বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সরেজমিনে সেন্ট্রাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ৮০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এখানে মোট রোগীর ৮০ শতাংশই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিনিয়তই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আমাদের এখানে। জেনারেল, শিশু, গাইনিসহ অন্য বেডেও ডেঙ্গু রোগী রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে বেড স্বল্পতার কারণে এক্সট্রা বেড পাতা হয়েছে হাসপাতালে। তবে প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
এ ব্যাপারে সেন্ট্রাল হসপিটালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডাক্তার এটিএম নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হাসপাতলে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জানুয়ারি ১ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত ৬৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী এখানে ভর্তি হয়েছেন। তবে চলতি মাসে এ সংখ্যাটা অনেক বেশি। আজ সকাল থেকে ৮০জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, তারা সবাই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত।
তিনি বলেন, আমাদের জেনারেল, গাইনি, শিশু বিভাগসহ অন্য সব বিভাগে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হচ্ছে। রোগীর চাপ থাকায় এক্সট্রা বেড ফেলা হয়েছে। আমাদের ডেঙ্গু রোগ বিশেষজ্ঞরা মনোযোগ দিয়ে ভালো চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন রোগীদের।
বেসরকারি যত হাসপাতাল রয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী সেন্ট্রাল হসপিটালে বলেও তিনি জানান।
নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে। এখন একদিন জ্বর থাকলে তারা সঙ্গে সঙ্গে রক্তপরীক্ষা করাচ্ছেন। এটি একটি ভালো দিক। জনগণ ডেঙ্গু নিয়ে মোটেও অবহেলা করছেন না।
রাজধানীর ডেঙ্গু পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে হাসপাতালে শয্যা খালি না পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
নিজ এলাকায় কোনো হাসপাতালে সিট না পেয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে ওয়ালী উদ্দিন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত বোনকে ভর্তি করতে এসেছেন সেন্ট্রাল হসপিটালে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বোন নাবিলা (১৭) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। আজ হাসপাতালে ভর্তি করলাম। তার (রোগীর) পাঁচ দিন ধরে ১শ থেকে ১শ দুই তাপমাত্রায় জ্বর থাকে ও বমি করছে। এলাকার হাসপাতালগুলোতে সিট পাইনি তাই এখানে এসেছি।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের বাইরে অতিরিক্ত বেড ফেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। ডাক্তাররাও কিছুক্ষণ পরপর রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। এতে রোগীর সঙ্গে আসা অভিভাবকরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন ডাক্তাররা প্রতিনিয়ত রোগীর খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, ভালো চিকিৎসা দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সেন্ট্রাল হসপিটালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডাক্তার একেএম মোজাহের হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ডেঙ্গুর অবস্থা ভয়াবহ এখানে। জরুরি বিভাগের বাইরে আমরা অতিরিক্ত দুটো বেড দিয়ে রেখেছি ডেঙ্গু রোগীদের জন্য। আমাদের অবজারভেশন বিভাগে অন্য বিভাগের রোগী রাখা হতো, সেগুলো বন্ধ করে এখন ডেঙ্গু রোগী রাখছি। তারপরেও আমাদের এক্সট্রা ছাউনি দিয়ে ডেঙ্গু রোগী রাখতে হচ্ছে। আজ (২৫ জুলাই) নরমাল ওয়ার্ডেও দু’জন গর্ভবতী ডেঙ্গু রোগীকে ভর্তি রাখতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এবার রোগের লক্ষণ ভিন্ন। আগে যেমন শরীরে র্যাশ থাকতো, মাথাব্যথা নিয়ে আসতো, শরীরের ব্যথা থাকতো, এগুলোর পরিবর্তে এবার নিয়ে আসছে বমি, মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, জ্বর। আমাদের এখানে ডেঙ্গু আক্রান্তদের খুব কম প্লাটিলেট দেই। যদি রোগীর খুব ব্লিডিং হয় যেমন- দাঁত থেকে, নাক, কান, প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তখন প্লাটিলেট দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে রোগীকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে হসপিটাল থেকে বাসায় ফেরার পর লিকুইড জাতীয় খাবার বেশি বেশি করে খাবার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৯
এসএমএকে/এমএমআই/এএ