ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ভাসন্ আই কেয়ার আসছে বাংলাদেশে

ভাস্কর সরদার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪
ভাসন্ আই কেয়ার আসছে বাংলাদেশে

কলকাতা থেকে: বিশ্বমানের ভাসন্ আই কেয়ার হাসপাতাল আসছে বাংলাদেশে। ভাসন এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আই কেয়ার চেইন হাসপাতাল।

চোখের চিকিৎসায় ভাসন্‌-এ ব্যবহৃত হয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি। তাই ভাসন্ আই কেয়ার হাসপাতাল বিশ্বের অগণিত মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।

চোখ মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর অন্যতম। চোখ না থাকলে এই সুন্দর পৃথিবী কেবলই অন্ধকার এক গ্রহ ছাড়া কিছুই নয়। তবে কৃষ্ণকলির মত কাজল নয়নের অধিকারী না হলেও চোখ নিয়ে সকলেরই সচেতন থাকা উচিৎ।

চোখের যত্ন এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যার আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে কলকাতার কসবা-এর ভাসন্ আই কেয়ার হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ভারত ছাড়িয়ে ভাসন্ আই কেয়ার হাসপাতাল এখন দুবাই ও কলম্বো শাখা খুলেছে। খুব শিগগিরই বাংলাদেশেও শাখা খুলতে যাচ্ছে বিশ্বখ্যাত এই হাসপাতালটি।  

চোখের চিকিৎসায় শুধু ভারতেই নয়, পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে আধুনিক এবং সর্ববৃহৎ চেইন হাসপাতালগুলোর অন্যতম  ভাসান্ আই কেয়ার।   হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অপারেশন্স) অভিনব চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানালেন চোখের সমস্যায় ভাসন চক্ষু হাসপাতাল কি কি ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জটিল রোগের সম্পূর্ণ সমাধান করে আসছে।

ছানি থেকে জটিল সমস্যা, আবার হঠাৎ হওয়া চোখের রোগ থেকে বহুদিনের পুরনো অসুখ-- সব কিছুরই চিকিৎসা করে থাকে ভাসন্ আই কেয়ার হাসপাতাল এবং সেটা সব থেকে আধুনিক, যন্ত্রণামুক্ত এবং নিরাপদ পদ্ধতিতে।

অভিনবের কাছেই জানতে চাইলে তিনি জানান, ঠিক যে বছর ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, সেই ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা হয় এই ভাসন্ গোষ্ঠীর। তারপর থেকে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে হাসপাতালটি মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে ভাসন্ গোষ্ঠীর আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন হাসপাতাল। ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ ভারতের ত্রিচীতে ব্যস্ত রাস্তার ধারের একটি ওষুধের দোকান থেকে আজ ভারতের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী গোষ্ঠী হয়ে ওঠার পেছনে আছে এক বিরাট ইতিহাস।

ভাসন্ প্রথম চক্ষু হাসপাতাল শুরু করে সেই ত্রিচী শহরেই। শুরুর পর থেকেই ব্যাপক সাফল্য। ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আর আজ সেই বিস্তার শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়েছে বিদেশেও।
 
কারণ হিসেবে অভিনব জানালেন, বিরাট সংখ্যক মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের নিজের দেশে বসেই আধুনিকতম চিকিৎসা পাবার ব্যবস্থা করতেই ভাসন্ গোষ্ঠীর এই বিদেশযাত্রা।

কথার মধ্যেই জানতে চাওয়া হয়--ঠিক কি কারণে অন্য কোন হাসপাতালে না গিয়ে ভাসন্‌ চক্ষু হাসপাতালে আসবেন রোগীরা?
সপ্রতিভ অভিনব জোরের সঙ্গে বললেন--সেটি হোল “পরিষেবা”। সঙ্গে অবশ্যই আছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসার সুযোগ।  

