সিএমএইচ রোগীদের কাছে একটি আস্থাও অর্জন করেছে।

এখানে জেনারেল হাসপাতাল স্থাপনের অন্যতম কারণ, একটি বিশেষ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া এবং প্র্যাকটিসের জন্য সাবজেক্ট দরকার ছিল। কিন্তু সিএমএইচ এ তা সম্ভব হচ্ছিল না। তা না হলে এ হাসপাতালটি উত্তরা বা কুড়িলে হলে বেশ ভাল হতো। আশপাশের আবাসিক এলাকার মানুষেরা এখান থেকে পায়ে হেটে বা রিক্সাযোগে সহজেই সেবা গ্রহণ করতে পারতেন। একে বিশেষায়িত হাসপাতালে পরিণত করার সুপারিশও করেন তিনি।

চিকিৎসা সেবায় দেশের সবচেয়ে সুপরিচিত ঠিকানা ঢাকা মেডিকেল কলেজ। এ হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালকে রোগীদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সেখানে ভাল অধ্যাপক চিকিৎসক থাকতে হবে। রোগীরা যখন ভাল সেবা পেয়ে যাবেন, তখনই তিনি আরেকজনকে ওই সেবার কথা জানাবেন। এভাবেই লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার সুনাম আর অবস্থান।

কিন্তু রোগীরা এসে ফিরে গেলে তিনি আরও ৫ জনকে গিয়ে সেবা না পাওয়ার কথা বলবেন। গুণী চিকিৎসকদের সেবায় গড়ে ওঠে একটি ভাল হাসপাতাল। এ জন্য ভাল অধ্যাপক চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। কুর্মিটোলা হাসপাতালকে খুব দ্রুত জরুরি বিভাগের উন্নতি করতে হবে।

হাসপাতালের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, হাসপাতাল চালু করতে হলে ন্যূনতম সেটআপ নিয়ে চালু করতে হবে। উত্তরের রোগীদের ভাল সেবা দিতে হলে হাসপাতালকে খুব দ্রুত পূর্ণাঙ্গ সেটআপ দিতে হবে। এ ছাড়াও দ্রুত জনবল বৃদ্ধি, সার্জারি বিভাগকে সম্পূর্ণরুপে চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মোস্তাফিজুর রহমান। Kurmito-sm2

এদিকে স্থানীয় জনগনের জন্য হাসপাতালে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

অচিরেই হাসপাতালটি বিপুল সংখ্যক রোগীদের সেবার আওতায় আনতে পারবেন বলে দৃঢ় প্রত্যাশা নিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ধীরে ধীরে জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

এ মুহূর্তে হাসপাতালে সব মিলিয়ে ৮০ জন ডাক্তার আছেন। নার্স নিয়োগ হয়েছে ৭১ জন। হেলথ অ্যাসিসটেন্ট ১৮ জন। আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা ৫৬ জন। এ ছাড়াও দ্বায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও আছেন।

জনবল নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির চাহিদা পূরণ হলে যোগাযোগ বা অন্য কোনো ধরনের সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে হাসপাতালটি রোগীদের সেবা দিতে সফল হবে বলে তিনি দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৩
এমএন/এসএইচ/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।