ঢাকা: দেশে মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার সংকটও। এক সময়ের মানসিক রোগীকে ‘পাগল’ হিসেবে চিহ্নিত করার মানসিকতায় পরিবর্তন আসায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৬ সালের তথ্যচিত্রে দেখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানে জনবল সংকট চরমে। দেশে এক লাখ জনসংখ্যার সাপেক্ষে মাত্র দশমিক পাঁচ (০.৫) জন জনশক্তি রয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের প্রায় ২২০ জন, অর্থাৎ প্রতি এক লাখ জনের সাপেক্ষে চিকিৎসক রয়েছেন ০.১৩ জন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সংখ্যা ৫০ জন। অর্থাৎ এক লাখ জনের সাপেক্ষে ০.০৩ জন। সাইকিয়াট্রিক সোশ্যাল ওয়ার্কার রয়েছেন ৭ জন। যা এক লাখ জনের সাপেক্ষে ০.০০৪ জন। অকুপেশনাল থেরাপিস্ট রয়েছেন মাত্র ৩ জন। যা এক লাখ জনের সাপেক্ষে ০.০০২ জন।
তথ্যচিত্রে দেখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাধারণ চিকিৎসক রয়েছেন ১০ হাজার ৩০ জন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন ৯ হাজার ৪শ’ জন। হাসপাতালে কর্মরত সেবিকা রয়েছেন ৩৮৮ জন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স রয়েছেন ৪ হাজার ৫শ’ জন।
দুর্যোগ পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাধারণ চিকিৎসক রয়েছেন ৬০ জন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ১৬৮ জন এবং এনজিও কর্মী ৭২ জন।
সেবা দেওয়ার চিত্রও হতাশাজনক। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় ইনস্টিটিউট রয়েছে মাত্র ১টি। রাজধানী ঢাকার এই ইনস্টিটিউটে ২শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালও রয়েছে।
দেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতালটি পাবনায় অবস্থিত। ৫শ’ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালের শয্যা এক লাখ জনসংখ্যার জন্যে ০.৪টি।
শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্তবিভাগ রয়েছে একটি, সাইকিয়াট্রিক চাইল্ড গাইডেন্স ক্লিনিক রয়েছে ২টি, মাদকাসক্তি বিষয়ক চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে ১৬৮টি। এর মধ্যে ৪টি সরকারি এবং ১৬৪টি বেসরকারি। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সরকারি খরচ স্বাস্থ্য বাজেটের ০.৪৪ শতাংশ।
দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সংকট প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক মোহিত কামাল বাংলানিউজকে বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রতি লাখ মানসিক রোগীর জন্যে যে সংখ্যক চিকিৎসক ও সেবার সুযোগ রয়েছে, তার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করলে বাইনোকুলার দিয়ে দেখতে হবে। উন্নত বিশ্বে কর্মীদের হতাশা দূর এবং উজ্জীবিত করতে এখন কর্মক্ষেত্রেও মানসিক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার পরিবারিক জটিলতা থেকে সৃষ্ট মানসিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনো মানসিক রোগের বিষয়টি গোপন রাখা হয়। মানসিক সমস্যায় কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও তাকে ‘পাগল’ সম্বোধন করা হয়। এ অবস্থা দূর করতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। একই সঙ্গে প্রয়োজন আরো বেশি চিকিৎসক, পরামর্শক তৈরির জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
এমএন/এটি