বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) পালিত হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমিই করবো ম্যালেরিয়া নির্মূল’।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- দেশের এই তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। তাই এগুলোকে উচ্চম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলাকে মধ্যম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চল এবং কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এই নয় জেলাকে নিন্মম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ম্যালেরিয়া প্লাজমোডিয়াম প্রজাতির এক ধরনের পরজীবী দ্বারা সংঘটিত সংক্রামক রোগ যা সাধারণত জ্বরের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এনোফিলিস জাতীয় স্ত্রী-মশা ম্যালেরিয়া জীবাণুর বাহক।
চিকিৎসদের মতে, মূলত কাঁপনি দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার বেশি জ্বর থাকাই সাধারণ ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণ। এছাড়া অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বা অসংলগ্ন আচরণ করা, বারবার খিঁচুনি হওয়া, অত্যধিক দুর্বলতা, বারবার বমি হওয়া এবং শিশুর ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধ বা অন্য যেকোনো খাবার খেতে না পারা মারাত্মক ম্যালেরিয়ার লক্ষণ। যেকোনো ধরনের ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেই লক্ষণ দেখা মাত্রই দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির মতে ম্যালেরিয়ায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হলো, ম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চলে বসবাসরত শিশু, বিশেষত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ও গর্ভবতী নারী কম প্রকোপ অঞ্চল বা একেবারে ম্যালেরিয়া নেই এলাকা (যেমন-ঢাকা) থেকে ম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চলে ভ্রমণকারীরা।
আরো জানা যায়, দেশে এ পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় সর্বোচ্চ ২২৮ জন মারা যান ২০০৭ সালে। সে বছর ৫৯ হাজার ৮৫৭ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে কমানো গেলেও ২০১৪ সালে বৈরী আবহাওয়ার কারেণ তা আবার বেড়ে ৪৫ জনে দাঁড়ায় এবং এ সময় আক্রান্ত হন ২৬ হাজার ৮৯১ জন। এরপর ২০১৮ সালে ম্যালেরিয়ায় ৭ জন মারা যান, যেখানে আক্রান্ত হন ১০ হাজার ৫২৩ জন।
এদিকে জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কার্যক্রমের লক্ষ্য সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মসূচিটির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, সরকারের লক্ষ্য অনুসারে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসিডিজি) অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যেই ম্যালেরিয়া দেশ থেকে নির্মূল করতে হবে এবং বর্তমান কার্যক্রম অনুসারে আমরা তা করতেও পারবো। কেননা আগে আমাদের ছিল ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং এখন তা নির্মূল কর্মসূচিতে রূপান্তর হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ জেলায় বার্ষিক সংক্রমণের হার ০.৪৬ এ নামিয়ে আনা এবং বাকি ৫১ জেলায় সম্পূর্ণরুপে ম্যালেরিয়ামুক্ত করা। তাছাড়া প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম জীবাণুর আবির্ভাব প্রতিরোধ করা। কেননা দেশের ৮৪ ভাগ ম্যালেরিয়া এ জীবাণুর মাধ্যমে সংঘটিত হয়।
এ সময় তিনি ম্যালেরিয়া নির্মূলে বিভিন্ন ধরনের টিকা, সচেতনতা কার্যক্রম ও গবেষণায় ব্যয়ের তথ্য তুলে ধরেন।
এদিকে জানা যায়, দেশের ১৬ ভাগ ম্যালেরিয়া প্লাজমোডিয়াম ভাইভেক্স জীবাণুর দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। এই জীবাণূ মূলত ভারত ও মিয়ানমারে বেশি লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর সীমান্ত অঞ্চলে মূলত এ জীবাণুর সংক্রমণ বেশি।
এজন্য রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে অধিদফতরের ম্যালেরিয়া নির্মূল বিশেষজ্ঞ মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাভাবিকভাবে নির্মূল কর্মসূচির কার্যক্রমগুলো পরিচালনার পাশাপাশি গবেষণার কাজও চলছে। এখানে অ্যান্টোমলোজিস্ট দ্বারা মশা সংগ্রহ করা হয়। তারা শরীরের একটি অংশ বের করে মশার কামড় খায় ও মশাকে আটকায়। তাছাড়া কীভাবে এই মশাদের জৈবিক প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করা যায় বা বংশবিস্তার রোধ করা যার এবং পুনঃসংক্রমণ রোধ করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করে।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বাংলানিউজকে জানান, ম্যালেরিয়া নির্মূল বলতে বোঝায় রোগটি মানুষের কাছে যেন আর বড় সমস্যা হিসেবে পরিগণিত না হয়। বর্তমানে ম্যালেরিয়া নির্মূলের পথে রয়েছে। কিন্তু এ বছর দেখা যাচ্ছে অনেক আগে থেকে অল্প বিস্তর বৃষ্টি শুরু হয়েছে বা পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে, যা অ্যালার্মিং। এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাপনা নিয়েছি। আর আমরা আশা করছি ২০২১ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া প্রবণ জেলাগুলোতে ও ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
এমএএম/জেডএস