রোগী কম থাকায় হাসপাতালের পরিবেশ এখন অনেকটা ভুতুড়ে। স্বাভাবিকের অন্যান্য সময় যেখানে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী-স্বজনে পরিপূর্ণ থাকতো এখন সেখানে বিরাজ করছে নির্জন পরিবেশ।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
রোগীর স্বজনসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য হাসপাতালের অনেক রোগীকে বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। নতুন করে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত কোনো রোগীকেও ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। ফলে সারি সারি বিছানা খালি পড়ে রয়েছে। তবে অতি জরুরি রোগী দুই-একজনও রয়েছেন।
গত ৩০ বছরেও হাসপাতালে এমন রোগী শূন্যতা দেখেননি বলে জানিয়েছেন অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা-কর্মচারী। সাধারণত ঢামেক হাসপাতালে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে হাসপাতালের আনাচে-কানাচে থাকে শুধু রোগী আর রোগী।
রোগীদের ভিড়ে এমনও দেখা গেছে যে, হাসপাতালের বেড কিংবা ফ্লোরে জায়গা না পেয়ে সিঁড়ির ঢালেও সারিবদ্ধভাবে থাকতেন অনেকে। আর এখন মনে হচ্ছে রোগী শূন্যতায় ভুগছে হাসপাতাল! এখন আর সেখানে মানুষজনের আনাগোনাও নেই, নেই নার্স-ডাক্তারদের ছুটোছুটিও।
পুরান ঢাকার জয়নাল আবেদীন (ছদ্মনাম) ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার তাকে নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসকের কাছে আসেন ছেলে আফজাল হোসেন।
তার ভাষ্য, কিছু বোঝার আগেই দু-একটা কথা শুনে বাবার ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে দ্রুত বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক। অবস্থা বিবেচনা করে বাবাকে ভর্তি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে চিকিৎসক বলেন, এখন ভর্তি নেওয়া যাবে না।
‘এর আগেও বাবাকে নিয়ে এসেছিলাম। তখন করোনা প্রাদুর্ভাব ছিল না। চিকিৎসকরা তখন বলছিলেন কোথাও সিট নেই, ফ্লোরও খালি নাই। এখনও বলে এ পরিস্থিতিতে ভর্তি নেওয়া যাবে না। যদিও সারি সারি সিট খালি পড়ে রয়েছে,’ বলেন তিনি।
একই বক্তব্য নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে আসা সলিম উদ্দিনেরও। তার পেটে সমস্যা। চারদিন ধরে ব্যথা। স্থানীয়ভাবে ওষুধ খেয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই এসেছেন ঢামেক হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসক ওষুধ লিখে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সলিম বলেন, নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে গিয়েছিলাম। তারা বলছে, হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু এখানে এলে চিকিৎসকেরা বলেছেন- বাড়ি চলে যেতে।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান জানান, রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না কথাটি সঠিক নয়। করোনার কারণে চিকিৎসকরা পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) পরেই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। যে রোগী ভর্তি হওয়ার দরকার তাদের ভর্তি নিচ্ছে। তবে এমনিতেই রোগীর সংখ্যা খুবই কম।
যোগাযোগ করা হলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, সারা দেশে যানবাহন চলছে না। রোগীরা কীভাবে হাসপাতলে আসবে? আমাদের ডাক্তাররা আগের মতই রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারা নভেল করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যা করণীয় সবই ব্যবহার করে ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছেন রোগীদের।
‘করোনা ভাইরাসের জন্য সবার মনে একটু ভয় আছে। তাই রোগীরা ইচ্ছা করেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। রোগী যদি স্বেচ্ছায় হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান তাকে তো আর জোর করে আটকানো যাবে না। বাধ্যতামূলক রোগীকে ছাড়পত্র দিয়েছে বা ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসকরা ভর্তি নিচ্ছেন না- এই কথাটি সঠিক না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২০
এজেডএস/এমএ