ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, বেড়েছে ওষুধ বিক্রি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা, বেড়েছে ওষুধ বিক্রি

ঢাকা: রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন রোগ। এতে জ্বর-ঠাণ্ডা, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়ার (রোটা ভাইরাস আক্রান্ত) মতো রোগ বেড়ে গেছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। আর এর পাশাপাশি বেড়েছে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই প্যারাসিটামলসহ বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি। 

আবহাওয়াবিদদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহ আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে পারে। রাজধানীতে তাপমাত্রা ১৩ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে।

আর এ কারণেই শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় কাতর রাজধানীবাসী। বিশেষ করে শিশুরা। চিকিৎসকদের মতে, মূলত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে শিশুদেরকে ঠিকমতো যত্নে রাখলেই এসব রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ঢাকা শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ঠাণ্ডায় অসুস্থ শিশুদের নিয়ে অবিভাবকদের ভিড়। হাসপাতাটির সিংহভাগ শিশুরোগীই ঠাণ্ডা, জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত।

হাসপাতালে রফিক-রিমা দম্পতি এসেছেন তাদের বাচ্চাকে নিয়ে। বাংলানিউজকে তারা বলেন, গত তিনদিন ধরে আমাদের বাচ্চার অনেক জ্বর ও ঠাণ্ডা। আজকে সকাল থেকে আবার শুরু হয়েছে ডায়রিয়া। তাই দ্রুত হাসপাতালে এসেছি।

শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে সাধারণত ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী প্রতিদিন আসে। কিন্তু এই দুইদিন ধরে ২৫০ থেকে ৩০০ জন আসছে প্রতিদিন। এদের অধিকাংশই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। অধিক জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেশিরভাগ শিশুদেরকে হাসপাতালে আনছেন অভিভাবকরা। এছাড়া আছে শুষ্ক ডাইরিয়া বা রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত ডায়রিয়া। এদের মধ্যে অনেককেই ওয়ার্ডে ভর্তি হতে হচ্ছে। এতে বেডের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের আবার অ্যাজমা বেশি দেখা দিচ্ছে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে অনেক শিশুদেরকে স্কুল থেকেই আনা হচ্ছে। এছাড়া ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত শিশুও পাওয়া যাচ্ছে।  

শীতের মারাত্মক রোগ নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও কয়েকজন রোগী এসেছে বলে জানান হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ মুয়াজ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দুই থেকে চারজন নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুরোগীও পেয়েছি। তবে সেটা ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকে পাচ্ছি। খেজুরের রস কাঁচা খাওয়ায় এমন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। এছাড়া বাকিরা শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগী। এছাড়া নাক, কান ও গলার সমস্যাজনিত রোগীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়।

এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, প্রথম কথা, ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে শিশুদের। গরম কাপড়, কুসুম গরম পানি ও সবসময় গরম খাবার পরিবেশন করতে হবে। এছাড়া সবসময় হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে খেতে দিতে হবে। নইলে জীবাণুর আক্রমণে মারাত্মক ডায়রিয়া হতে পারে। কেননা এসময় বাতাসের আদ্রতা কম থাকায় জীবাণুগুলো মুক্ত বাতাসে উড়ে বেড়ায়। যা সহজেই শিশুদের আক্রমণ করে।  

এছাড়া বড়রাও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সেক্ষেত্রেও রয়েছে শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমাজনিত সমস্যা। এ ব্যাপারে শ্যামলী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আবু রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, শীতের কারণে আমাদের হাসপাতালেও রোগী আগের চেয়ে বেড়েছে। ঠাণ্ডায়, অ্যাজমায় আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। এছাড়া ঠাণ্ডায় শ্বাসকষ্টের কারণে অনেকে আসছেন। যাদের প্রথমে নেবুলাইজেশন করে তারপর চিকিৎসা করানো শুরু করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাই মূল কাজ। যেকোনো উপায়ে ঠাণ্ডা থেকে দূরে থাকলেই হবে।  

এদিকে রাজধানীতে প্যারাসিটামল, সেফিক্সিম, ডক্সিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড, অ্যজিথ্রোমাইছিনের মতো ওষুধসহ ঠাণ্ডা-কাশি নির্মূলে সিরাপের বিক্রি আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এসব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বলে উদ্বিগ্ন রয়েছেন চিকিৎসকরাও। কেননা ওষুধের দোকানের বিক্রেতারা কিংবা রোগীর নিজের পরামর্শ অনুসারেই এসব ওষুধ কেনা হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর, ধানমন্ডি, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্রই। এসব এলাকার ওষুধ বিক্রেতারা বাংলানিউজকে বলেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার জন্য ক্রেতা বা রোগীরা এসে নিজেরাই অ্যান্টিবায়োটিক চায়। এক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ছাড়াও হারবাল ও ইউনানি সিরাপও বেশ বিক্রি হচ্ছে।  

চিকিৎসকদের মতামত ছাড়া এভাবে ওষুধ খাওয়া লিভারের জন্য খারাপ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, শিশুদের ক্ষেত্রে ওজন মেপে পরিমাণ মতো প্যারাসিটামল ওষুধ দেয় চিকিৎসকরা। এক্ষেত্রে জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিৎ। আর শিশুদেরকে অ্যান্টি হিস্টামিনও কম দেওয়া হয়। তাই অযথা ওষুধ খাওয়ানো থেকে একেবারে বিরত থাকা উচিৎ।  

‘আর বড়রা জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই প্যারাসিটামল খাবে। আবার ৩ দিনের বেশি জ্বর থাকলে ডাক্তারের কাছে যাবে। কেননা সাধারণত সেটা তখন আর স্বাভাবিক জ্বর থাকে না। আর অন্যান্য ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়াই যাবে না। এতে লিভারের সমস্যা ছাড়াও সঠিক ওষুধ ও সঠিক মাত্রায় না খাওয়ার কারণে ওষুধ রেজিস্ট্যান্ট হতে পারে। ফলে পরবর্তীতে আর ওষুধ কাজ নাও করতে পারে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
এমএএম/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।