ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মঙ্গলবার থেকে শুরু জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯
মঙ্গলবার থেকে শুরু জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ অন্যরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: সুস্থ, সবল ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে আগামী ২৩ থেকে ২৯ এপ্রিল সারাদেশে পালিত হবে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ-২০১৯।

জনগণের খাদ্যাভাস ও খাদ্য পরিকল্পনায় পুষ্টির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে এবার পুষ্টি সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবুন’।

রোববার (২১ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ কথা জানান।

এসময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম, জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালা শাহ নেওয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশ আজ স্বাস্থ্য ও পুষ্টিখাতের উন্নয়নে সারা পৃথিবীতে রোল মডেল। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে জনগণের পর্যাপ্ত পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করা অপরিহার্য। কারণ বেঁচে থাকার জন্য শারীরিক মানসিক ও কর্মদক্ষতা উন্নয়নে পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। জনবহুল এই দেশের প্রতিটি নাগরিককে জাতীয় সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে নারী-পুরুষ ও শিশুদের জন্য মান সম্পন্ন পুষ্টি নিশ্চত করা জরুরি। এজন্য খাদ্যের সঙ্গে পুষ্টির কথা ভাবতে হবে। এলক্ষেই সারা দেশব্যাপী পুষ্টি সপ্তাহ পালনের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন সরকার গঠনের পর ১শ’দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়ে ছিলাম। আমরা কর্মসূচির শতভাগ পালন করতে পেরেছি। বর্তমানে দেশে পুষ্টিহীনতায় শিশু-মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে। দেশে অতি দরিদ্রের হার ১০ শতাংশের নিচে, দরিদ্র রয়েছে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। তাই বলা যায় অতি দারিদ্রের নিচে যারা রয়েছে তারাই পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। সে হিসেবে বর্তমানে দেশে ১০ শতাংশের মতো মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে।

জাহিদ মালেক বলেন, সমাজে সমতা আনতে ও ধনী গরিবের ব্যবধান কমিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। পাশাপাশি সুস্থ জাতি তৈরি করতে স্কুল হেলথ কেয়ার নিয় জোর দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ জানে না কীভাবে খাদ্যের পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণরুপে অক্ষুণ্ণ রাখা যায়। এসব বিষয়ে তাদেরকে সচেতন করাসহ খাদ্য সংগ্রহ থেকে খাদ্যগ্রহণ পর্যন্ত পুষ্টিমান অক্ষুণ্ন রাখতে সঠিক প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খাদ্য ও পুষ্টির বিষয়টি আমরা সরাসরি দেখি না। এটা খাদ্য মন্ত্রণালয় দেখে।   আমরা শুধু নির্দেশনা দিয়ে থাকি। ভেজাল খাদ্য ও কেমিক্যাল নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আমরা ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করি।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো মুরাদ হাসান বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২৩ এপ্রিল থেক ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে৷ জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের প্রথম দিনে হোটেল ইন্টার কন্টিনেরটারে মেলা ও সেমিনার আয়োজন করা হবে। সাকুরার সামনে একটি প্রতীকী র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

দ্বিতীয় দিনে মাতৃপুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা তৈরি, ব্রেস্ট ফিডিং বিষয়ে সেমিনার, তৃতীয় দিনে চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা, ৫ বছরের নিচে সব শিশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণে সেমিনার, চতুর্থ দিনে পুষ্টি মেলাতে পুষ্টি শিক্ষা, কাউন্সেলিং সেশন, পঞ্চম দিনে নিউট্রিশন অলিম্পিয়াড কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক দিবস পালন, ষষ্ঠদিনে  বৃদ্ধদের পুষ্টি, বহুপাক্ষিক অবহিতকরণ ও সমন্বয়, সেনিটেশন ও হাইজিন নিশ্চিতকরণ এবং সমাপনী দিনে পুষ্টি বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ করা হবে।

জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালা শাহ নেওয়াজ বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টি হ্রাস করতে ‘জাতীয় পুষ্টিনীতি ২০১৫’ ও অন্যান্য নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুসরণ করে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনায় (২০১৬-২০২৫) কয়েকটি সূচক ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এগুলো-শিশুর জন্মের প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা, ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার বাড়িয়ে ৭০ শতাংশে উন্নীত করা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের সব নাগরিকের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘জাতীয় পুষ্টিনীতি ২০১৫’-কে অনুসরণ করে ‘দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা (২০১৬- ২০২৫)’- এ জীবনচক্র ব্যাপী পন্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছে ভ্রূণ অবস্থা থেকে শুরু করে শিশুর ২৩ মাস বয়স পর্যন্ত শিশু, কিশোরী, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা, বয়স্ক জনগোষ্ঠী, শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। প্রাক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের অপুষ্টির বিষয়টিও এই জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

দেশের সবচেয়ে দুস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ যাদের দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে, যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার এবং যারা অতি প্রান্তিক এলাকায় বসবাস করে তাদেরও পুষ্টি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও যক্ষ্মা ও এইচআইভি ও এইডস রোগী এবং অপুষ্টিতে আক্রান্ত অন্যান্য জনগোষ্ঠীও অগ্রাধিকার পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৯
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।