ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাংলাদেশে ঘণ্টায় কিডনি রোগে মারা যান ৫ জন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৪
বাংলাদেশে ঘণ্টায় কিডনি রোগে মারা যান ৫ জন

ঢাকা: বাংলাদেশে ৪০ হাজারেরও বেশি লোক কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এ হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫ জন কিডনি রোগের কারণে মারা যান।

এ দেশে দ্রুত বর্ধনশীল কিডনি রোগ অচিরেই মহামারী আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব ভিআইপি লাউঞ্জে বিশ্ব কিডনি দিবস-২০১৪ উপলক্ষে ‘বয়সের সঙ্গে বাড়ে কিডনি রোগের ঝুঁকি: প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির (ক্যাম্পস) সভাপতি ও ল্যাবএইড হাসপাতালের চিফ কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, কিডনি একটি নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত।

কিডনি বিকল রোগীর চিকিৎসা এতোই ব্যয়বহুল যে এ দেশের শতকরা ৫ শতাংশ লোকেরও এ দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। সাধারণত ৭৫ শতাংশ কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে রোগীরা বুঝতে পারেন না যে, তিনি এ ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত।

ডা. এম এ সামাদ বলেন, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ শুধু কিডনিই বিকল করে না, হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক ও রক্তনালীর রোগের মৃত্যু ঝুঁকি বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। ১৬-১৮ শতাংশ লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি প্রদাহের কারণে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কিডনি বিকল হয়ে থাকে। এ ঘাতক ব্যাধি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় রোগ প্রতিরোধ।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে মাত্র ৭৫ জন কিডনি বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। প্রত্যেক বিশেষজ্ঞকে প্রতিদিন ৭শ’ ও বছর প্রতি মাথাপিছু ২ লাখ ৪০ হাজার রোগী দেখতে হয়। এ রোগের ভয়াবহতা বিবেচনা করে প্রতিরোধে গণ সচেতনতা বৃদ্ধির আহবান জানান তিনি।

কিডনি বিকল প্রতিরোধে সাতটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে ডা. এম এ সামাদ বলেন, ডায়রিয়া ও বমিজনিত পানিশূন্যতা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রসবকালীন ও দুর্ঘটনাজনিত রক্তক্ষরণ রোধ, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথা ও জীবানুনাশক ওষুধ সেবন না করা, ভেজাল খাদ্য পরিহার, সাপে কাটা ও পোকা মাকড়ের কামড়ে আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এবং বিশুদ্ধ পানি পান করলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে কিডনি রোগ বেশি দেখা দিচ্ছে যাদের হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস আছে।

প্রতি হাসপাতালে ভর্তিকৃত ১০ জন রোগীর মধ্যে ৩ জনই কিডনি রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ও বেশি পরিমাণে ব্যথানাশক ও এন্টিবায়োটিক সেবনের ফলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়।

প্যারাসিট্যামল ছাড়া সব ধরনের এন্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ কিডনির ক্ষতি করে। দেশে প্রতি বছর ৪০ হাজারেরও বেশি লোক কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে প্রতি ঘণ্টায় মৃত্যুর হার প্রায় ৫ জন।

ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও কিডনি হাসপাতাল, কিডনি ডায়ালোসিস মেশিন নেই। কিডনি চিকিৎসা ব্যয়বহুল বলে দরিদ্র রোগীরা চিকিৎসা নিতে পারেন না।

তিনি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে কিডনী চিকিৎসায় এগিয়ে আসার আহবান।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র পরিচালক হেলাল উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু ও নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুব আলী, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক আখতার উদ্দিন আহমেদ, শিল্পী আব্দুল জব্বার প্রমূখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫১ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।