বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মামুন মোর্শেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
‘রাত ১২টার পর থেকেই এক ও সাত নম্বর ওয়ার্ডে যেসব রোগী ফিরে আসছেন তাদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ’
সকালের মধ্যে সব রোগী হাসপাতালে পুনরায় চলে আসবেন বলে জানান ডা. মামুন মোর্শেদ।
এর আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জিএম সালেহ উদ্দিন বলেন, বিকেল ৫টা ৫০মিনিটে তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৭ টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ডাক্তার,শিক্ষক, শিক্ষার্থী, নার্স, পুলিশ, র্যাব সবাই তাৎক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করেছে।
পড়ুন>>ঢামেক হাসপাতালে সোহরাওয়ার্দীর আড়াইশ রোগী
‘যখন অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়, তখন প্রায় ১১০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আধা ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই সকল রোগীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে বাইরে নিরাপদে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। ’
অগ্নিকাণ্ডের সময় শিশু ওয়ার্ডের ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকলেও কেউ হতাহত হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, আইসিইউ-তে ১০জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এ ঘটনায় হাসপাতালে কোনো রকম হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এখন ইমার্জেন্সি সার্ভিস চালু আছে। রাতের মধ্যে সীমিত আকারে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে। রোগীদের প্রাথমিকভাবে সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
জিএম সালেহ উদ্দিন বলেন, আশেপাশের সব অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তারা সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি থাকছেন। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগেই আমাদের ফায়ার সার্ভিস হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে কিভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালাবে তার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলো। সেটি আজ কাজে লেগেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, আমরা সবার প্রতি তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দিয়েছি, যেকোনো সহযোগিতা প্রদানের জন্য।
‘অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য’
এদিকে হাসপাতালে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।
ব্রিফিংয়ের শুরুতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন বলেন, আগুনের সূত্রপাত হয়েছে হাসপাতালে তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে।
তবে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, আগুন সাধারণত নিচের দিক থেকে উপরের দিকে যায়। এই বিষয় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি, এক্সপার্টরা কাজ করছেন। তদন্ত শেষ হলে আগুনের সূত্রপাতের সঠিক স্থান সম্পর্কে জানা যাবে।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানিয়েছিলেন, নিচতলায় ওষুধের স্টোররুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, খবর পেয়ে দ্রুতই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। আগুন সব সময় নিচের দিক থেকে উপরের দিকে যায়। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তবে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, হাসপাতালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খুব ভালো ছিল। অনেকগুলো একজিট গেট ছিল, ফলে রোগীরা খুব দ্রুতই বের হতে পেরেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রথমে আমরা সরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছি। যে বিভাগের রোগী তাদের সেসব বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথমে বলেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে নির্দেশনার অভাবে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভাররা বেশিরভাগ রোগীকেই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেছেন। তারপরও আমরা সেখানে চাপ হলে রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।
‘সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রাতের মধ্যেই আংশিক নয়, বেশিরভাগ অংশই সেবা চালু করা সম্ভব’ দাবি করে তিনি বলেন, শুধুমাত্র অগ্নিকাণ্ডের স্থানটুকু ছাড়া প্রায় পুরো হাসপাতাল এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে। তবে রোগীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী যেসব হাসপাতলে গেছেন সেখানেই সেবা নিতে পারবেন। অথবা তারা চাইলে তাদের ফেরত নিয়ে আসা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
এমএএম/পিএম/এজেডএস/এমএ