তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুসারে দেশে এখনো সরকারি হাসপাতালে সিজারের পরিমাণ বেশি। যদিও তা কমানো হয়েছে এবং আরো কমানো হবে।
সোমবার (০৪ নভেম্বর) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে ‘জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য কৌশলপত্র ২০১৯-২০৩০’ ও এসওপি’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাতৃমৃত্যু রোধে ও উন্নত মাতৃস্বাস্থ্য সেবার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপনায় ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, ডব্লিউএইচও, ইউএসএআইডি এবং সেভ দ্যা চিলড্রেনের সার্বিক সহযোগীতায় এ কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জন্মের সময় শিশুর ওজন কম থাকায় শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে। কেননা এখনো মায়েরা অপুষ্টিতে ভুগছেন। এবিষয়ে আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ভালো বরাদ্দ হলেও আমাদের চাহিদা আরো বেশি। এজন্য ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হবে। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা কম বাজেটে বেশি ভালো কাজ করার উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের মায়ের মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশে ও শিশুমৃত্যুর হার ১২ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, অনেক সমালোচনার পরও আমাদের এখানে অনেক অর্জন রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পেরেছি। হাসপাতালগুলো সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিষেবা আরো বাড়াতে হবে।
বর্তমানে ভারতের চেয়ে আমাদের চিকিৎসাখাত বেশি উন্নত উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের চেয়ে আমাদের চিকিৎসা অবস্থা ভালো হলেও আমাদের আরো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করতে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ করলে হবে না। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো মন্ত্রণালয় রয়েছে। তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ‘জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য কৌশলপত্র ২০১৯-২০৩০’ ও এসওপি’র মোড়ক উন্মোচন করেন। তাছাড়া দেশের ৬২টি মেডিক্যাল কলেজ, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকে মা ও শিশু কল্যাণের বিশেষ অবদান রাখায় নিরাপদ মাতৃত্ব পুরস্কার দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি ক্লিনিক সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী এ কে এম মহিউল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. এহতেশামুল হক চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেটারনাল হেলথ প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (উপ-পরিচালক) ডা. মো. মোশায়ের-উল-ইসলাম, লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. বর্ধন জং রানা, ইউএনএফপিএ প্রতিনিধি ডা. আশা টোর্কেলসন, ইউনিসেফের প্রতিনিধি মায়া ভ্যান্ডেনেন্ট প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ১৪ জন মা গর্ভজনিত জটিলতায় মারা যায়। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে হলে মাতৃ মৃত্যুহার কমাতে বহুমুখী কার্যক্রম কার্যকরী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। এভাবে কাজ করা হচ্ছে বলেই বর্তমানে এ হার কমছে। সরকার মাতৃ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যৎ মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিএএইচ এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এমসিআরএএইচ অপারেশনাল প্লানে কিশোর-কিশোরীদের মাতৃস্বাস্থ্য সেবা ও মান উন্নয়ন বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় মাতৃস্বাস্থ্য কৌশলপত্র ২০১৯-২০৩০ ও এসওপি ব্যবহার করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অন্যান্য সরকারি বেসরকারি সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৯
এমএএম/জেডএস