ঢাকা: ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) কার্ডিয়াক সেন্টারে জটিল হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের বিনামূল্যে ওপেন হার্ট সার্জারি ও ইন্টারভেনশন করা হচ্ছে। এ সুযোগ পাচ্ছে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।
গত শনিবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে এই চিকিৎসা শুরু হয়েছে। চলবে আগামী শনিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত। এরইমধ্যে ২৪ শিশুর কার্ডিয়াক অপারেশন (বুক কেটে) ও ৩৫ শিশুর কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশন (বুক না কেটে) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে (১০ ডিসেম্বর) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিএমএইচ-এর কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ফসিউর রহমান।
তিনি বলেন, সৌদি আরবের শিশু হৃদরোগের চিকিৎসকরা পরিচালিত ‘লিটল হার্ট’ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিএমএইচ’র শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে এ চিকিৎসা পরিচালিত হচ্ছে। এতে অর্থায়ন করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ‘মুনতাদা এইড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, সৌদি আরবের ‘লিটল হার্ট’ এর পক্ষে ২৪ সদস্যের চিকিৎসক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডা. জামিল আব্দুল আজিজ-আল-আতা। তিনি মিশনে ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া এতে কার্ডিয়াক সার্জন হিসেবে রয়েছেন ডা. মোহাম্মদ সিহাতা। মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে ‘লিটল হার্ট’র চলতি মিশন তৃতীয়বারের মতো জানিয়ে তিনি বলেন, এর আগে গত বছরের অক্টোবর ও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ১২৩ জন হৃদরোগী শিশুর ওপেন হার্ট সার্জারি ও ইন্টারভেনশন করা হয়।
ফসিউর রহমান জানান, সৌদি আরবের এই মিশনের সঙ্গে সিএমএইচ থেকে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মুসা খান ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নূরুন নাহার ফাতেমা।
ডা. নূরুন নাহার ফাতেমা বলেন, সিএমএইচ থেকে ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে একটি গবেষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, আমাদের দেশে প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে ২৫ জন শিশু নানা জটিলতা নিয়ে জন্ম নেয়। এর বড় একটি অংশ হলো শিশুরা হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নেয়। এসব জটিল রোগের অনেকগুলো চিকিৎসার মাধ্যমে সফলতা আসে। হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরাও চিকিৎসার মাধ্যমে সাধারণ স্বাভাবিক শিশুর মতো ফিরে আসতে পারে।
ডা. মুসা খান বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম হৃদরোগের চিকিৎসা শুরু হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটউটে। এরপর ১৯৯০ সাল থেকে সিএমএইচ-এ চিকিৎসা শুরু হয়। বর্তমানে দেশে মোট ২৭টি হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে চারটি সরকারি, দু’টি স্বায়ত্তশাসিত ও ২১টি বেসরকারি হাসপাতালে এ চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘লিটল হার্ট’ বাংলাদেশের দরিদ্র হৃদরোগী শিশুদের চিকিৎসার জন্য এই মিশন নিয়ে আসায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
পাশাপাশি সরকারি পদক্ষেপের সঙ্গেদেশের বিত্তবান ব্যক্তিদের এই সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিএমএইচ-এর চিফ সার্জন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুন্সী মো. মুজিবুর রহমান, অ্যাকটিং চিফ ফিজিশিয়ান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ রুহুল আমিন, ‘লিটল হার্ট’ চেরিটি প্রোগ্রামের প্রধান ডা. জামিল আব্দুল আজিজ-আল-আতা ও ডা. মোহাম্মদ সিহাতা, ‘মুনতাদা এইড’ এর জনসংযোগ কর্মকর্তা কবির মিয়া প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
টিএইচ/এএ