এছাড়াও হাসপাতালটিতে ৩০টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ২১টিই খালি। মাত্র ৯ জন চিকিৎসক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা।
১৯৫৭ সালে তৎকালীন পাবনা জেলার সিভিল সার্জন শীতলাই হাউজের জমিদার বাড়িতে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৯ সালে জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে হেমায়েতপুরে হাসপাতালটি স্থানান্তরিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এ হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ছিল ৬০, যা পরবর্তী সময়ে বেড়ে ২০০ শয্যায় উন্নীত হয়। পরে ১৯৬৬ সালে আরও ২০০ শয্যা যুক্ত হয়। এরপর ২০০৩ সালে মেন্টাল হেলথ রিসোর্স ইনস্টিটিউটের আওতায় যোগ হয় আরও ১০০ শয্যা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য ১৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে ৩০টি চিকিৎসক পদের মধ্যে ২১টিই খালি রয়েছে। মাত্র ৯ জন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসাসেবা চলছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পাবনা মানসিক হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত ৩০ জন চিকিৎসকের বিপরীতে পরিচালকসহ ৯ জন চিকিৎসক বর্তমানে কর্মরত। হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়কসহ ২১টি পদ শূন্য। এর মধ্যে ২ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট, একজন ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিস্ট, একজন আবাসিক সাইকিয়াট্রিস্ট, একজন ক্লিনিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট, চারজন মেডিকেল অফিসার, তিনজন সহকারী রেজিস্ট্রার, একজন ডেন্টাল সার্জন, একজন এনেসথেটিস্ট, একজন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট এবং একজন বায়োকেমিস্টের পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালের ভর্তি রোগীসহ বহিঃবিভাগের রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় দায়িত্বরত চিকিৎসকদের।
এছাড়াও ১ম শ্রেণির কর্মকর্তাদের ৮টি পদের মধ্যে ২ জন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, একজন সাইকিয়াট্রিস্ট সোসাল ওয়ার্কার এবং একজন এসএলপিপি’র পদ শূন্য রয়েছে।
অপরদিকে ২য় শ্রেণির ৪৫টি পদের বিপরীতে ২২টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ ১ জন সিনিয়র নার্স এবং ২১ জন স্টাফ নার্সের পদ শূন্য।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপতালের ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে সম্প্রতি ৭টি মেরামত করা হলেও বাকি ৭টি ওয়ার্ডের মেরামত কাজ অর্থাভাবে বন্ধ রয়েছে। এসব ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তারা খুলে খুলে রোগীদের গায়ের ওপর পড়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। অনেক স্থানে ছাদের রড বের হয়ে গেছে। শিগগিরই মেরামত করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মুবাইয়া জানান, সম্প্রতি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডসহ ৭টি ওয়ার্ডের সংস্কার কাজ করায় রোগীদের রাখার সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এদিকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মোছা. মল্লিকা খাতুন জানান, তার ওয়ার্ডসহ ৭টি ওয়ার্ডের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
এ ব্যাপারে পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী বাংলানিউজকে জানান, পাবনা মানসিক হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিছু কাজ আগে করা হয়েছে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুতই বাকি কাজগুলোও করার। তবে সবকিছু তো আমাদের হাতে না। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে অবশ্যই বাকি কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করা হবে।
বিষয়টি স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক ড. প্রফেসর তন্ময় কুমার প্রকাশ বলেন, রোগীদের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকসহ সব শূন্য পদ পূরণ এবং হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো সংস্কার করা অত্যাবশ্যক। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। দেশের একমাত্র বিশেষায়িত এ হাসপাতালের চিকিৎসাসহ আবাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার বলে আমি মনে করি। সময়ের সঙ্গে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থারও দরকার হয়ে পড়েছে। সরকার আন্তরিক হলে অবশ্যই এ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
আরএ