তিনি জানালেন, এখানে আধুনিকতম চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে একদিনের মধ্যেই যে কোনো জটিল অস্ত্রোপচার করিয়ে রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। কোনোভাবেই একদিনের বেশি সময় লাগবে না। বিদেশ থেকে আসা রোগীদের কাছে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই আধুনিক ব্যবস্থা তাদের জন্য খুবই উপযোগী।

কি এই দ্রুত সেরে ওঠার কারণ? অভিনবের মতে, অপারেশনের পরে দ্রুত সেরে ওঠা অনেকটাই নির্ভর করে কত ছোট ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তার ওপর। ভাসন হাসপাতালে পৃথিবীর সব থেকে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয় বলেই রোগী অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

ভারতের সবকটি রাজ্যে রয়েছে ভাসন্ আই কেয়ার হাসপাতাল। কেবল পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে এগারটি হাসপাতাল। প্রতিটি হাসপাতালই মানে সমান দক্ষ। ভারত ও অন্যান্য দেশ মিলিয়ে ভাসনের শাখা রয়েছে ১৭০টির বেশি।
 
চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে অভিনব জানান, হাসপাতালে রোগী প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তার দায়িত্ব নিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নাম নথিভুক্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। সমস্যা শুনে অনুসন্ধানকেন্দ্রের সহকারীরা রোগীকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন।
 
বেশ আন্তরিক অভিনব নিজেও। বললেন, প্রথমে হবে নিবন্ধন। সেখানে দেওয়া হবে একটি বিশেষ নম্বরযুক্ত ‘স্মার্ট কার্ড’। তারপর বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তৈরি হবে রোগীর ‘ম্যানুয়াল মেডিকেল রিপোর্ট’। এই রিপোর্ট তৈরি করবেন একজন অপ্টোমেট্রিক বিশেষজ্ঞ। এর পরের ধাপে পরীক্ষা করা হয় চোখের ‘পাওয়ার’ এবং  ‘প্রেসার’।

সব পরীক্ষা হয় হাসপাতালের একই ছাদের নিচে। । এ জন্য রোগীকে কোথাও আলাদা করে যেতে হবে না। বিভিন্ন পরীক্ষা করার পর সেই সব পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে রোগী যাবেন তার চোখের সমস্যা অনুযায়ী বিশেষ ডাক্তারের কাছে। তিনি যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে আরও কিছু পরীক্ষা করতে পারেন বা দরকার না হলে তিনি তার চিকিৎসা শুরু করবেন।

হাসপাতালের মধ্যেই রয়েছে নিজস্ব ওষুধের দোকান। সেখান থেকে অতি সহজেই পাওয়া যায় প্রয়োজনীয় সব ওষুধ। আর যদি দরকার হয় চশমার, তবে তার ব্যবস্থাও আছে হাসপাতালেই। সব থেকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেখানে পরিষ্কার দৃষ্টির জন্য পাওয়া যাবে আধুনিকতম চশমাটি। যার মাধ্যমে দৃষ্টি হয়ে উঠবে স্বচ্ছ এবং উজ্জ্বল।

যদি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়ে তবে কি কোনো বিশেষ ব্যবস্থা আছে? যা অন্য হাসপাতালের থেকে ভাসন্‌কে আলাদা করে?
সপ্রতিভ অভিনব যেন এই প্রশ্নের অপেক্ষাই করছিলেন। তিনি নিজে থেকেই আরও জুড়ে দিলেন: রোগীর যেমন অপারেশন নিয়ে ভয় থাকে, ঠিক আরও একটা প্রশ্ন তাদের মধ্যে থেকে যায়, তিনি যে টাকা খরচ করছেন, তার সত্যিই দরকার কিনা!

