ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সরকার-সংস্থাগুলোর ভিন্ন পন্থা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সরকার-সংস্থাগুলোর ভিন্ন পন্থা

ঢাকা: জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সরকার ও বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা বা স্টেকহোল্ডারদের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে কার্যক্রম গ্রহণের প্রক্রিয়া রয়েছে। এক্ষেত্রে সহযোগী সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ভিন্ন হওয়ায় কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে সরকারের।

জন্মনিয়ন্ত্রণে ‘পাথ ফাইন্ডার’ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্মনিয়ন্ত্রণে পিল বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কনডমে উৎসাহিত করছে। কিন্তু সরকার বলছে, বাজেট অনুসারে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় এনজিওদের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করতে পারে না।

সেক্ষেত্রে সরকার যখন পিল নিয়ে জনগণের কাছে যাবে, তখন তারা পিল গ্রহণ করবে না। কারণ তারা আগে থেকেই কনডমে অভ্যস্থ। এতে সরকারের প্রকল্প একেবারে ব্যর্থ হবে। তাই এক্ষেত্রে সরকার ও সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রক্রিয়া এক হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।

এদিকে স্টেকহোল্ডারদের মতে, তারা পাইলট প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন পন্থা ব্যবহার করা যেতেই পারে। মূল প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে তাদের কাজের সাদৃশ্য রাখা যেতে পারে বলেও জানান তারা।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। পরিবার পরিকল্পনায় মাঠ পর্যায়ের গবেষণামূলক কাজের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।

সচিব বলেন, গবেষণার পর আমাদের বাজেট অনুসারে তা হয় কিনা অথবা বাজেটে বরাদ্দ কেমন থাকবে সে অনুসারে কাজ পরিচালনা করা উচিত। আর প্রাপ্ত ফলাফল যেন বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনীয় অর্থ সরকারের বাজেটের অন্তর্ভুক্ত আওতাধীন থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের দেশের জনসংখ্যায় প্রতি বছর ২১ লাখ নবজাতক যোগ হয়। এছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু জন্ম ঢাকতে প্রায় ৯ লাখ নারী গর্ভপাত করেন। এদের কাছে যদি আমরা জন্মবিরতিকরণ উপাদানগুলো পৌঁছাতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। মূলত এ নারীরা গর্ভবতী হতে চায়নি। শুধুমাত্র জন্মবিরতিকরণ ব্যবস্থা অভাবে তারা মা হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধিরা যদি উদ্যোগ নেয়, তাহলে সে এলাকায় পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক আমূল পরিবর্তন হবে। সংসদ সদস্যসহ চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা এ ভূমিকা পালন করতে পারেন। যেমন ঢাকার কাপাসিয়া উপজেলার সংসদ সদস্য নিজ উদ্যোগে এ ধরনের কাজ করে বলে সেখানে জন্মনিয়ন্ত্রণ দেশের যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

সভায় বিলম্বিত গর্ভধারণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মো. আমিনুল হক। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিবাহিত প্রায় ৪২১ দম্পতির ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নয়টি উপজেলায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এ পরিসংখ্যান করেছে। এসময় প্রায় ৩ হাজার স্টেকহোল্ডারকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিয়ের রেজিস্ট্রার ও কাজী, ধর্মীয় নেতা, কিশোর-কিশোরী এবং স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। পাইলট প্রোগ্রামে ৪২১ দম্পতিকে বিয়ের সময় সরকারের পক্ষ থেকে একটি উপহারের বাক্স দেওয়া হয়েছে, যাতে উপহার হিসেবে একটি ঘড়ি এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের যাবতীয় নিয়মাবলী এবং কিছু উপাদান ছিল।

ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন, ৫৫ শতাংশ মানুষ বিয়ের প্রথম রাতে এ বাক্স থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণকারী উপাদান ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ নারী গর্ভধারণ করেছেন। বিয়ের প্রথম বছর গর্ভবতী হয়েছেন প্রায় ৩১শতাংশ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গর্ভধারণের ৫০ শতাংশ খরচ কমে যাবে। সর্বোপরি এ উপহার দেশের নবদম্পতিরা উৎসাহের সঙ্গেই গ্রহণ করেছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী এ কে এম মহিউল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনএফপিএ’র স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রধান অমর বালান, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অর্থ বিভাগের পরিচালক যুগ্মসচিব ডা. মো. সারোয়ার বারি প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯
এমএএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।