ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নীরব ঘাতক অস্টিওপোরেসিস

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৪
নীরব ঘাতক অস্টিওপোরেসিস

ঢাকা: নীরব ঘাতক অস্টিওপোরেসিস বা হাড়ক্ষয় রোগ। কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়াই মানুষ এ রোগটিতে আক্রান্ত হয়।

আর একবার আক্রান্ত হওয়ার পর কোনো চিকিৎসাতেই এ রোগ থেকে সেরা ওঠা সম্ভব হয় না।
 
সাধারণত নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের জন্য এটি প্রায় কমন রোগে পরিণত হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে পুরুষরাও এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
 
বর্তমানে বাংলাদেশে চার কোটি ৮০ লাখ বা মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ অস্টিওপোরেসিস রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে এক কোটি ৯২ লাখ প্রিয়ড বন্ধ হওয়া নারী। যা মোট আক্রান্ত রোগীর ৪০ শতাংশ।
 
অস্টিওপোরেসিস রোগের কারণে হিপ ফ্রাকচার হয়। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ হিপ ফ্রাকচারে রোগে আক্রান্ত। এ রোগে ৯০ শতাংশই আক্রান্ত হন ৫০ বছরের পরে। নারী ও পুরুষের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনুপাত ৪:৫।
 
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে বর্তমানের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রে ২৪০ শতাংশ এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩১০ শতাংশ বেশি।
 
অস্টিওপোরেসিস কি
২০৬টি হাড় নিয়ে মানুষের শরীর গঠিত। ২১ থেকে ৩৯ বছর বয়সের মধ্যে মানুষের পূর্ণ হাড় তৈরি হয়। এটিকে পিক বোন মাস বলে। পরিণত বয়সে মানবদেহে হাড় ক্ষয়কারী কোষ উজ্জীবিত হয়। উজ্জীবিত হাড় ক্ষয়কারী কোষ নির্দিষ্ট পরিমাণে পুরোনো হাড় খেয়ে ফেলে। এ সময় নতুন হাড় উৎপাদনকারী কোষ উজ্জীবিত হয় এবং সমপরিমাণ (যে পরিমাণ হাড়ক্ষয় হয়েছে) নতুন হাড় তৈরি করে। নতুন হাড় তৈরি হওয়ার পর হাড় উৎপাদকারী কোষ ওই স্থানে নীরবে অবস্থান করে। তবে কোনো কারণে যদি হাড়ক্ষয় নতুন হাড় তৈরি অপেক্ষা বেশি হয় তবে তা অস্টিওপোরেসিস রোগের জন্ম দেয়।
 
অস্টিওপোরেসিস কেন হয়
২১ থেকে ৩৯ বছর বয়সের মধ্যে পূর্ণ হাড় তৈরি হয়। এ সময়ে প্রত্যেক রি-মডেলিং সাইকেল যে পরিমাণ হাঁড় পুনরায় তৈরি হওয়ার কথা ততোটুকু না হলে হাঁড়ক্ষয় বা অস্টিওপোরেসিস অবশ্যম্ভাবী। সাধারণত ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে অস্টিওপোরেসিস হয়। নিয়মিত ব্যায়াম না করা, হাঁটাহাঁটি না করা, ধূমপান করার কারণে অস্টিওপোরেসিস হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
 
অস্টিওপোরেসিস প্রতিরোধের উপায়
এ রোগ প্রতিকার করা সম্ভব না হলেও কিছু নিয়ম মেনে চললে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে হাঁটতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে কমপক্ষে ১০ মিনিট রোদ পোহাতে হবে, প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে, ধূমপান করা যাবে না এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে।
 
অস্টিওপোরেসিস রোগের জটিলতা
অস্টিওপোরেসিস ব্রেনস্টোক, হৃদরোগ ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের চেয়েও বেশি কষ্টদায়ক। এ রোগে আক্রান্ত হলে অল্প আঘাতে শরীরের হাড় ভেঙ্গে যায়। অনেক সময় কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে বা বেঁকে যাওয়ার ফলে শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়। অস্টিওপোরেসিসে আক্রান্ত হলে ফুসফুসে সংক্রামণ রোগ বেশি হয়। অসুখের নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়ে যায় এবং উন্নতি সাধন বাধাগ্রস্থ হয়। জীবনযাত্রার মান কমে যায়। সব মিলিয়ে মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যায়।
 
বাংলাদেশে অস্টিওপোরেসিস রোগ
বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ বা চার কোটি ৮০ লাখ অস্টিওপোরেসিস রোগে আক্রান্ত। তাদের ৪০ শতাংশ বা এক কোটি ৯২ লাখ প্রিয়ড বন্ধ হওয়া নারী। ১০০ জনের ওপর পরিচালিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ মানুষের ভিটামিন ডি’র অভাব রয়েছে। মাত্র তিনজনের শরীরে পরিমিত ভিটামিন ডি আছে।
 
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির সহ সভাপতি ও বিএসএমএমইউ’র বিশিষ্ট অস্টিওপোরেসিস চিকিৎসক অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, অস্টিওপোরেসিসকে বাংলায় হাড়ক্ষয় না বলে অস্থিক্ষয় বলা উচিত। কারণ, হাড়ক্ষয় বলতে হাঁটুর ক্ষয়কে বুঝায়। আর অস্টিওপোরেসিসে শরীরের বিভিন্ন অস্থিক্ষয় হয়। অস্টিওপোরেসিসে একবার আক্রান্ত হলে তা আর পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। তবে ওষুধ সেবন, ব্যায়াম করা, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সেবনের মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানো যায়। যা রোগের ভয়াবহতা থেকে রোগীকে রক্ষা করে।
 
তিনি আরও বলেন, ৫০ বছর বয়সের পর হাড়ক্ষয় রোগ বর্তমানে প্রায় সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। ধূমপানের কারণে হাড়ক্ষয় বেশি হয়। ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম করা, ধূমপান না করার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অস্টিওপোরেসিস রোগের কারণে অল্প আঘাতে শরীরের হাড় ভেঙ্গে যায়। অনেক সময় কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে বা বেঁকে যাওয়ার ফলে শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়, ফুসফুস সংক্রমণ রোগ বেশি হয়।
 
বাংলাদেশ রিউমাটোলজি সোসাইটির মহাসচিব ও বিএসএমএমইউ’র বিশিষ্ট অস্টিওপোরেসিস চিকিৎসক অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হাড়ক্ষয় রোগ অত্যন্ত সংবেদশীল প্রক্রিয়া। এটি একটি নীরব ঘাতক রোগ। কোনো ধরনের উপসর্গ ছাড়াই মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হওয়ার পরেই রোগী বুঝতে পারেন, তার এ রোগ হয়েছে। সাধারণত ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাবে এ রোগ হয়।
 
তিনি বলেন, ২১ থেকে ৩৯ বছর বয়সের মধ্যেই পূর্ণ হাড় তৈরি হতে হবে। এই বয়সে যার হাড় যতো শক্ত বয়সকালে তার হাড়ক্ষয় রোগ এবং হাড়ভাঙ্গার ঝুঁকি ততো কম।
 
তিনি আরও জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, সারা বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর একজন এবং প্রতি পাঁচজন পুরুষের একজন বর্তমানে হাড়ক্ষয় রোগে ভুগছে। বিশ্বে আনুমানিক ২০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। এ রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন। পুরুষদের তুলনায় নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।