বাংলাদেশের গণমাধ্যম গুলোতে প্রায়ই ভায়াগ্রা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সব সংবাদের আধিকাংশই নেতিবাচক এবং তথ্য নির্ভর না হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
ভায়াগ্রাকে প্রায়শঃই যৌন উত্তেজক ঔষধ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু এই ধারনাটি আদৌ সঠিক নয়। ভায়াগ্রা (সিল্ডেনাফিল) এবং সিয়ালিস (টাডালাফিল) জাতীয় ঔষধ গুলোতে যৌন উদ্দীপক কোন উপাদানই থাকেনা। ভায়গ্রা এবং সিয়ালিস ব্যাবহার করা হয় ইরেকটাইল ডিসফাংশন রোগের প্রতিকারে। এই রোগটিকে প্রচলিত বাংলায় ধ্বজভঙ্গ বলা হয়ে থাকে। ভায়াগ্রা পুরুষাঙ্গে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে তার দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে। ফলে যৌন মিলনে স্থায়ীত্ব বাড়ে এবং তৃপ্তিও পূর্ণতা পায়। যৌনতা চিন্তা, শৃঙ্গার কিংবা এ ধরনের কোন যৌন উত্তেজনা ছাড়া ভায়াগ্রা কিংবা সিয়ালিস আপনা আপনি কাজ করেনা। বরং এই ঔষধ গুলো পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে সফল যৌন মিলনে সহায়তা করে মাত্র। সুতরাং ভায়াগ্রাকে যৌন উত্তেজক হিসাবে আখ্যায়িত করা একেবারেই বিভ্রান্তি প্রসূত।
কেউ কেউ না জেনেই ভায়াগ্রাকে নেশা উদ্রেককারী মনে করেন। কিন্তু এতে কোন নেশা উদ্রেককারী উপাদান নেই। সুতরাং এর ব্যাবহারে নেশাগ্রস্থতা কিংবা নির্ভরশীলতার প্রশ্ন উঠেনা।
স্বামী – স্ত্রীর যৌন সম্পর্কের সাফল্য শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করে। তবে অন্যতম প্রধান পূর্ব শর্ত হচ্ছে পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তা। স্বামীর পড়ন্ত বয়স, স্ত্রীর সাথে বয়সের প্রচুর ব্যাবধান, বিষন্নতা (ডিপ্রেশন), মনোমালিন্য, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে পুরুষাঙ্গের দৃঢ়তা নষ্ট হয়ে ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে। তার প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে ভায়াগ্রা কিংবা সিয়ালিস। ভায়াগ্রা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের যৌন জীবনে ইতিবাচক বৈপ্লবিক পরবর্তন এনেছে। স্বামীর যৌন সামর্থের দূর্বলতায় হতাশ হয়ে যে সব নারী পরগামীতা বা বহুগামীতার আশ্রয় নেয় ভায়াগ্রা তাদের সে পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্বামী – স্ত্রীর যৌন মিলনকে পূর্ণতা দিতে ভায়াগ্রা এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। সে জন্য ভায়াগ্রা সম্পর্কে নেতিবাচক ও ভ্রান্ত প্রচারনা বন্ধ করা আবশ্যক।
তবে এ প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো যে ভায়াগ্রা ব্যাবহার সবার জন্য উপযোগি নয়। যাদের অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ কিংবা হৃদরোগ আছে তাদের জন্য ভায়াগ্রা ব্যাবহার করা বিপদজনক। তাই জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে খোলা বাজারে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ভায়াগ্রা বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তবে স্বামীর পুরুষাঙ্গের দূর্বলতা জনিত কারনে স্বামী – স্ত্রীর যৌন মিলনের সমস্যা প্রতিকারের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত চিকিৎসাকের ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যাক্তির কাছে ভায়াগ্রা সরবরাহ নিশ্চিত করা আবশ্যক। বৈধ ভাবে ক্রয়ের সুযোগ থাকলে কালোবাজারে ভায়াগ্রার ব্যাবসা আপনা আপনিই কমে যাবে। তা ছাড়া ভায়াগ্রা যে কোন যৌন উত্তেজক বা নেশার উদ্রেককারী ঔষধ নয় এই তথ্যটির ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে এবং হৃদরোগ ও অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপে তার ক্ষতিকর প্রভাবের কথা জনসাধারনকে অবহিত করে ভায়াগ্রার অনাবশ্যক ব্যবহার অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।
আধুনিক সমাজে অন্ন বস্ত্র আর বাসস্থানের মতোই সার্থক যৌন মিলন প্রাপ্ত বয়স্ক নর নারীর একটি মৌলিক অধিকার হিসাবে বিবেচিত। এই অধিকার নিশ্চত করার লক্ষ্যে যথাযথ নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে ও সঠিক প্রেসক্রিপশ্ন সাপেক্ষে যথোপযুক্ত ব্যাক্তির কাছে ভায়াগ্রা সরবরাহ নিশ্চিত করা তাই অত্যাবশ্যক। এই প্রসঙ্গে সঠিক নীতিমালা প্রনয়নের দায়িত্ব যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের, এ বিশয়ে জন সচেনতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে সরকারের নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করার প্রাথমিক দায়ীত্বটি কিন্তু চিকিৎসক সমাজের। এ প্রসঙ্গে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও যৌনতা (সেক্সউলিটি) বিশেষজ্ঞদের যথাযথ ভূমিকা এখন সময়ের দাবি। ভোক্তা সাধারনেরও দায়িত্ব রয়েছে নিজেদের অধিকারের বিষয়টি তাদের চিকিৎসকদের মাধ্যমে হলেও সরকারের নীতি নির্ধারক মহলে তুলে ধরা।
লেখকঃ অষ্ট্রেলিয়ায় কর্মরত ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান, অনাবাসিক অধ্যাপক, ঢাকা কম্যিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ
Email: shuvo.sharif@gmail.com