এ দুটি বিষয়কে মাথায় রেখেই ভাসন্‌ চক্ষু হাসপাতাল তৈরি করেছে একটি বিশেষ বিভাগ। যেটির নামকরণ করা হয়েছে “কাউন্সেলিং বিভাগ”।
এই বিভাগের উপদেষ্টারা রোগীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। তাকে বুঝিয়ে বলবেন কি তার সমস্যা। কি পদ্ধতি ব্যবহার করে তার চিকিৎসা হবে। এছাড়াও তারা রোগীকে বুঝিয়ে বলবেন কি কি সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কেন তিনি সম্পূর্ণ নিরাপদ।

যদি রোগীর ‘লেন্স’ বা বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে তবে এই উপদেষ্টারা রোগীর সঙ্গে আলোচনা করে তার প্রয়োজনমত ‘লেন্স’ বা সেই প্রয়োজনীয় জিনিসটি বুঝিয়ে বলেন। ফলে রোগীর মন থেকে অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত ভয় কেটে যায়। এবং তিনি এটাও নিশ্চিত হতে পারেন যে খরচ তার প্রয়োজনেই ব্যবহার করা হচ্ছে।

হাসপাতাল ঘুরে খুব অবাক হতে হল। পুরো হাসপাতালে কারো হাতেই কাগজ নেই। না আছে ‘প্রেসক্রিপশন’ না আছে হাসপাতালের পরিচিত পেট মোটা রেজিস্টার অথবা কাগজপত্র নিয়ে হাসপাতালের কর্মচারীদের এই বিভাগ থেকে ওই বিভাগে ছোটা-ছুটির দৃশ্য। এমন কি রোগীরা হাসপাতালের ভেতর ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন তা-ও খালি হাতে।

রহস্যটা ভাঙলেন অভিনব। যে মুহূর্তে রোগী হাসপাতালে প্রবেশ করছেন, সেই মুহূর্তে তার হাতে চলে আসছে স্মার্ট কার্ড। তার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে যেখানে রোগী যাচ্ছেন, সেই বিভাগের প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য “স্মার্ট কার্ড”–এর মাধ্যমে হাসপাতালে প্রতিটি কম্পিউটারে নথিভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এর ফলেই রোগী পরিষেবা পাচ্ছেন অতি দ্রুত। মনে হোল এ যেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস’র স্বপ্নের ‘পেপার লেস’ অফিসের একটি নমুনা।

হঠাৎ চোখে পড়ল চিকিৎসা বিভাগের পাশে একটি ছোট্ট শিশু মহা আনন্দে খেলা করছে। শিশুদের জন্য আছে একটি ছোট্ট খেলার জায়গা। বাবা-মা’র সঙ্গে আসা শিশুরা হাসপাতালের পরিবেশেও তাই স্বাভাবিক।

ভাসন্-এ আছে শিশুদের জন্য বিশেষ বিভাগ। সেখানে দরকার হলেই পরিষেবা পাওয়া যাবে শিশু চক্ষু বিশারদদের। আর পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের বিনা পয়সায় সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়।   সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভাসন্ আই কেয়ার সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও প্রথমবার নিবন্ধন ফি মাত্র ১০০ রুপি। এর মানে এই ১০০ রুপির মধ্যেই ওষুধ এবং চশমা ও অপারেশন বাদে ভাসনের সব সুবিধাই পান রোগীরা।   আর দ্বিতীয়বার চোখের সমস্যা দেখাতে গেলে দিতে হবে মাত্র ৮০ রুপি।

 দিনভর হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে সেখানে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের বিরক্তি চোখে পড়ে নি। রোগীদের চিন্তিত মুখও সেখানে অনুপস্থিত। হাসপাতালটির ইন্টেরিওর ডিজাইন এমন চমৎকারভাবে করা হয়েছে যে, ভেতরে প্রবেশ করলেই মন ভরে যায়। রোগীর কাছে মনেই হবে না যে, তিনি হাসপাতালে আছেন। মনে হবে ঘরে বসেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শুধু চিকিৎসাই নয়, সামাজিক সচেতনতার কাজেও সমানভাবে জড়িয়ে আছে ভাসন্‌। একদিকে আধুনিক চিকিৎসা, অন্যদিকে সামাজিক সচেতনতা--- এই ভাবেই একদিন সমাধান হবে অন্ধত্বের। আর এই চেষ্টাই অবিরত করে চলেছে ‘ভাসন্‌ আই কেয়ার হাসপাতাল’।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।