ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪
দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ অস্টিওপোরেসিসি (হাড়ক্ষয়) রোগে আক্রান্ত। জনসংখ্যার হিসেবে এই রোগীর সংখ্যা চার কোটি ৮০ লাখ।

বিশ্বে প্রতি ৩ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ এ রোগে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন।
 
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। বিশ্ব অস্টিওপোরেসিস দিবস উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। আগামী সোমবার ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপোরেসিসি দিবস পালিত হবে।
 
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম।
 
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, হাড়ক্ষয় রোগ অত্যন্ত সংবেদশীল প্রক্রিয়া। এটি পরিণত বয়সে সামান্য একটু হাড়ক্ষয় ও একই পরিমাণ হাড় তৈরির সমতার ওপর নির্ভরশীল। যদি ক্ষত, পূর্ণ হাড় তৈরি অপেক্ষা বেশি হতে থাকে তা হাড়ক্ষয় রোগের জন্ম দেয়। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে সাধারণত এ রোগ হয়।
 
তিনি জানান, ২১ থেকে ৩৯ বছর বয়সের মধ্যেই পূর্ণ হাড় তৈরি হতে হবে। এটি পিক বোন মাস হিসাবে অভিহিত। অর্থাৎ ওই বয়সে যার হাড় যতো শক্ত হবে, বয়সকালে তার হাড়ক্ষয় রোগ এবং হাড়ভাঙ্গার ঝুঁকি ততো কম হবে।
 
মূল প্রবন্ধে গবেষণা তথ্য তুলে ধরে নজরুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর একজন এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন বর্তমানে হাড়ক্ষয় রোগে ভুগছেন। বিশ্বে আনুমানিক ২০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। এ রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন। এটি নীরব ঘাতক একটি রোগ। একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে তা আর নিরাময় করা যায় না।
 
এক প্রশ্নের উত্তরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুরুষদের তুলনায় নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এ রোগ ব্রেন স্টোক, হৃদরোগ ও ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকেও বেশি কষ্টদায়ক।
 
নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি, গায়ে রোদ লাগানো (সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ১০ মিনিট), ধূমপান ত্যাগ, শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
 
এ রোগে একবার আক্রান্ত হলে তা আর পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। তবে ওষুধ সেবন, ব্যায়াম করা, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সেবনের মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানো যায়। যা রোগের ভয়াবহতা থেকে রোগীকে রক্ষা করে।
 
হাড়ক্ষয় রোগের কারণে অল্প আঘাতে শরীরের হাড় ভেঙ্গে যায়। অনেক সময় কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে বা বেঁকে যাওয়ার ফলে শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়, ফুসফুস সংক্রামণ রোগ বেশি হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যায়।
 
অধ্যাপক নজরুল জানান, বাংলাদেশে ১০০ জনের ওপরে পরিচালনা করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ মানুষের ভিটামিন ডি-এর অভাব রয়েছে। মাত্র তিনজনের শরীরে পরিমিত ভিটামিন ডি আছে।
 
বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির সহ সভাপতি অধ্যাপক সেয়দ আতিকুল হকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক শায়লা খাতুন। বিষেশ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক একে আজাদ খান।
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক শায়লা খাতুন বলেন, জন্ম থেকেই মেয়েরা নেতিবাচক ভারসাম্যে থাকেন। শারীরিক কারণেই নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। নীরব ঘাতক এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভাস অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ।
 
সভাপতির বক্তব্যে রিউমাটোলজি সোসাইটির সহ সভাপতি অধ্যাপক সেয়দ আতিকুল হক বলেন, ৫০ বছরের পর হাড়ক্ষয় রোগ সাধারণ নিয়মে পরিনত হয়। ধূমপানের কারণে হাড়ক্ষয় বেশি হয়। ব্যায়াম, খাদ্যাভাস, শারীরিক পরিশ্রম করা, ধূমপান না করার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
 
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এবারের (২০১৪ সালের) বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্রকৃত পুরুষ তাদের শক্তি গড়ে তোলে ভেতর থেকে’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।