ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

‘ট্রলিম্যানরা বুঝতে পেরেছে আমাদের কাছে টাকা নাই’

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯
‘ট্রলিম্যানরা বুঝতে পেরেছে আমাদের কাছে টাকা নাই’ ট্রলিতে নিথর পড়ে থাকলেও শুক্কুর আলীকে চিকিৎসকের কাছে নিতে এগিয়ে আসেননি কোনো ট্রলিম্যান

ঢাকা: বলার মত তেমন কিছু করেন না শুক্কুর আলী (২৫)। গাজীপুরে বোর্ডবাজারে শনিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) রাতে একটি হোটেলে বিস্ফোরণে আহত হন তিনিও। ঘটনার পর তার ছোট ভাই ও স্বজনদের নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আসেন। পোড়া শরীর নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে এলেও চিকিৎসা পেতে তাকে ধাপে ধাপে ‘হয়রানি’র মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

শুক্কুর আলীর ভাই জাহাঙ্গীর বলেন, বিস্ফোরণে ভাইয়ের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া নিয়ে প্রথমে বার্ন ইউনিটে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেন।

এ সময় তারা দেখতে পান ভাইয়ের বামহাতের কব্জির হাড় ভেঙে চামড়ার সঙ্গে ঝুলছে ও হাতের তালুর মাঝখানে ক্ষত। পরে তাকে জেনারেল বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তার ফ্র্যাকচার দেখে দ্রুত এক্স-রে করার জন্য পাঠান।  

মূলত সেখান থেকেই শুরু তাদের সমস্যা। এক্স-রের জন্য ট্রলির ওপর শুয়ে ছটফট করেন শুক্কুর আলী। সঙ্গে ছিলেন ভাই জাহাঙ্গীরসহ আরেকজন। হাসপাতালে প্রথম আসায় অনেক কিছুই তাদের জানাশোনা ছিল না। অনেকের কাছে দিক নির্দেশনা পেয়ে তারা দুজন ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যান নতুন ভবনে। সেখানে লেগে যায় ঘণ্টাদুই সময়।

শুক্কুরের ভাই জাহাঙ্গীর জানান, ‘আমাদের পোশাক দেখে ট্রলিম্যানরা বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের কাছে কোনো টাকা নাই। তাই আগ্রহ করে কোনো ট্রলিম্যান আমাদের ট্রলিটি ধরেনি। আমরা এর আগে কখনো এই হাসপাতালে আসিনি। ট্রলিও ঠিকমত ঠেলতে পারছিলাম না। কোথায় নেবো কি করবো বুঝতে পারছিলাম না’।

‘পরে আমরাই হাসপাতালে থাকা লোকদের জিজ্ঞেস করে রোগীকে নিয়ে নতুন ভবনে যাই। সেখানে গিয়ে রোগীর লম্বা সিরিয়াল ভেঙে ভেতরে গেলেও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টাকা না থাকায় এক্স-রে করা হয়নি। পরে ভাইকে জরুরি বিভাগে নিয়ে এলেও টাকা না থাকায় সেখানেও তার এক্স-রে করা সম্ভব হয়নি। রোগীকে নিয়ে কোথায় যাবো, কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ’

জাহাঙ্গীর তার অভিজ্ঞতায় বলেন, ‘এ সময় লোকজন রোগীর পাশে ভিড় করলে জরুরি বিভাগে থাকা লাল জামা গায়ে কিছু ট্রলিম্যানকে রোগীর ট্রলি ধরতে বললে ওই ট্রলিম্যানরা বলেন, এই ট্রলি আমাদের বিভাগের না। এটি বলে তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যান’।

‘পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া রোগীর বিস্তারিত বর্ণনা শুনে নিজেই ট্রলি ধরে জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান এবং সেখানেই কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিস্তারিত বলে শুক্কুর আলীর এক্স-রে ফ্রি করিয়ে দেন’।

অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বরত অর্থপেডিক চিকিৎসক শাহজাহান জানান, শুক্কুরের বাম হাতের কব্জিতে বড় ধরনের ফ্র্যাকচার আছে।  আমাদের এখানে যা করণীয় তা আমরা করে দিচ্ছি। তাছাড়া তার হাতের তালুতে বড় ক্ষত আছে, সেটিও দেখা হচ্ছে। রোগীর শরীরে পোড়া ক্ষত থাকায় তাকে আবার বার্ন ইউনিটে রেফার করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান জানান, রোগী যে বিভাগেরই হোক বা ট্রলি যে বিভাগের হোক রোগী সামনে পড়লেই টলিম্যান রোগীকে সেবা দেবে। আর বলার পরও কোনো ট্রলিম্যান ওই রোগীর ট্রলি ধরেনি বিষয়টি কঠোরভাবে দেখা হবে।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারের একেএম নাসির উদ্দিন ঘটনার বিস্তারিত শুনে জানান, শিগগিরই এসব স্পেশাল ট্রলিম্যানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যা হবে স্থায়ী ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থা থাকবে কেউ টাকার বিনিময় ট্রলি ঠেলতে পারবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্ব ০৮, ২০১৯
এজেডএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।