স্ট্রোক কি?
সাধারণত রক্তনালী দুর্ঘটনার কারণে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেলে বা হারিয়ে গেলে তাকে স্ট্রোক বলে। এটা যে কারো ক্ষেত্রে যে কোন সময়ে হতে পারে।
একজন ব্যক্তি স্ট্রোকে কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে সেটা বোঝা যায় তার মস্তিষ্কের কোন জায়গায় স্ট্রোক হয়েছিল এবং সেখানে ক্ষতের পরিমাণ কতখানি তা দেখে। এটা স্ট্রোকের পরে এমআরআইতে ধরা পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ কারো অল্প পরিমাণে স্ট্রোক হলে তার সামান্য কিছু সমস্যা যেমন হাতে বা পায়ে অস্থায়ীভাবে দুর্বলতা দেখা যেতে পারে। কেউ বড় ধরণের স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তার স্থায়ীভাবে দেহের এক পাশ অবশ হয়ে যেতে পারে, কথা বলার সক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, একজন স্ট্রোক রোগীর স্ট্রোকের পরে প্রথম ২-৩ সপ্তাহ ঝুঁকি থাকে পুনরায় স্ট্রোক করার, এ সময় তাই রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হয়। এরপর রোগীকে সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা (মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম এপ্রচ) যেমন- মেডিসিন, অকুপেশনাল থেরাপি, ফিজিওথেরাপি, স্পিচ এবং ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, প্রয়োজনে কাউন্সেলিং প্রদান করা হলে ৩-৪ মাসের মধ্যে ৯০-৯৫ ভাগ উন্নতি আসে।
স্ট্রোকের ধরন:
স্ট্রোক প্রধানত দুই ধরনের হয়। যেমন-
১) Ischemic Stroke:
রক্ত নালীর ভিতর দিয়ে রক্ত পরিবহণের সময় যদি কোন রক্তজমাট বাঁধা সৃষ্টি হয় তখনি তাকে Ischemic Stroke বলে। এই কারণে রক্ত মস্তিস্কে পৌঁছায় না। এই ধরণের স্ট্রোকের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি। প্রায় শতকরা ৮৭ ভাগ স্ট্রোক এই ধরণের হয়ে থাকে।
২) Hemorrhagic Stroke:
মস্তিষ্কের ভিতরে দুর্বল কোন রক্ত নালী ফেটে গেলে বা ছিদ্র হয়ে গেলে তাকে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক বলে। এক্ষেত্রে রক্ত মস্তিষ্কের ভিতরে বা আশেপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে। তাছাড়া চাপ সৃষ্টি করে কোন অংশ ফুলে যেতে পারে, মস্তিষ্কের কোষ বা টিস্যুসমূহ ক্ষয়ে যেতে পারে।
৩) Transient Ischemic Attack (TIA):
এছাড়াও আরেক ধরণের স্ট্রোক দেখা যায়। যখন মস্তিস্কে রক্তসরবরাহ স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং তা ২৪ ঘণ্টারও কম সময় স্থায়ী হয় তাকে ট্রান্সেমিক ইস্কেমিয়া এটাক বলে। এটা মস্তিস্কে কোন স্থায়ীভাবে ক্ষতি সৃষ্টি করে না তবে তারা স্ট্রোক করার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঝুঁকি হিসেবে সংকেত প্রদান করে। সুতরাং কেউ এতে আক্রান্ত হলে কোনভাবেই অবহেলা করবেন না।
স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণসমূহ:
স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার পরে সাধারণত যে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় সেগুলো হল- হঠাৎ দেহের এক পাশের মুখ, হাত অথবা পা দুর্বল কিংবা অবশ হয়ে যাওয়া। হঠাৎ করে বিভ্রান্তিতে ভোগা, কথা বলতে বা কোন বিষয় বুঝতে অসুবিধা অনুভব করা। হঠাৎ করে এক চোখ কিংবা দুই চোখ দিয়ে দেখতে অসুবিধায় পড়া। হাঁটতে অসুবিধা হওয়া, মাথা ঘোরা, ভারসাম্য অথবা সমন্বয় হারিয়ে যাওয়া হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়াই মারাত্মক মাথা ব্যথা অনুভূত হওয়া।
লেখক পরিচিত:
শ, ম, ফারহান বিন হোসেন
ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট,
অকুপেশনাল থেরাপি বহির্বিভাগ
সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্যা প্যারালাইজড (সিআরপি),
মিরপুর, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৬৮৫৬৫৬১৯৯
ই-মেইলঃ farhan_crp@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ২২৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
আরআই