ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ঝর্ণাদের ছুটে চলা

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৪
ঝর্ণাদের ছুটে চলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাঙ্গামাটি থেকে ফিরে: তিনি ছুটছেনই। তার এই ছুটে চলা থেমে নেই।

কবে থামবে তা তিনি নিজেও জানেন না। ২০০৩ সাল থেকে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবিকা হিসেবে ছুটে চলেছেন ঝর্ণা বড়ুয়া।

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার মুসলিম পাড়ায় তার সঙ্গে যখন কথা হয় তখনও তিনি কাজে ব্যস্ত। এলাকার মো. হোসেনের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে এসেছেন। ৬০ বছর বয়সী মো. হোসেন জ্বর কাশিতে ভুগছিলেন। খবরটি পেয়ে ঝর্ণা বড়ুয়াই সবার আগে ছুটে এলেন। তার সন্দেহ হলো। কফের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করালেন। ধরা পড়লো যক্ষ্মা।  

যক্ষ্মা আক্রান্ত মো. হোসেন আতঙ্কিত থাকলেও ব্র্যাকের সেবিকা ঝর্ণা বড়ুয়ার সাহস ও  অনুপ্রেরণায় তিনি ডটস এর মাধ্যমে ওষুধ গ্রহণ শুরু করেন। রোগী প্রতিদিন সেবিকা সহযোগিতায় ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে অনেক উন্নতি হয়েছে। এভাবে নিয়মিত ৬ মাস খেলে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন। প্রত্যেক রোগী তাদের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাচ্ছেন।   

রাঙ্গামাটি জেলায় সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে অংশীদার হিসেবে ব্র্যাক ‘জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে মোট ২৯৩৬ জন নতুন রোগী চিহ্নিত হয়- যার মধ্যে শতকরা ৯৭ জন রোগী আরোগ্য লাভ করেছেন। এগুলো সফলতারই পরিসংখ্যান।

তবে এই সফল পরিসংখ্যান তৈরিতে বছরের পর বছর ধরে কাজ করছেন ঝর্ণা বড়ুয়া, জাহানারা বেগমের মতো নিবেদিত প্রাণ সেবিকারা।   

বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে ১১২৫ জন স্বাস্থ্য সেবিকা করছেন। এর সঙ্গে রয়েছেন ২৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মী, কর্মসূচি সংগঠক রয়েছেন ৪৮ জন। সরকারি ১০টি ল্যাব ও ব্র্যাকের ৩১টি ল্যাবের সার্বক্ষনিক যক্ষ্মা কর্মসূচিতে কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এর পাশাপাশি জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সফলতার জন্য নিয়মিত প্রচার প্রচারণা চালানো হয়। নিয়মিত চিকিৎসকদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন সভা করা হয়। গ্রামের ডাক্তার কিংবা পল্লী চিকিৎসকদের ওরিয়েন্টেশন সভাও করা হয়। নিয়মিত সভা করা হয় গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিদের। আরোগ্য লাভকারীদেরকেও অন্যান্য সম্ভাব্য লক্ষণযুক্ত মানুষকে বলার জন্য ওরিয়েন্টেশেন দেওয়া হয়।  

বিভিন্ন নারী সংগঠনের সদস্যদের ওরিয়েন্টেশন করানো হয়। শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের ওরিয়েন্টেশন দেওয়া হয়। স্থানীয় কেবল টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচারনা চালানো হয়। গণনাটক প্রদর্শনী ও লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার, সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডও ব্যবহার করা হয়।

যক্ষ্মা কর্মসূচি কাজে রয়েছে ৩২ জন ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, একটি ডটস কর্নার (সদর হাসপাতাল), একটি জিন এক্সপার্ট কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স, একটি বক্ষ্মব্যাধি ক্লিনিক, একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সঙ্গে রয়েছে জেলা সদর হাসপাতাল।    
 
ব্র্যাকের রাঙ্গামাটি জেলা ম্যানেজার মো: জামাল উদ্দিন ভূঞা বাংলানিউজকে বলেন, এক ঝাঁক নিরলস কর্মী ও নিয়ম শৃঙ্খলা প্রতিপালনের ফলেই রাঙ্গামাটি জেলায় যক্ষ্মা নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়েছে।   
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা নভেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।