শনিবার (০৯ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এফডিএসআর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব অভিযোগ করেন।
প্রস্তাবিত ‘স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা আইন-২০১৮’ এর কয়েকটি ধারা পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন এবং অবিলম্বে ‘চিকিৎসা সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রস্তাবিত আইন অনুসারে চিকিৎসকদের ‘চেম্বার প্র্যাকটিস ও বেসরকারি ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি অধ্যাদেশ-১৯৮২’ অনেকটা জোর করে চিকিৎসকদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালিন সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। সেই অযৌক্তিকতার কিছু ছাপ বর্তমানের প্রস্তাবিত আইনেও রয়ে গেছে।
এ আইনে চিকিৎসক এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা একসঙ্গে মিলিয়ে অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত আইনের বেশ কয়েকটি ধারা বিভ্রান্তিকর বা অসম্পূর্ণ। ফলে পরে এই আইনের ব্যাখ্যায় সংশয়ের সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া নির্ধারিত অফিস সময়ে বা পালাক্রমিক দাপ্তরিক দায়িত্ব (Roster duty) পালনের সময়ে অন্য কোনো হাসপাতালে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা দেওয়া প্রচলিত চাকরি বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে নতুন করে এটা বর্তমান প্রস্তাবিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করার কী প্রয়োজন? এই ধারা ১০(১) লঙ্ঘন করলে অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানার বিষয়টিও এখানে অপ্রয়োজনীয়। প্রস্তাবিত আইনের ১০(২) ধারায় ছুটির দিনে স্ব-স্ব কর্মস্থলের জেলার বাইরে বেসরকারি হাসপাতালে বা ব্যক্তিগত চেম্বারে ফিস গ্রহণপূর্বক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন প্রয়োজনের কথা বলা হয়েছে।
আমরা মনে করি, এর ফলে বিভিন্ন জেলার সাধারণ রোগীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। পাশাপাশি সীমিত আয়ের অনেক রোগীর পক্ষেই নিজ এলাকার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। সেক্ষেত্রে সপ্তাহান্তে মফস্বলের রোগীরা নিজ এলাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে সরাসরি চিকিৎসা পেয়ে উপকৃতই হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ধারা ১১ অনুসারে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসমূহে প্রদত্ত সেবা এবং রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার চার্জ বা মূল্য বা ফি’র তালিকা প্রদর্শন করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত আইনটিতে অপ্রয়োজনীয় ধারা সম্পর্কে বক্তারা বলেন, ধারা ১২(১) এবং ১২(২) সেবা গ্রহীতার বসার জায়গা না থাকলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাবিত দণ্ডটিও সঙ্গত কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। ধারা ১২ (৩) এবং ১২ (৪) বর্ণিত বিষয় দু’টো ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। ধারা ১২ (৩) ও ১২ (৪) ও বিএমডিসি আইন ও মেডিক্যাল এথিকস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এর জন্যও আলাদা আইনের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। ধারা ১৩ তে উল্লেখিত ‘রোগী বা রোগীর অনুসঙ্গীকে (Attendant) চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিতকরণ ও তথ্য প্রদানের’ ব্যাপারটি বিএমডিসি কর্তৃক নির্ধারিত ‘কোড অব কনডাক্টের’ আওতাধীন, একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক যা মানতে বাধ্য।
সংবাদ সম্মেলনে এফডিএসআরের চোখে আইনের বিভিন্ন ধারার অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়।
এফডিএসআরের মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষার, ইশতিয়াক রেজা, সংগঠনের কোষাধক্ষ্য ডা. ফরহাদ মঞ্জুর, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জাহিদুর রহমান, আইন বিষয়ক সম্পাদক ডা. নোমান চৌধুরী, মিডিয়া এবং পাবলিকেশন বিষয়ক সম্পাদক ডা. শাহেদ ইমরান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
এমএএম/এইচএডি/