ঈদের ছুটিতে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ঘিরে চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীদের বিশেষ রোস্টার করা হয়েছে। পাশাপাশি ঈদের দিন ও পরের দিন হাসপাতালে দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও করতে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, এরইমধ্যে হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটের বেড খালি হতে শুরু করেছে। কোনো রোগী স্ব-ইচ্ছায় আবার কোনো রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো রোগীকে জোর করে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। সুস্থ এবং রোগীদের ইচ্ছায় ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। তবে যারা গুরুতর অসুস্থ, তাদের কোনোভাবেই ছাড়পত্র দেওয়ার সুযোগ নেই। আর এটা স্বাভাবিক নিয়মেই হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালে একটি ব্যাচের ইন্টার্নি শেষের পথে আর একটির শুরু হয়েছে। তাই এবারে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সংখ্যা হাসপাতালে দ্বিগুণ রয়েছে। মোট ৩২৬ জন ইন্টার্নদের মধ্যে ৫০ জনের ওপরে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী রয়েছেন। এছাড়া দেড়শ’র ওপরে রয়েছেন যাদের দূরের জেলায় বাড়ি। তাই সব মিলিয়ে ঈদের ছুটিতে শতাধিকের মতো ইন্টার্ন চিকিৎসক হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে রোগীর সেবায় দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া হাসপাতালে মিডলেভেল (রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, আইএমও, আরএমওসহ বিভিন্ন পদ) চিকিৎসকের ২২৪টি পদে ১০৬ জন চিকিৎসক রয়েছেন। যার মধ্যে মাত্র ১৭ জন রয়েছেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। তবে আশপাশে যাদের বাড়ি তাদেরসহ সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক মিডলেভেলের চিকিৎসকরা ঈদের ছুটিতে দায়িত্ব পালন করবেন।
৮০৬টি পদের অনুকূলে ৭৬৮ জন নার্সিং কর্মকর্তার মধ্যে ৩২০ জনের একটি ঈদ স্পেশাল রোস্টার চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূলত হাসপাতালের বহিঃবিভাগ ঈদের দিন বন্ধ থাকবে। এছাড়া আন্তঃবিভাগে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। আমরা ঈদে সর্বোচ্চ পাঁচদিনের ছুটি কাটাতে পারি। তবে নার্সিং দফতরের পক্ষ থেকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে একটি বিশেষ রোস্টার করা হয়েছে। এতে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে যাবে।
এদিকে, স্বাভাবিক সময়ে ৮০ থেকে ১০০ জনের মতো রোগী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে স্ব-ইচ্ছায় নয়তো ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেলেও ঈদকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে এ চলে যাওয়ার সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। ফলে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেখানে রোগীর উপচেপড়া ভিড় ছিলো, সেখানে এরইমধ্যে বেড ফাঁকা হয়ে গেছে।
প্রশাসনিক দফতর থেকে জানা গেছে, গত ২৯ মে হাসপাতালে ১ হাজার ২শ’ জনের ওপরে রোগী ছিলেন। যার মধ্যে ৩০ মে ৪শ’ জনের মতো রোগী চিকিৎসকের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। আর ৭৭ জন স্ব-ইচ্ছায় কাউকে না জানিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। তবে ওইদিন ৩৪২ জন রোগী নতুন করে ভর্তিও হয়েছেন।
একইভাবে ৩১ মে ১৭৭ জন রোগী চিকিৎসকের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন এবং ৮৯ জন স্ব-ইচ্ছায় কাউকে না জানিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। আর ওইদিন নতুন করে ৩শ’ জনের মতো রোগী ভর্তি হয়েছেন। ১ জুন ৩৫৯ জন রোগী চিকিৎসকের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন এবং ৮৮ জন স্ব-ইচ্ছায় কাউকে না জানিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। আর ওইদিন নতুন করে সাড়ে ৩শ’ জনের মতো রোগী ভর্তি হয়েছেন। ২ জুন সকালে হাসপাতালে রোগী ছিলেন ৯৫৫ জন।
যদিও এ চলে যাওয়ার মধ্যে অযৌক্তিক কিছুই দেখছেন না হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ঈদের সময়টাতে রোগীরা হাসপাতালে থাকতে চান না। একটু সুস্থ বোধ করলে স্ব-ইচ্ছায় অনেকেই কিছু না বলে চলে যান। আবার অনেকে চিকিৎসকের কাছে যান বাড়িতে কিভাবে ওষুধ সেবন করবেন তা জানতে। আর তাদেরই ছাড়পত্র অর্থাৎ ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসক কোনো অসুস্থ রোগীর নাম কাটেন না, রোগীর কন্ডিশন বুঝে সুস্থ যারা তাদেরই ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
বাকির হোসেন বলেন, ঈদের ছুটি বলতে শুধু ঈদের দিন হাসপাতালের বহিঃবিভাগ বন্ধ থাকবে। এছাড়া ঈদের আগের দিন ও পরের দু’দিন থেকে স্বল্প পরিসরে বহিঃবিভাগ চালু রাখা হবে। এরপর স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।
হিন্দু চিকিৎসকদের সংখ্যা এবারে খুব কম থাকায় রোস্টার নির্ধারণে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে ১১০ জনের মতো চিকিৎসক রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। আর ঈদের সময়টাতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও হাসপাতাল থেকে করা হচ্ছে। আশা করি সবকিছু সঠিকভাবেই চলবে। ঈদের ছুটিতে রোগীদের কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৯
এমএস/আরবি/