চর্বি খাওয়া মানেই মৃত্যুকে কাছে ডেকে আনা! এইতো ছিলো এতদিনকার কথা। কতো কিই না বলা হয়েছে! আর্টারিতে ব্লক হবে, হার্ট অ্যাটাক হবে... আরও কত কী? আর পাস্তাকে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে দেখা হয়েছে।
কিন্তু এই তত্ত্বের বাইরে কথা বলছেন এখন গবেষকরা। আর চর্বিকে এখন মানুষের শক্তির অন্যতম উৎস বলে জ্ঞান করছেন। চর্বিকে তো রিতিমতো ওষুধ বলতেও ছাড়ছেন না তারা।
যুক্তরাজ্যে একটি গবেষণা দলের নেতৃত্বে ড. অসীম মালহোত্রা। তার মতে, চর্বি হৃৎযন্ত্রের সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তার দাবি পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ পান করলে আপনি বরং হৃদরোগ আর অন্তত দুই ধরনের ডায়াবেটিস থেকে রেহাই পাবেন।
মেন’স হেলথ নামের ম্যাগাজিনে এ নিয়ে তার লেখাও ছাপা হয়েছে। তাতে নিজের এই বিতর্কের উদ্রেককারী বক্তব্যের পক্ষে দাঁড়িয়ে কিছু ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
মালহোত্রা তার অন্য অনেক সকালের মতো একটি সকালের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আজও আমি নাস্তায় তিন-ডিমের অমলেট খেয়েছি নারকেল তেলে ভেজে। সঙ্গে ছিলো পূর্ণ চর্বিযুক্ত পনিরের গুড়ো ছেটানো। আর পুরো ননীযুক্ত দুধসহকারে এক মগ কফিও সাবাড় করেছি। সন্ধ্যায় সালাদের প্লেটে জলপাইয়ের তেলটা একটু বেশিই ঢেলে নেই, আর গোটা দিন বাদামের ওপরেই থাকি বলতে পারেন। ’
তিনি বলেন, ‘মোদ্যা কথা চর্বি আমি খেতে কম খাই না, আর নিজে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বলতে পারি, অনেকের কাছে অস্বাভাবিক ঢেকলেও আমি কিন্তু বেশ ভালোই আছি। ’
মালহোত্রা বলেন, চর্বি আমাদের আর্টারিতে লেপ্টে যায় আর জমাট বেধে আটকে দেয়, এই তো বছর বছর ধরে চিকিৎসকরা বলে আসছেন। আর আমরাও তাতে বিশ্বাস করে আসছি। আর অবধারিতভাবেই আমরা সবাই বছর গুলো কাটিয়ে দিচ্ছি পূর্ণ চর্বিযুক্ত খাদ্য ছাড়া। স্রেফ লো ফ্যাট নির্ভর হয়ে থাকছি এই আশায় যে এতেই আমাদের শরীরখানা ভালো থাকবে।
কিন্তু আমি বলবো, আমরা বরং এটা করে কিছু ক্ষতিই করে ফেলেছি, যার কথা কেউ বলে না। আমি নিশ্চিত করে বলছি, ওইসব কম চর্বির খাদ্য আপনার ওজন কমানোয় ভূমিকাতো রাখেই না, বরং তার উল্টোটা করে।
আমি আরও এগিয়ে গিয়ে বলতে চাই, যুক্তরাজ্যে ১৯৭৭ সালে এই ধরনের চর্বিযুক্ত খাদ্য বন্ধ করার যে পরামর্শ দেওয়া শুরু হয়, তারপর থেকে গোটা জাতি বরং মেদেই আক্রান্ত হতে শুরু করে। তারই ফল আজ মহামারি আকারে দেখা যাচ্ছে।
কথাগুলো শুনতে একটু বেশি কড়া শোনাচ্ছে বটে, কিন্তু এতো গবেষণা প্রসূত, বলেন ড. অসীম মালহোত্রা।
