শনিবার (২০ এপ্রিল) রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অডিটোরিয়ামে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও এনজিও কর্মীদের উপস্থিতিতে অ্যাডভোকেসি সভায় এসব কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি সভাটির আয়োজন করে।
‘বর্তমানে যে ওষুধটা আছে সেটার তেমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকলেও অনেকবার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হবার কারণে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। রাঙামাটিতে অনেক রোগী ১০ থেকে ১৫ বার ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। মোদ্দা কথা ম্যালেরিয়া হয়নি এমন লোক পাওয়া দুষ্কর ছিল। ওষুধের ফলে মানুষের মস্তিষ্ক আগের মতো কাজ করে না। তাছাড়া আরো অন্যান্য রোগেও ভুগতে দেখা যায় তাদের।
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হওয়ার কারণে তাদের ম্যালেরিয়া কম হয় উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, উপজাতিদের শারীরিক গঠন অনুসারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম বেশি শক্তিশালী। তাই তাদের ম্যালেরিয়া কম হয়। তারা পাহাড়ে থেকে অভ্যস্ত অনেক আগে থেকে। তাছাড়া পাহাড়ের উপরে পানি জমে থাকার সুযোগ কম। তাই মশার উৎপাদন সুযোগ কম।
‘আবার তাদের খাবারের অভ্যাসটাও অনেক স্বাস্থ্যকর বা তারা মসলা কম খান। এদিকে বাঙালিরা সাধারণত তুলনামূলকভাবে সমতল এলাকায় বসবাস করে। যেখানে পানি জমার সুযোগ বেশি ও মশা উৎপন্ন হয়ও বেশি। মূলত এসব কারণেই ম্যালেরিয়ায় বাঙালিরা বেশি আক্রান্ত হয়। ’
জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্যমতে, রাঙামাটিতে ২০১৬ সালে মোট ১৭ জন রোগী ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ৫ জন পাহাড়ি ও ১২ জন বাঙালি। এরপর ২০১৭ সালে ১৩ জন মৃত্যুবরণ করে। যার মধ্যে মাত্র ১ পাহাড়ি ছিল, বাকি ১২ জন বাঙালি।
কাপ্তাই উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা মাসুদ আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেসি সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আখতারুজ্জামান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা পরীক্ষিত চৌধুরী, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির বিশেষজ্ঞ মো. নজরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এম কে হাসান মোরশেদ, কাপ্তাই উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা খোরশেদ আলম, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নিখিল মানকিন প্রমুখ।
এদিকে ম্যালেরিয়ায় রাঙামাটির পরিস্থির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন রাঙামাটির ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. এন্ড্র বিশ্বাস।
তিনি বলেন, সবচেয়ে ম্যালেরিয়া প্রবণ জেলা রাঙামাটিতে গত ৩ বছরে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২০০২ সালে এই জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৪৩ জন মৃত্যুবরণ করে। ১০ বছর পর ২০১২ সালে মৃত্যু নেমে আসে ১ জনে। ২০১৩ সালে ২ জন ও ২০১৬ সালে ১ জনের মৃত্যু হলেও ২০১৭-২০১৯ পর্যন্ত কোনো মৃতের ঘটনা ঘটেনি।
ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় ৯২৬ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। যেখানে ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ৩ হাজার ১৫৫ জন। অন্যদিকে আক্রান্তের দিক থেকে সবচেয়ে কম রয়েছে সদর উপজেলায়। এখানে মাত্র ২৫ জন ম্যালেরিয়ার আক্রান্ত হয়েছে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩ জনে।
আক্রান্তের দিক থেকে নারীদের চেয়ে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৯৫০ জন পুরুষ। একই সময়ে নারী আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮৮০ জন। এছাড়া বয়সের দিক থেকে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বদের আক্রান্তের সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সালে এ বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৫৯৩ জন। ২০১৮ সালে ১ হাজার ৬৭৯ জন।
রাঙামাটি জেলায় ১ বছরের নিচে শিশুদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম। ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয়েছিল মাত্র ১৬ জন। ২০১৮ যা ১৪ জনে নেমে এসেছিলো।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার ১০টি উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নে এক হাজার ৫৫৫টি গ্রামে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের হার ক্রমান্বয়ে কমছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
এমএএম/এমএ