রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম সামশুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর এডিস মশার ধরণ অনুসারে শীতেও ডেঙ্গু থেকে যাবে। একেবারে শূন্য হবে না এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা।
‘অর্থাৎ প্রজনন মৌসুমে যে লার্ভাগুলো এডিস মশা পরিস্ফুটিত করেছে সেগুলো পানির স্পর্শ পেলেই মশা উৎপাদন করবে। কেননা এডিসের লার্ভা ২ বছর পর্যন্ত পানি ছাড়া ভালো থাকতে পারে। পানির স্পর্শ পেলেই আবার ডিম থেকে মশার জন্ম হতে পারে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্টদের মশক নিধনসহ লার্ভা ধ্বংসের কাজ অব্যাহত না রাখলে মশার বংশবিস্তার ঠেকানো যাবে না ও ডেঙ্গুও নির্মূল হবে না। ’
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে আরো নতুন ৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮৯ জন এবং ঢাকার বাইরে আরো ১২০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৪৩ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ১৭৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যা ছিল ১৮৪ জন। অর্থাৎ সারাদেশে এই সময়ে রোগী কমেছে ১০ জন অর্থাৎ ৫.৪ শতাংশ।
সোমবার (০৪ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার এসব তথ্য জানান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এবার ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাবে। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। কেননা এবারের ডেঙ্গুর ধরণ ভিন্ন। সেরোটাইপ ৪ পর্যন্ত আক্রমণ করেছে এবার।
ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে রাজধানীর মাত্র ৪১ টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। একই সময়ে ঢাকার বাইরে ৪৯৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সারাদেশে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন ৮৪২ জন।
সরকারি হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ঢাকা শহর ব্যাতীত ঢাকা বিভাগে ২৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৩, খুলনায় ৩৫, রংপুর ১, রাজশাহীতে ৪, বরিশালে ২৩ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন।
আর রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২, মিটফোর্ডে ৯, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২ ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১ জন সহ ঢাকা শহরের সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত হাসপাতালে মোট ৪০ জন ভর্তি হয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতালে হয়েছেন ১৪ জন। মোট এ সংখ্যা ৫৪ জন।
এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৮, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১৯৩, জুনে ১ হাজার ৮৮৪, জুলাইয়ে ১৬ হাজার ২৫৩, আগস্টে ৫২ হাজার ৬৩৬ জন এবং সেপ্টেম্বরে ১৬ হাজার ৮৫৬ জন অক্টোবরে ৮ হাজার ১৪৩ এবং নভেম্বরের ৪ দিনে ৭২৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
তাছাড়া বাংলাদেশে ২০১৯ সালেই সর্বোচ্চ ডেঙ্গুতে আক্রান্তের রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে। যার মধ্যে আগস্ট মাসে ছিল সর্বোচ্চ।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৬ হাজার ৮২০ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৫ হাজার ৭৩০ জন। অর্থাৎ আক্রান্তদের ৯৮.৯ শতাংশ রোগীই ছাড়পত্র পেয়েছেন।
এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছে ডেঙ্গু সন্দেহে ২৪৮ টি মৃত রোগীর তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ১৭১ টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ১০৭ টি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে মৃতের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে জানা গেছে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সূত্রে। এ সংখ্যা এখনও সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। হাসপাতলে ভর্তি হয়ে মৃত ৯৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে এপ্রিলে ২, জুনে ৬, জুলাইয়ে ৩৫, আগস্টে ৬০ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৪ জনের মৃত্যু হয়। আর এসব মৃত্যুর মধ্যে শিশুমৃত্যুর হারই সবচেয়ে বেশি বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৯
এমএএম/এমএ