তিনি বলেন, আমার রোগীদের আজকাল খুব খুব চর্বিযুক্ত খাবার খেতে বলি। যাদের অনেকেরই হৃদরোগ গুরুতর পর্যায়ে। কম চর্বির খাবারের ঝামেলা এড়াতেই এই উপদেশ। অনেকেই শুনে হা হয়ে যায়। কিন্তু গবেষণা বলছে, অনেক ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে কলেস্টেরলের স্তর কমে গেলে তার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হতে পারে, আর ষাটোর্ধ কারো শরীরে উচ্চমাত্রার কলেস্টেরল তার মৃত্যুঝুঁকি কমায়।
প্রথমেই বলে নেই, দিন কয়েক আগে আমিও কিন্তু ওই একই কথা বলতাম, শরীরে চর্বি কম থাকলে শরীর ভালো থাকবে। তখন আমার নিজের খাদ্যাভ্যাসও ভিন্নরকম ছিলো। সকালে সিরিয়াল, টোস্ট আর কমলার জুস খেতাম, দুপুরের খাবারে পানিনি আর রাতে পাস্তা। এর বাইরে খুব একটা যেতামই না।
কিন্তু শরীরের জন্য চাই ভালো যুৎসই খাবার। আমি নিয়মিত দৌড়াই, ব্যায়াম করি। তার পরেও ভুড়িটা কিন্তু বলের আকারে চর্বি জমিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে কারণে আমি কিন্তু খাওয়া বন্ধ করে দেইনি।
২০১৩ সালে একদল শিক্ষাবিদ সত্তুরের দশকের গোড়ার দিকে সিডনি ডায়েট হার্ট স্টাডি নামে প্রকাশিত গবেষণা লব্দ জ্ঞানের ওপর বিশ্লেষণ শুরু করেন। তারা দেখলেন হৃদরোগাক্রান্ত যে রোগীরা মাখন বাদ দিয়ে মার্জারিন খেতে শুরু করলো তাদের মৃত্যুহার বেড়ে গেলো। অথচ তারা তাদের শরীরের ১৩ ভাগ কলেস্টেরল কমেও গিয়েছিলো।
২০০১ সালে হনুলুলুতে একটি হৃদরোগ বিষয়ক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয় ষাটোর্ধদের ক্ষেত্রে শরীরে কলেস্টেরলের মাত্রা কমে গেলে তার বরং উল্টো ফল হয়।
সবাই বিষ্মিত! তাই নয়? সত্যি কি শরীরে কম কলেস্টেরল শরীরের ভেতরকার উন্নয়নে কাজ করতে পারে না, বরং অন্য বিষয়গুলোতে ভূমিকা রাখে যেমন এতে আপনার কোমর পাতলা হবে।
বরং এটাই বলা হচ্ছে, পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলে তা হৃদরোগে আক্রান্তদের আর অন্তত দুই ধরনের ডায়াবেটিস আক্রান্তদের সুবিধা দেয়।
২০১৪ সালে ক্যামব্রিজ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল একটি গবেষণায় দেখিয়েছে দুগ্ধজাতীয় খাবার থেকে আসা স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের প্রবাহে থাকলে তা দুই ধরনের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ থেকে শরীরকে মুক্ত রাখে।
এর মানে হচ্ছে কেউ হালুম হালুম করে পনির খেতে বলছে না তবে পরিমিত পরিমানে পনির, মাখনসহ দুগ্ধজাতীয় খাবার ও চর্বি অবশ্যই খাওয়া যাবে। যাতে শরীর সুস্থ্য থাকবে, আয়ু বাড়বে।
এই এই গবেষণায় এও দেখা গেছে চিনি, অ্যালকোহল আর শ্বেতসার জাতীয় খাবার আপনার শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়, যা অনেক ঘাতক ব্যাধীর কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশ সময় ০৯০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
এমএমকে