ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনে গেলে চোখে পড়ে রাস্তার দুই পাশে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স।
দুই হাজার ৬শ’ শয্যার হাসপাতালটিতে গড়ে প্রতিদিন রোগী থাকে সাড়ে তিন হাজারের মতো।
ঢামেক হাসপাতালের যানবাহন শাখার দায়িত্বে রয়েছেন নান্নু মিয়া। এ বিভাগে কর্মরত ৯ জনের মধ্যে ৮ জনই অ্যাম্বুলেন্স চালক।
শনিবার (০৫ ডিসেম্বর) নান্নু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রায় ১৪ বছর আগে কেনা হয়েছিল। এর মধ্যে বার্ন ইউনিটে বরাদ্দ দেওয়া আছে ২টি এবং অন্য ওয়ার্ডের রোগীদের জন্য ৪টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তবে বর্তমানে বিকল হয়ে আছে ২টি। মেরামত কাজ প্রায় শেষের দিকে, শিগগির ফিরিয়ে আনা হবে।
হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী, রোগীদের আনা-নেওয়ার কাজে অ্যাম্বুলেন্সগুলো রাজধানীর বাইরে যায় না। পাশাপাশি চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে মাঝে মাঝে চিকিৎসকদের পরিবহনেও ব্যবহার করা হয় এসব অ্যাম্বুলেন্স।
হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী চাঁন মিয়া। প্রায় পাঁচ বছর আগে তিনি অবসরে যান। হাসপাতালের গেটে রাখা সারি সারি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে তারও রয়েছে একটি।
তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনে মোট ৬৫টি অ্যাম্বুলেন্স থাকে। এসব অ্যাম্বুলেন্সের মালিক হাসপাতালের কোনো না কোনো বিভাগেরই কর্মচারী। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী ওসমান আলী, দিনার ওরফে দিনা, আলমগীর, জামাল হোসেন-কেউ ব্যাংক ঋণ নিয়ে, কেউ বা জমি বিক্রি করে অ্যাম্বুলেন্স কিনেছেন।
চাঁন মিয়া বলেন, আমাদের একটি সমিতি করার চিন্তা করছি। আপাতত ‘রোড খরচ’ বাবদ সপ্তাহে ২শ’ টাকা চাঁদা আদায় করি।
রোগীদের অভিযোগ, এসব অ্যাম্বুলেন্সের সহকারী চালকরা (হেলপার) অপেক্ষা করেন, কখন রোগী মারা যাবে এবং রোগী মারা গেলে অনেক সময় বাধ্য করা হয় তাদের অ্যাম্বুলেন্স নিতে।
এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। অনেক অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে যেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে অনুমোদন ছাড়াই মাইক্রোবাস কেটে তৈরি করা হয়েছে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে চাঁন মিয়া বলেন, দু’একটি অ্যাম্বুলেন্স মাইক্রোবাস কেটে তৈরি করা হয়েছে। তবে সমিতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো সরিয়ে ফেলা হবে।
ইতোমধ্যে সহকারী চালকদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন হাসপাতালের ওয়ার্ডে অবস্থান না নেন। সমিতি হওয়ার পরে এ প্রবণতা একেবারে বন্ধ করা সম্ভব হবে। রোগীরা দরদাম করে পছন্দ অনুযায়ী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নেবেন।
অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াও হাসপাতালের গেটে থাকে ২০ থেকে ২৫টি ট্যাক্সি এবং প্রাইভেটকার।
ট্যাক্সি ও প্রাইভেট কার মালিক সমিতির সভাপতি হারুন ভাণ্ডারি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন সিয়াম হোটেলের বিপরীত পাশে রয়েছে সমিতির একটি কার্যালয়ও।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক বি. জেনালের মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালের মোট ৬টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি সাধারণ রোগীদের জন্য এবং ২টি বার্ন ইউনিটের জন্য। শিগগিরই আরও অ্যাম্বুলেন্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে।
চিকিৎসকদের পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসকদের পরিবহনের নির্দেশ দেওয়া আছে। একজন জটিল রোগী দ্রুত অস্ত্রোপচার দরকার, সেক্ষেত্রে রাতে চিকিৎসককে বাসা থেকে নিয়ে আসা হয়।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সহকারী চালকরা রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সংস্কার অভিযান চলছে। শিগগির এসব বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
এজেডএস/এটি/এমজেএফ/এএসআর